somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেখানে আকাশ মাটি ছুঁয়েছেঃ নীলার সাথে পরিচয়

১১ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নীলার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল ভার্সিটিতে সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে। সেবার আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করব। তখন বর্ষাকাল। তাই আমাদের প্ল্যান ছিল দেয়াল পত্রিকা ওপেন করব টানা বর্ষার মধ্যে। পলিথিন কাগজ দিয়ে মোড়ানো থাকবে দেয়াল পত্রিকা আর ছেলেমেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বৃষ্টির কবিতা গল্প পড়বে। তখন মনে হয়েছিল এটা একটা অসাধারণ আইডিয়া। প্ল্যান অনুযায়ী আবহাওয়া অফিসে খোঁজখবর নিয়ে টানা বর্ষার মধ্যে দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করলাম এবং বুঝতে পারলাম আমরা কত বড় বেকুব!

প্রথম প্রথম আমাদের ভিড় দেখে কৌতূহলী হয়ে তাও কয়েকজন আসল। এসে যখন দেখল দেয়াল পত্রিকা তখন আমাদের গালাগালি করে চলে গেল। বৃষ্টিতে ভিজে ফালতু গল্প, কবিতা পড়ার গরজ দেখাল না প্রায় কেউই।

তখন বিকেল বেলা। প্রবল বর্ষণে ক্যাম্পাস প্রায় ফাঁকা। আমি আমাদের দেয়াল পত্রিকার কাছেই একটা চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা মেয়ে গাঢ় লাল রঙের ছাতা মাথায় দিয়ে দেয়াল পত্রিকার কাছে দাঁড়াল। তারপর না চলে যেয়ে লেখাগুলো পড়তে থাকল। আমি এগিয়ে গেলাম। এরকম সুন্দরী মেয়ের সাথে কথা বলার লোভ সামলানো মুশকিল। তাছাড়া ওটার পিছনে যে আমার কৃতিত্ব আছে সেটা জানানোও পবিত্র দায়িত্ব মনে করলাম।

'আমার মনে হয় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পড়তে বেশি ভাল লাগবে', পাশে যেয়ে বললাম।
একটু চমকে পাশে তাকালো। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে ছাতাটা ব্যাগে রেখে দিল।প্রবল বর্ষণ। তার মাঝে এমন অসম্ভব সুন্দরী এক মেয়ে। দেখে আমার মাথার মধ্যে এলোমেলো হয়ে গেল। দম বন্ধ হয়ে আসল। বুকের ভেতর কেমন ভোঁতা একটা ব্যাথা।।
'আপনার আইডিয়া আমার পছন্দ হয়েছে', মেয়েটা বলে ওঠে।
'এই দেয়াল পত্রিকাও আমাদের করা', আমি যোগ করি।
'আপনি?'
'আমি হাসান, আর্কিটেকচার, সেকেন্ড ইয়ার।আপনি?'
'নীলা, আমিও সেকেন্ড ইয়ার, সি এস ই।'

'আমি জানি তুমি কে', আমি মনে মনে বলি, 'তোমার রোল ২৩, একটা লাল Mazda RX8 গাড়িতে ভার্সিটি আসো, নাম্বার প্লেট ঢাকা হ৬৭৮৯০২০৭। পুরো ভার্সিটি তোমাকে চেনে। আমার তো মনে হয় পুরো ঢাকা তোমাকে চেনে।'
মুখে কিছু না বলে চুপ করে থাকি।

'আপনারা আর্কিটেকচারের ছেলেপেলেরা এমন ভড়ং ধরে থাকেন কেন? যেন 'Look at us. We are very creative' ব্লা ব্লা ব্লা। যত্তোসব বেকুব কোথাকার।'
কি উত্তর দেব বুঝতে না পেরে একটু হাসি। আবিষ্কার করি সুন্দরী মেয়ের মুখে বেকুব শুনতে খুব একটা খারাপ লাগে না।

নীলা দুই হাত দুপাশে ছড়িয়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে 'আজ ভিজতে খুব ভালো লাগছে। ঠিক করেছি বৃষ্টিতে হাঁটবো। যতক্ষণ খুশি।' তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে, 'যাবেন আমার সাথে?' ওর ঠোঁটের কোণে হাসি। যেন আমাকে করুণা করছে। যেন আমার উত্তর সে জানে।
আমি খুব অবাক হলেও একটু গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করি। জিজ্ঞেস করি, 'কোনদিকে যাবেন?' যেন পথ পছন্দ না হলে আমি যাবো না! মনে মনে বলি, 'সুন্দরী, তোমার সাথে আমি নরকে যেতেও রাজী আছি। যখন আমাকে আগুনে পোড়াবে তখন শুধু আমার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হেসো, আমার একটুও কষ্ট হবে না।'
'যেদিকে খুশি', নীলার উত্তর।

তারপর আমরা হেঁটে হেঁটে ক্যাম্পাস থেকে বের হই। এ রাস্তা সে রাস্তায় হাঁটি, দাঁড়িয়ে ফুচকা খায়। কখন যে আপনি থেকে তুমি বলা শুরু করেছি টেরও পাই নি। আমি যেন ঘোরের মধ্যে আছি। কি করছি, কি বলছি নিজেই বুঝতে পারছি না।

হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করি নীলার কামিজ ভিজে শরীর লেপটে আছে। ওড়না অগোছালো। ওর শরীরের অসহ্য সুন্দর বাঁকগুলো কিছুটা প্রকাশিত। তাকাতেও পারি না আবার চোখ ফেরাতেও পারি না। লজ্জায় ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। একসময় লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেলি, 'তোমার ওড়নাটা ঠিক করে নাও।'
'কেন, দেখতে ভাল লাগছে না?' নীলার সপ্রতিভ উত্তর। ঠোঁটের কোণে হাসি, চোখে রহস্য।

সে রাতে আমার গা কাঁপিয়ে প্রচণ্ড জ্বর আসল। পরদিন জ্বর নিয়েই ক্যাফেটেরিয়ায় নীলার সাথে দেখা করি। দেখা গেল নীলারও জ্বর। দুজনেরই জ্বর শুনে ওর সে কী হাসি! যেন জ্বর হওয়াটা খুব মজা।
'তোমার কি মনে হয়, এটা কি ধরনের জ্বর?' নীলার জিজ্ঞাসা।
'কিভাবে বলব! ঠাণ্ডা লেগে বোধহয়।'
'আমার তো মনে হয় প্রেমজ্বর', বলেই নীলার খিল খিল করে হাসি।
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। নীলাকে মনে হয় সমুদ্রের ঢেউ। নিজেকে সেই ঢেউয়ে খড়কুটো ভাবতে খুব ইচ্ছে করে।

তারপর থেকে যে আমাদের গভীর প্রণয় শুরু হল তা না। নীলার ভালবাসার প্রকাশ খুব কম, মাঝে মাঝে রীতিমত নিষ্ঠুর। হটাৎ হটাৎ করে একটু উদার হত। আমার প্রতি করুণা করেই হয়ত। আমি সেই মুহূর্তগুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম।

এখনও করি।

(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×