গতকাল এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ এবং গ্রুপে ফেইল করা ছাত্রদের হাস্যকর কিছু কর্মকাণ্ড দেখছি। কেউ আত্মহত্যা করছে তো কেউ কেইক কেটে ফেইল উদযাপন করছে। আবার কেউ কেউ ফেইল করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে দায়ী করছে। তাদের দাবী আর কয়েকটা মার্কস বেশি দিলে নাহিদ সাহেবের কী ক্ষতি হতো?
মজার ব্যাপার হলো আসল কথাটি নিয়ে কারও মাঝে কোন আফসোস লক্ষ্য করলাম না। কেউ বলেনি পড়াশোনা কম করছি বলে রেজাল্ট খারাপ হলো। আর একটু ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারতাম। আমাদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু হইলেই অন্যকে দোষারোপ করতে হবে। নিজেরা পড়াশোনা করবে না, রেজাল্ট খারাপ হলে টিচার এবং মন্ত্রীকে দোষ দিবা তা তো হবে না।
এবার এইচএসসি পরীক্ষাতেও একই ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। ছাত্ররা কেউ এখন নৈর্বেত্তিক পড়ে না। সবার ধারণা পরীক্ষার আগে তো প্রশ্ন পাওয়ায় যাবে। কিন্তু হলো কি, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হয়ে গেলো। ভালো ছাত্র আর খারাপ ছাত্র নাই সবার নৈর্বেত্তিক পরীক্ষা খারাপ হলো। দোষটা গিয়ে এবারও পড়লো নুরুল ইসলাম নাহিদের উপর।
আমি নিজে প্রত্যেকটি পরীক্ষার প্রশ্ন দেখেছি। এমন কোন কঠিন প্রশ্ন আসেনি যে পড়াশোনা করলে ছাত্ররা পারবে না। যদিও শর্ট সাজেশনে যারা পড়ালেখা করে তাদের ব্যাপারটা আলাদা। আজকালকের ছেলে মেয়েরা পাঠ্যপুস্তকের বেসিক জ্ঞানগুলোও জানে না। তাহলে তারা প্রশ্ন ফাঁস না হলে পরীক্ষা দিবে কীভাবে?
গত ৪-৫ বছর ধরে আমি প্রাইভেট টিউটর হিসাবে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর পদার্থ এবং রসায়ন পড়িয়েছি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো কারও মাঝেই এমনটা দেখিনি যে তারা পড়াশোনায় সিরিয়াস। অথচ সবাই পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে। কীভাবে করে আল্লাহ্ জানে। মাঝে মাঝে দু-একজনের রেজাল্ট দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে যেতাম। যে ছেলে আমার কাছে পরীক্ষা দিলে ২০ নাম্বারে ২ পায় সেই ছেলেও জিপিএ ৫ পাইছে।
তবে দিনশেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অবস্থা হয়েছে করাতের মতো। তিনি সামনে গেলেও ছাত্রদের কাটে আবার পেছনে গেলেও ছাত্রদের কাটে। তার যে কী করা উচিত সেটা হয়তো তিনি নিজেও জানেন না। তবে যাই হোক, ছাত্রদের পড়াশোনায় আর একটু সিরিয়াস হওয়া উচিত। কারণ নুরুল ইসলাম নাহিদ তো সারা জীবন শিক্ষা মন্ত্রী থাকবেন না। তবে যারা আর কয়েকটা নাম্বার পেলেই পাশ হতো মনে করছে তাদের জন্য একটা ঘটনা শেয়ার করছি।
অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ার সময় কেমিস্ট্রি অব ন্যাচারাল প্রোডাক্ট কোর্সে আমার টিউটোরিয়াল মার্কস খুবই কম ছিলো। তো কোর্স টিচারের কাছে গেছি একটা ভাইভা দিয়ে যদি মার্কস কিছুটা বাড়ানো যায় এই ব্যাপারে তদবির করতে। তো স্যার ভাইভা তো নিলেনই না। উল্টা মেজাজ গরম করে বললেন, “মার্কস কোন খয়রাতি করার জিনিস না, মার্কস অর্জন করে নিতে হয়; ভাগো এখান থেকে!”
স্যার মার্কস দেননি ঠিক আছে, কিন্তু জীবনের জন্য বড় একটা শিক্ষা দিয়ে গেছেন। সেই শিক্ষাটা বর্তমান যুগের ছাত্রদেরও দরকার। মার্কস আসলেই খয়রাতির জিনিস না। ভালো মার্কস চাইলে সব সময় তা অর্জন করেই নিতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:০০