somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওদের জন্যে ভালোবাসা

২৬ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেডিকেল সাইন্স বলে, একটি শিশুর ছয় থেকে আট বছর বয়সের মধ্যেই তার ব্যক্তিত্ত্বের মূল কাঠামোটি তৈরি হয়ে যায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে যে, হাই স্কুলে উঠার কিছুদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায় একটি শিশু মানুষ হিসেবে কেমন হবে। অর্থাৎ একটি শিশুকে আমরা কেমন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব সেটা আমাদের ঐ সময়ের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করে।
আমরা সবাই চাই আমাদের পরিবারের শিশুটি ঠিক মত বড় হোক / সুস্থ থাকুক / তার ভিতরে এইটা - ঐটা নানা রকম গুণ তৈরী হোক / পড়াশুনায় ভালো হোক সর্বপরি সে একজন "ভালো মানুষ হোক"।
"ভালো মানুষ"। আসলে ভালো মানুষ বলতে আমরা কি বুঝি? ছাত্র অবস্থায় ভালো মানুষের বোধহয় একটাই গুণ বিবেচনা করা হয়। সেটা হল সে কতটা ভালো Studen. ছাত্রত্ত্ব চলে গেলে, ভালো মানুষ হিসেবে বিবেচ্য হল সে কত বেতনের চাকরী করে।

যদি ভালো মানুষের সর্বজনীন সংজ্ঞা এই হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নাই। কিন্তু যদি ভালো মানুষ বলতে সত্যিই একজন ভালো মানুষকে বুঝানো হয়, তাহলে আমার কিছু কথা থাকে।
আমরা যদি সত্যিই চাই আমাদের সন্তান খুব ভালো একজন মানুষ হবে, তাহলে আমরা কিভাবে তার থেকে তার শৈশবটি কড়ে নিই? কিভাবে তার খেলার সময়টি কেড়ে নিয়ে তাকে বই খাতাতে মুখ গুঁজে থাকতে বাধ্য করি? কিভাবে তার উপরে হোমওয়ার্কের পাহাড় চাপিয়ে দিয়ে তাকে বাধ্য করি এইটা ভুলে যেতে যে সে একটি শিশু? কার্য ক্ষেত্রের ব্যস্ততার অযুহাতে একটি শিশুকে কাজের মানুষের কাছে বড় হতে দিয়ে আমরা কখনই আশা করতে পারিনা যে বড় হয়ে সে একজন কর্তব্য পরায়ন মানুষ হবে। কিংবা শিশুটির জন্যে সুধুমাত্র স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং কম্পিউটার গেম নির্ভর বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিয়েই আমরা কখনই আশা করতে পারিনা যে সে বড় হয়ে ফ্যাসন সচেতনতার নামে সংক্ষিপ্ত পোশাক / আধুনিকতার নামে বিপরীত লিঙ্গের সাথে শারিরীক সংস্পর্শ / বিনোদন মূলক উত্তেজনার নামে ভায়োলেন্স / স্মার্টনেসের নামে বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে অসম্মান করা এরকম আরও অসংখ্য চারিত্রিক সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত হবেনা। প্রতিযোগিতা মূলোক বিশ্বব্যবস্থা আর অর্থনৈতিক মূল্যসূচকের দোহাই দিয়ে আমরা আমাদের শিশুদের নি:সঙ্গতার দায় থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারি হ্য়ত কিন্তু এইটা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারবোনা যে আমরা তাদের কে শিশু না ভেবে রেসের ঘোড়া হিসেবে বড় করছি। এমনকি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও একটা আজব ব্যাপার। সেই ছোট্টবেলা থেকে আমরা "সমাজিকশিক্ষা, "ধর্মশিক্ষা"র
মতন চমৎকার বিষয় গুলো পড়ে এলেও কি শিখেছি এই গুলো থেকে?

