ছবিতে রাকিব, আমার তোলা।
পেছন থেকে এই যাবেন বলার পর যে রিকশাওয়ালা আমার দিকে ফিরে তাকালো, চেহারা দেখে ওরে বাবাগো বলে হুমড়ি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার অবস্থায় কোন ভাবেই এর রিক্সায় যাওয়া যাবেনা এরকম একটা অযুহাত খুঁজতে খুঁজতে বললাম তুমি তো ছোট অনেক তার উপর ব্যাটারি রিকশা সেক্টরে ঢুকতে দিবে? সে আনন্দ আনন্দ ভাব নিয়ে জানালো তার রিকশা সর্ববস্থায় সবখানে এলাউ তার এই চেহারাজনিত দুর্গতির জন্য কোন সার্জেন্ট কিংবা পুলিশ তাকে কোথাও আটকায় না।
অন্য সময় রিকশাওয়ালারা যাবেন এর রিপ্লেতে কত নাম্বার রোড ধরণের প্রশ্ন কেন করলো এই রকম অপরাধ এর অজুহাতে অন্য রিকশায় যাই। আজ সে ধরণের কোন অজুহাত দাঁড় করাতে পারলাম না, সমস্যা হল কোন কিছু দেখে আতংকিত হলে ভয় পেলে সেটা দুঃস্বপ্ন হয়ে ঘুমের মধ্যে ফিরে আসে দুঃস্বপ্ন দেখতে কেই বা চায়।
রিকশা চলতে চলতে এগারো নাম্বারের চত্তরে এলে উৎসাহের সাথে ছেলেটি জানালো যে সে তিন মাস আগেও এইখানে এর ওর কাছে সাহায্য চাইতো, আমারও ততোক্ষণে মনে পড়ছে ব্যাপারটা, আমি বললাম আমি জানি।
ও খুশি হয়ে বলল হ আপু আপনি আমারে সাহায্য দিতেন অন্য দিকে ফিরা মুখের দিকে তাকাইতেন না, আর শেষবার যখন সাহায্য চাইছিলাম আপনি বললেন তোমাকে গতকাল দিয়েছি আজ আর দিবনা আমি কি রোজ রোজ সাহায্য দিবো নাকি! বলেই ফিক করে হেসে দিলো ছেলেটা,
এই কথা এগারো নম্বর চত্বরে ভিক্ষা করা সকল ভিক্ষুককে দুই একবার করে বলতে হয় আমার, কারন রোজ দুবার ঐ একই রাস্তা দিয়ে চলাফেরার কারনে একই ভিক্ষুক বার বার ভিক্ষা নিতে আসে।
আমি ওর কথা শুনতে শুনতে হাল্কা অনুভব করলাম ওর চেহারা নিয়া আতঙ্ক কিছুটা কেটেছে। রাকিব হাসছে, আমিও হাসছি কিছুটা, বললাম রিকশা কই পাইছো? কেউ কিনে দিছে? খুব ভালো হইছে ভিক্ষা করার থেকে কাজ করে খাওয়া ভালো।
জি আপু ভিক্ষা করার থেকে কাজ করে খাওয়া ভালো কিন্তু আমার মতন সবাই কাজ করতে চায় না, অনেক ভিক্ষুকরে রিকশা কিনা দিসে পুলিশ স্যারেরা কিন্তু হেরা রিকশা বেইচ্চা দিয়া আবার ভিক্ষা করে। আমারে কিন্তু কেউ রিকশা কিনে দেয় নাই এইটা ভাড়ায় চালাই।
ছেলেটির নাম রাকিব, বাড়ি লক্ষ্মীপুর, বয়স তেরো, দুই বছর আগে ঢাকা এসেছিলো পেটের তাগিদে, শুরুতে একটা হোটেলে কাজ করতো সেখানে চুলার গ্যাসের সিলিন্ডার বাষ্ট হয়ে মুখমণ্ডল আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় ওরা আর কাজে রাখেনি রাকিবকে, হোটেল থেকে তাড়িয়ে দেয়, বাবা নাই ওর, কেন নাই, মারা গেছে না ওদের ফেলে চলে গেছে কখনো জিজ্ঞেস করিনাই। বাড়িতে মা আর ছোট ভাই আছে, ওদের একমাত্র ভরসা রাকিবের উপার্জন।
আমার বাসার সামনে নেমে ভাড়া দিতে দিতে বললাম সাবধানে রিকশা চালাবে, অনেক ছোট তুমি, ভালো থাইকো। আপনিও ভালো থাইকেন পেছন থেকে শুনতে পাই।
আকাশের দিকে তাকাই, আকাশ কত বড়! আর শূন্য! ভাবলেশহীন! অমন ভাবলেশহীন আমরাও একে অপরের প্রতি, অথচ প্রতিটা মানুষ যুদ্ধ করে চলেছে প্রতিনিয়ত, যার যার জায়গায় সবাই যোদ্ধা। শুধু সময়; স্থান; মানুষ ও প্রেক্ষাপটগুলো ভিন্ন। আজ রাতে ওকে নিয়ে কোন দুঃস্বপ্ন দেখবো না সম্ভবত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৪২