এক টেবিলে বসে লাঞ্চ খেতে খেতে উইলিয়াম ক্রো বলেন, ডিক, আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্ট হতে হলে দুটো জিনিস দরকার। এক. যুদ্ধ করে বিজয়ী হওয়া। আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্টদের সবাই যুদ্ধ করেছেন। দুই. যে কোনো অজুহাতে যুদ্ধ বাধিয়ে বীরত্ব জাহির করা।
জর্জ বুশ তার গত ছয় বছরের প্রেসিডেন্সিকালে পররাষ্ট্র বিষয়ক যতগুলো উদ্যোগ নিয়েছেন তার প্রতিটিই কোন না কোন যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধের হুমকির সঙ্গে জড়িত। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বিশ্বের সামরিক খরচের 40 শতাংশই করে আমেরিকা। এই খরচের পরিমাণ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চায়নার সামরিক ব্যয়ের প্রায় সাত গুণ। জুতসই হাতিয়ার থাকলে হুমকি-হামলার মাধ্যমে বীরত্ব জাহিরের জন্য মন উচাটন হওয়াটা স্বাভাবিক। মহান হওয়ার জন্য বুশের ৰেত্রেও তাই ঘটেছে।
এত তপস্যা তদবিরের পরও মহাত্বের গৌরব বুশের কপালে জোটেনি এখনো। কারণ গত ছয় বছর ধরে উদ্ধত, হঠকারী, বেপরোয়া ও নির্দয় কৌশলে সামরিক শক্তিমত্তা দেখাতে দিয়ে তিনি স্বদেশ বিদেশ সর্বত্র তার কতর্ৃত্ব ও প্রভাব হারিয়েছেন। খোদ রিপাবলিকানদের অনেকেই তাকে এখন বোঝা মনে করছেন। তার জনপ্রিয়তায় ধস নিঙ্নকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এমন অবস্থায় গত সপ্তাহে প্রকাশিত ন্যাশনাল সিকিওরিটি স্ট্রাটেজিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধ নয় সংলাপ সমঝোতার মাধ্যমে সকল সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। আক্রানত্দ না হওয়া পর্যনত্দ আক্রমন না করার ঐতিহাসিক আত্মরৰামূলক নীতিতে চলতে হবে। ইরান ইসু্য নিয়ে ওই স্ট্রাটেজিতে বিশেষভাবে হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, সামরিক হসত্দৰেপের বদলে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের সুরাহা সম্ভব হলে অবশ্যই আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
তবে বাসত্দবতা হচ্ছে 'চোর না মানে ধর্মের কথা'র মতোই প্রহসনমূলক। আমেরিকার মনে যতদিন 'জোর যার মুলুক তার' ধারণাটি বলবৎ থাকবে ততদিন পর্যনত্দ সে বেপরোয়াই থাকবে। জনমত উপেৰা করে বুশ প্রশাসন বিশ্বমঞ্চে সদর্পে হুংকার দিবে, উই ডোন্ট কেয়ার!
কিন্তু ইরাক যুদ্ধের বর্তমান পরিণতি বুশ প্রশাসনকে বড্ড বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। সামরিক ও কূটনৈতিক উভয়ৰেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। ইরাক যুদ্ধের তিন বছর পূর্তি উপলৰে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ মিছিলে বুশকে এক নম্বর সন্ত্রাসী বলে সস্নোগান হয়েছে। তাই তারা অন্যান্য সঙ্কট মোকাবেলায় এখন সংলাপ সমঝোতামূলক আলোচনার জন্য দৌড়ঝাপ দিচ্ছে। ইরাক যুদ্ধে কাংখিত সাফল্য না পাওয়ায় ইরান ও উত্তর কোরিয়া তাদের টার্গেটে অটল থাকতে পারছে।
এরই মধ্যে প্যালেস্টাইনে বিদ্রোহী হামাস গ্রম্নপের ৰমতা লাভ; হাইতিতে যাকে দু'বছর আগে আমেরিকার মদদে অভু্যত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়র্েিছল, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সেই রনে প্রিভেলের বিপুল ভোটে বিজয়, ইরাকের নির্বাচনে আমেরিকার দোসর আহমেদ চালাবির কোন আসনই না পাওয়াসহ ল্যাটিন আমেরিকায় ওয়াশিংটনের চাপিয়ে দেয়া অর্থনৈতিক সংস্কারের বিরোধীদের জনসমর্থন বৃদ্ধির মতো ঘটনা বুশ প্রশাসনের জন্য অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিশেষত, ইরাক ইসু্য এখন আমেরিকার জন্য শাখের করাতে পরিণত হয়েছে। ইরাকে সামরিক সাফল্যের পাশাপাশি কূটনৈতিক ব্যর্থতার প্রকাশ ঘটিয়েছে আমেরিকা। এই ভুল অ্যাডভেঞ্চার বুশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। তিনি ইরাকী ও আমেরিকান উভয়ের কাছেই ভিলেনে পরিণত হয়েছেন। গত সপ্তাহে সিএনএন/ ইউএস টুডে'র এক জরিপে দেখা গেছে, 60 শতাংশ আমেরিকানই মনে করছেন, ইরাকে সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধানত্দটি ছিল ভুল। বুশের যুদ্ধ কৌশলেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন তারা। তাদের মতে, ইরাক থেকে যত তাড়াতাড়ি সৈন্য সরানো যাবে ততই মঙ্গল।
অবস্থাদৃষ্টে যে বিষয়টি সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা হলো, যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্টদের একজন হওয়ার বাসনা পূরণ হবে না বুশের। বরং ইরাক আগ্রাসন কলংক হয়েই তাড়িয়ে বেড়াবে তাকে আজীবন। এই কলংক আমেরিকানদের মনোবল আমূল বদলে দিয়েছে। ডিউক ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার গেলপি বছরব্যাপী পর্যবেৰণে দেখেছেন, আমেরিকা ভবিষ্যতে কোন যুদ্ধে 'নিশ্চিত বিজয়ী হবে' এমন ধারণাধারী আমেরিকানদের সংখ্যা 79% থেকে কমে 22% তে নেমে এসেছে। যুদ্ধে 'পরাজয় নিশ্চিত' কিংবা 'বিজয় অনিশ্চিত' এমন মতের আমেরিকানের সংখ্যা 1% থেকে বেড়ে 41% তে দাড়িয়েছে। এ অবস্থায় বুশের কোন সাফাই পাত্তা পাচ্ছে না। অভিমত সবার একটাই- ভুল যুদ্ধ, ভুল কৌশল, ভুল প্রেসিডেন্ট, ভুল সবই ভুল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