সামাজিকশিক্ষা আমাদেরকে শিখিয়েছে কিভাবে কিভাবে পরীক্ষার খাতায় হাতের লিখা দ্রুত করা যায় আর ধর্মশিক্ষা আমাদেরকে শিখিয়েছে আমার ধর্ম কোনটা আর অন্য ধর্মকে কিভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে হয়।
আর এই দুইটা বিষয়েরই প্রধানতম গুরুত্ত্ব ছিলো ভালো নাম্বার পাওয়ার রাস্তা হিসেবে।
কিন্তু এই সাবজেক্ট গুলো পড়ে আমরা কখনওই শিখতে পারিনি সমাজটা আসলে কি, সামাজিক জীব হিসেবে একজন মানুষের তার সমাজের প্রতি দায়িত্ত্বটা আসলে কি, ধর্ম কেনো এলো,মানুষের জীবনকে ধর্ম যে আবশ্যক দর্শণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তার প্রয়োজনীয়তা কতটা।

শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার দোষইবা কেনো দিই, আমরা নিজেরা কি কোনোদিন আমাদের পরিবারের শিশুদেরকে দর্শণের শিক্ষা দিই? অথচ এই দর্শণই মানুষের অনুভুতির সাথে তার বিবেকের বন্ধুত্ব তৈরী করে। একটি মানুষ যেকোনো কাজ তার অনুভুতির দ্বারা চালিত হয়েই করে। সূতরাং মানুষটির বিবেক যদি সর্বদা তার অনুভুতি গুলোর অনুকুলে থাকে, তাহলে মানুষটির পক্ষে কখনই অন্যায় করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে কি হচ্ছে? যখন একটি শিশুর দাদির কোলে মাথা রেখে রূপকথার গল্প শুনার কথা, বাবা মা'র মাঝখানে শুয়ে মা'র গলা জড়িয়ে ধরার কথা, বাবাকে ঘোড়া বানিয়ে কল্পলোকের রাজকুমার সাজবার কথা তখন শিশুটিকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে আজ কয়টা ইংলিশ ওয়ার্ড শিখলো কিংবা তাকে বলা হচ্ছে, "আজ আমি অনেক ক্লান্ত", "ফাইলগুলো এখনই দেখে ফেলতে হবে", "কাল অফিসে অনেক কাজ, বিরক্ত কোরোনা, তুমি ঘুমাও" ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু এরকম কি হওয়া উচিৎ? হারিয়ে যাবে বলে বাচ্চা গুলোকে আমরা ঘরের বাইরে যেতে মানা করতে পারি, কার না কার সাথে মিশবে এই ভয়তে বাইরের সঙ্গ থেকে তাদেরকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারি, তারপরওতো ব্যস্ততাকে কিছুটা দুরে সরিয়ে রেখে ওদের সাথে মন খুলে গল্পটাতো অন্তত কোরতে পারি...
"খুব কঠিন বিষয়" এই অযুহাতে দর্শণের চর্চাকে এড়িয়ে না গিয়ে, আমরাতো নিজেদের দৈনন্দিন ভালো মন্দ ঘটনা গুলোর গল্প ওদেরকে বলতে পারি। নিজেদের ভালো-খারাপ দিক গুলো নিয়ে ওদের সাথে আলাপ করতে পারি। আমাদের যেগুলো খারাপ, সেগুলো কেনো খারাপ এবং কোন সীমাবদ্ধতার কারনে এই খারাপটুকু আমাদেরকে হতে হয়েছে তা ওদেরকে ব্যাখ্যা করতে পারি।

পরিবারের শিশুটির জন্যে ভালো ভালো প্রার্থণা করা অবশ্যই উচিৎ। তবে প্রার্থণার ভলো ভালো বিষয় গুলোকে নিজেরা নিজেদের জীবনে চর্চা করা অতি আবশ্যক কর্তব্য। যদি আমরা তা করতে পারি, তাহলেই আমরা পারবো এই শিশুদের জন্যে একটা সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে।

পৃথিবীর সব শিশুর জন্যে রইলো অনেক অনেক ভালোবাসা।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×