
ধীরে ধীরে তিতিরের অজান্তেই ওর দিন রাত্রিতে নানা পরিবর্তন আসতে লাগলো, কাস্টমার কেয়ারের চাকরি কিংবা ভার্সিটির ক্লাসের বন্ধুদের সাথে আড্ডা অথবা বাসায় মা বাবার সাথে কাটানো মুহূর্ত; আদরের ছোট ছোট স্টুডেন্টদের পড়ানোর মুহূর্ত; এমন কিছু নাই যেখানে তমাল সাহেবের ভাবনার দখলদারি হচ্ছে না, স্বয়নে স্বপনে জাগরনে সবকিছুতেই তমালের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতন কানে বাজে তিতিরের, এত সবকিছুর পর একদিন তিতির তমালের নাম্বারটা সেভ করে ওর মোবাইলে।
এক সকালে তিতির ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসীর মতন তমালের ভাবনায় বিমোহিত হয়ে থাকতে থাকতে একমনে সিআরও'তে বসে কাজ করছিলো।
ঠিক তখনই কাস্টমার কেয়ারের সামনে এসে দাঁড়ালো এক বৃদ্ধা। তিতির দ্রুত হাসিমুখে উঠে দাঁড়াল।
- বলুন, কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
- মা, আমি একটু দিক হারিয়ে ফেলেছি। আমার ছেলে আর নাতনির সাথে এখানে এসেছি ওদেরকে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না ফোন ও ধরছে না ছেলেটা।
তিতির তাকে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে বলে আশ্বস্ত করে বসতে দিলো, ঠান্ডা পানি এনে দিলো, তারপর নিরাপত্তা টিমকে জানিয়ে দ্রুত দুজনকে খুঁজে বের করে নিয়ে এলো কাস্টমার কেয়ারে।
তার কিছুক্ষণ পরে তিতির দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ওদের মিলন দেখছিলো। কী শান্তি এইসব ছোট ছোট সাহায্যে! ওর নিজের ছোটবেলা হঠাৎ মনে পড়ে গেল। বাবা-মায়ের হাত ধরে মেলার ভিড়ে হেঁটে বেড়ানোর দিনগুলো।
সবকিছু গুছিয়ে ডেস্কে ফিরে এসে মাথা নামিয়ে একটু আরাম নিতে গিয়েই ও আবার ফোনের দিকে তাকালো। ফোনের বাটন চাপতেই তমাল নামটা স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ।
একটু দ্বিধা নিয়ে একটা মেসেজ টাইপ করলো
- কার কথা যেন আজ বারবার মনে পড়ছে। অচেনা কেউ একজন অথচ এত চেনা! এটা কি ভালো কিছু?
পাঠাই পাঠাই করেও শেষ পর্যন্ত মেসেজটা পাঠালো না। মুছে দিলো। আবার টাইপ করলো
- শুনুন মিস্টার কলকাতা, যদি মিস করার প্রতিযোগিতা হতো, আপনি নিশ্চিত দ্বিতীয় হতেন। কারণ প্রথম আমি নিজেই হয়ে আছি গত কয়েকদিন ধরে, কি পরিমাণ যে মনে পড়ছে আপনাকে, যাদু জানেন কি?
এইবার একটু সাহস করে সেন্ড বাটনে চাপ দিলো। চোখের পলকে মেসেজটি সেন্ড হয়ে যাওয়ার পর, লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেল তিতির।
তার প্রায় ৩০ সেকেন্ডের ভেতর তিতিরের ফোনে একটা মেসেজ ঢুকলো।
- তিতির, আমি চাই আপনি জানেন, আজকের বিকেলটা, এই মুহূর্তটা, আমি সারাজীবন মনে রাখবো। এই মুহূর্তটা আমার জীবনে প্রথমবারের মতন প্রিয় কারো চিঠি হাতে পাওয়ার অদ্ভুত সুখের দিন।
তিতির এবার চুপ করে ফোনটা পাশে রাখে। দেয়ালের কাঁচ দিয়ে বিকেলের আকাশ রঙ বদলাচ্ছে, শহরের আলোগুলোর সাথে ওর মনের আলো ও ঝিকমিক করছে। ও জানে না সামনের দিনগুলো কেমন হবে,তবে আজকের এই বিকেলটা, এই অদ্ভুত মায়াবি মুহূর্তটা
সে আগলে রাখবে নিজের করে, যেখানে কেউ হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারে না, শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়।
ছবিঃনেট ( চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



