somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেঁচে থাকার জাদুর মন্ত্র

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১(বিজয়)

যার বিষয়ে এই লেখা তার কাছে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
আমি লক্ষ্য করেছি যে আমার অনেক কিছু মনে থাকলেও কোনো কিছুর নাম ভালো মনে থাকে না।
সাথে মানুষের নামও,এই ছেলের নাম আমি মনে রাখতে পারি নাই ভেবে নিজেকে নিজের কাছে অনেকখানি ছোট মনে হচ্ছে। আমি তোর কাছে হাজার বার দুঃখিত ভাই,আবার একদিন তোর নাম জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো,এটা কোনো কথার কথা না,এটা আমার প্রতিশ্রুতি।
যাই হোক,আমি তোর একটা নাম দিয়ে দিচ্ছি,বিজয়। তুই সত্যিই বিজয়ী.........
ডিসেম্বর ১৪,২০১৮।
চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে ফিরছি। সরাসরি বাসে যাচ্ছি না,ঢাকা হয়ে যাচ্ছি।
সকাল সাড়ে এগারোটায় কমলাপুরে থামল আমার বাস। একটা চায়ের দোকান থেকে সামান্য নাস্তা ও চা খেয়ে আমি রওনা হলাম গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে, সেখান থেকে বাসে চড়ে মাওয়া হয়ে বাড়িতে।
চিরচেনা স্মৃতিবিজড়িত আরামবাগ থেকে উঠলাম 'মৈত্রী' বাসে। আরামবাগ থেকে শঙ্করে আসা যাওয়ার খাতিরে এই বাসেও আমার অনেক চলা ফেরা।
প্রথমবারের মতো বাস গিয়ে থামলো মতিঝিলে, শাপলা চত্বরের পাশে,অারও যাত্রী নেয়ার জন্য।
বাস থামার কিছুক্ষণ বাদেই বাসে উঠলো এক মা ও তাঁর ছেলে। সে ছেলে একজন নটরডেমিয়ান,ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ নটরডেমিয়ান। কিন্তু তাঁকে দেখে আমি খুশি হতে পারলাম না,উল্টো প্রচণ্ড মন খারাপ হলো।
তাঁর হাতে ওয়াকিং স্টিক, দৃষ্টি অস্বাভাবিক। এক হাতে মা তাঁকে ধরে বাসে উঠালো।
আমি বসেছি একদম সামনের সারিতে। মা ও ছেলে গিয়ে বসলো আমার দুই সারি পিছনে। ছেলে ও মায়ের সাথে আমার কথা বলার ইচ্ছে হলো।
আমি উঠে এগিয়ে গেলাম তাঁদের কাছে,একই সারির তাঁদের কলামের পাশের কলামে তাঁদের দিকে মুখ করে বসলাম। ছেলেকে দেখিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম,"আন্টি, আমি নটরডেম কলেজের ছাত্র ছিলাম,২০১৫ সালে এইচএসসি দিসি,এখন চুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। আমি কি ওর বিষয়ে একটু কথা বলতে পারি আপনার সাথে?"
আন্টি উত্তর দিলো,"বলো"।
এই উত্তর দেয়ার সময় সে সামান্য হাসলো,কিন্তু আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি এই হাসির মধ্যে ছিলো অনেক ক্লান্তির ছাপ,বহু পুরনো ক্লান্তি। আর প্রবল স্রোতের দুখের নদীর উত্তাল ঢেউ। সে ঢেউয়ে আমার হৃদয় কেঁপে উঠলো,আমার বাকরুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হলো,চোখে পানির আভাস পেলাম। আর সাথে মনে পড়লো কতটা ভালো আছি আমি ও আমার পরিবার।

আমিঃ আন্টি,ওর সমস্যা বিষয়ে কি একটু বলতে পারবেন? মানে যে রকম টা দেখছি তা কিভাবে হলো?

আন্টিঃ (স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না)
(বিজয় সামনের দিকে তাকিয়ে আছে,দেখে মনে হচ্ছে আমি তাঁর কাছে একরকম অনুপস্থিত। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই এই প্রশ্নের উত্তর দিলো সে নিজে)

বিজয়ঃ ব্রেইন টিউমার হয়েছিলো

(আমি খুবই চুপসে গেলাম,এসব বিষয় নিয়ে তাঁদের সাথে যেচে কথা বলাটাও কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়েও সন্দেহ হতে লাগলো)

আমিঃ কত বছর বয়সে হয়েছিলো এই সমস্যা?

