রাজকন্যার সেদিন মন খারাপ ছিল
তার রাজপুত্র আসে নি যে!
আমি তাকে সেদিনের রাতটা দিয়ে বললাম,
‘এই রাতটা তোমার হল,
এই সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল ভোর-
পুরো রাতের মালিকানা তোমার,
রাতের আকাশ, রাতের চাঁদ- সবকিছুতে তোমার একচ্ছত্র আধিপত্য।‘
রাজকন্যা হাতে রাত নিয়ে
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, শুধালো,
‘রাত নিয়ে আমি কি করব? ঘুমাবো?’
আমি কষ্ট পেলাম খুব, ব্যাথাভরা চোখে তাকে বললাম,
‘আমার কাছে যে আর কিছু নেই!‘
এক সন্ন্যাসী আমায় বর দিয়েছিল,
‘এই পৃথিবীর তিনটে রাত তোর।‘
আমি তাকে বলেছিলাম,
‘আমায় বরং সোনাদানা টাকাপয়সা দিন,
বড় অর্থকষ্টে আছি।‘
সন্ন্যাসী হেসে বলেছিল,
‘তোর যা লাগবে তাই তোকে দিচ্ছি।‘
সেই তিনটে রাত পকেটে নিয়ে
আমায় কবি হয়ে যেতে হল।
আমি কবি হতে চাই নি কখনও,
কবিরা বড় গরীব, বড় অপদার্থ হয়।
সেদিন রাতে রাজকন্যার মন ভাল হয়েছিল,
আস্ত একটা রাতের মালিক কখনো
মন খারাপ করে থাকতে পারে না।
আর আমাকে সেদিন মারা যেতে হয়েছিল,
এমনটাই নিয়ম,
আমার রাত যে তখন রাজকন্যার কাছে।
আমি সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত পুরোটা সময়,
আমার মৃতদেহ নিয়ে বসেছিলাম।
সেই সন্ন্যাসী আমাকে বলেছিল,
‘তিনটে রাতই যদি হারিয়ে ফেলিস তবে তোর পুরোপুরি মৃত্যু হবে।‘
তাই তো আমি ভয়ে ভয়ে থাকি,
রাতগুলো পকেটে নিয়ে ঘুরি সারাক্ষণ,
হারিয়ে যেন না যায় আবার।
সেদিনের পর রাজকন্যাকে আমি
আরেকটা রাত দিয়েছিলাম,
আর মনে মনে বলেছিলাম,
‘রাজপুত্রকে তুমি ভুলে যাও,
এই ছেলেগুলো কখনো ভাল হয় না,
দুঃখ দেওয়া ছাড়া প্রেমের আর কিছুই জানে না তারা।‘
মাঝে বেশ কিছুদিন পর
আজ রাতে রাজকন্যার সাথে দেখা হয়েছিল আমার।
তার ভারী মন খারাপ,
রাজপুত্র তার আসে নি যে!
আমি রাতের আকাশের দিকে তাকাই,
নতুন ওঠা চাঁদটা বড় সুন্দর লাগে,
একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে বুক থেকে,
মারা যেতে আমার একটুও ভাল লাগে না!