আন্টিঃ অনেক বছর আগে,বলতে গেলে ছোটো বেলায়

আমিঃ আপনি কি প্রতিদিন ই আসা যাওয়া করছেন ওর সাথে?

আন্টিঃ আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। এমনিতে ও নিজে হাঁটতে পারে,কিন্তু অভ্যাসের কারণে এখনও স্টিক গুলো হাতে রাখে।

আমিঃ অসুখের আগে এবং অসুখ পরবর্তী সময় ওর পরিবর্তন বিষয়ে একটু বলতে পারবেন?

আন্টিঃ আসলে ও ছোটোবেলায় সবকিছুতেই ভালো ছিলো,ভালো খেলাধুলা করতো,বিভিন্ন বিষয়ে অনেক আগ্রহ ছিলো। এখনো আছে কিন্তু পরিবর্তন অবশ্যই হয়েছে।

(আমার নিজের আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না,নিজেকে সংশয়ী মনে হলো)

আমিঃ আন্টি,সত্যি বলতে আপনি ও আপনার সন্তান একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত,শত কষ্ট ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও জীবন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত। আমার সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন,আসসালামু আলাইকুম।
আন্টিঃ (সেই মৃদু হাসি)
...........................
আমি তাদের সারিতেই সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম। শাপলা চত্বর থেকে বাস ছেড়ে দিয়েছে।
আন্টি ডেকে বললো বিজয় আমার পাশে বসতে চায়। সে নিজেই উঠে এলো,আমি কাঁধে হাত রেখে তাঁকে পাশে বসালাম।

আমিঃ আমার নাম সায়েম হোসেন রনি। তোমার নাম?

বিজয়ঃ বিজয়

আমিঃ তুমি কোন ব্যাচ? মানে কত সালে এইচএসসি দিবে?

বিজয়ঃ নাইনটিনে

আমিঃ তোমার পড়াশুনা কেমন হচ্ছে?

বিজয়ঃ ভালো

আমিঃ টেস্ট পরীক্ষা তো হয়ে গেছে,তাই না?

বিজয়ঃ হ্যা,রেজাল্টও দিছে,4.72 আসছে।

আমিঃ চমৎকার! এখন তো ক্লাস হচ্ছে না,তাই না?

বিজয়ঃ হুম

আমিঃ তাহলে কলেজ ড্রেস গায়ে কিজন্য আসছিলে? পরীক্ষার ফর্ম পূরণের জন্য?

বিজয়ঃ না,ম্যাথ পড়তে আসছিলাম। আমাকে স্যার রা স্পেশালি পড়ায়,এজন্য কলেজ ড্রেস পড়েই আসি

(যানজট মুক্ত সড়কে মতিঝিল থেকে গুলিস্তান মাত্র দুই মিনিটের পথ,দেখতে দেখতে বাস চলে এলো)

আমিঃ ভাইয়া,তোমার সাথে আমার অনেক গল্প করার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু আমার তো এখানে নামতে হবে। আশা করি আবার পরে কখনো কথা হবে।
তোমার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
(আন্টির দিকে তাকিয়ে) আসি আন্টি, আমার জন্য দোয়া করবেন।
……...............
বাস থেকে নেমে মাওয়ার বাসের জন্য হাঁটতে শুরু করলাম,কিন্তু ছেলেটার কথা মাথায় ঘুরতে থাকলো। সে এই শারীরিক অবস্থা নিয়েও নির্বাচনী পরীক্ষায় 4.72 জিপিএ তুলেছে!
ফাইনাল পরীক্ষায় নিশ্চয়ই আরো ভালো ফলাফল হবে।
আমি সুস্থ মানুষ থেকেও এতো জিপিএ তুলতে পারি নাই।
গুলিস্তানের ব্যস্ত রাস্তায় আমি মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকাচ্ছি,মনে মনে বলছি " অসাধারণ, অকল্পনীয়। বেশির ভাগ মানুষ এই শরীর নিয়ে পড়াশুনা ই করবে না বা করে না,এ জন্য ই ও অসাধারণ। ও জগতে আরো একবার ছড়িয়ে দিচ্ছে বেঁচে থাকার জাদুর মন্ত্র ".......
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×