দুনিয়া তো মানুষের জন্য নিছক একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মানুষকে পাঠানো হয়েছে। আর এই পরীক্ষায় পাশ করার জন্য জ্ঞান অর্জন করাকে আবশ্যিক করা হয়েছে। টেক্সট, সিলেবাস, সাজেশন, প্রশ্নপত্র সব একসাথে সন্নিবেশিত করে ‘আল-কুরআন’ আকারে সর্বশেষ কিতাব পাঠানো হয়েছে। গাইড হিসেবে হাদীস শরীফকে নির্ধারিত করা হয়েছে। শিক্ষক ও মডেল হিসেবে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) কে এবং সাহাবায়ে-কেরাম ও তাদের নিকটতম অনুসারীদেরকে মনোনীত করা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা রয়েছেন। আর পরীক্ষা কেন্দ্রে গার্ড হিসেবে দুই কাঁধে রয়েছেন কিরামান, কাতেবীন। অসৎ উপায় অবলম্বন ও বিভ্রান্তকর নকল সরবরাহকারী হিসেবে এবং পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গোলোযোগ লাগানো ও এদেরকে পাইকারী দরে এক্সফেল্ট বা বহিস্কার করানো ও চুড়ান্তভাবে অকৃতকার্য করানোর জন্য রয়েছে ইবলিস শয়তান। হে মানুষ অতএব সাবধান! সর্বস্রষ্টা মহান আল্লাহ মানব জাতিকে কেন্দ্র করে দুনিয়ার এই পরীক্ষা কেন্দ্রে যে জীবন প্রবাহ সূচনা করেছেন এখন তার শেষ পর্ব।
এই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে মানুষকে আল কুরআনের জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। দুনিয়াদারী ও বৈষয়িক উন্নতির জন্যও জ্ঞান অর্জন করতে হবে তবে তাকে নিতে হবে সাবসিডিয়ারী হিসেবে। কেননা দুনিয়াদারীর জ্ঞান অর্জন না করেও অনেক মূর্খ অপদার্থ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে বৈষয়িক অনেক ধন সম্পদ অর্জন করেছে। সুখ-ঐশ্বর্য আনন্দ-উল্লাস ভোগ বিলাসিতায় বিশ্ব বরেণ্য হয়েছে আবার অনেক মানুষ আছে উচ্চ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েও বৈষয়িক অর্জনে রয়ে গেছে শূন্যের কোঠায়। দেখা যাচ্ছে সেই সৎ একনিষ্ঠ মেধাবি পরিশ্রমী ছাত্রটি হয়তো ঐ মূর্খ অপদার্থ দুর্বিত্ত কোন কোটিপতির চাকর বা কর্মচারী হয়েছে অথবা তার প্রতিষ্ঠিত স্কুল কলেজের শিক্ষক হয়েছে অথবা তার পত্রিকার বা টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার হয়েছে।
অনেক পরিশ্রমী ক্যারিয়ারিস্ট উন্নত জীবনের অধিকারী হতে চেয়ে বড় কর্মকর্তা, ম্যাজিষ্ট্রেট বা কোন নির্বাহী অফিসার হয়েছে কিন্তু নন মেট্রিক এম. পি. সাহেবকে স্যার স্যার করতে করতে গলদঘর্ম হয়ে গেছে। সৎ যোগ্য ছাত্রটি রাতের পর রাত পড়াশুনা করে রাস্তায় রাস্তায় ফাইল হাতে হন্যে হয়ে ঘুরছে জীবিকা নির্বাহের জন্য। আবার অসৎ লম্পট নেশাগ্রস্ত ছেলেটি কোন দলের ক্যাডার হয়ে রাতভর চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জিনা ব্যাভিচার অথবা নেশা করে ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত এবং দিনের বেলায় নেতা সেজে হোন্ডা বা গাড়ি হাঁকাচ্ছে। সুতরাং পার্থিব জ্ঞান অর্জন হলেও সফল জীবন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু মহান আল্লাহ্ যে জ্ঞান অর্জনকে ফরয ঘোষণা করেছেন সেই জ্ঞান অর্জন ও তা মান্য করলে একই সাথে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্যের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এই সাফল্য অর্জনের জন্য প্রাণ দিয়ে হলেও পরীক্ষায় পাস করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা এই পরীক্ষায় ফেল করলে যতই হাতে পায়ে ধরা হোক বা অর্থদন্ড দেওয়ার ইচ্ছা বা চেষ্টা করা হোক অথবা আর একবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চাওয়া হোক, কোন লাভ হবে না। ভয়াবহ অপূরনীয় এই স্থায়ী ক্ষতির বোঝা অনন্তকাল ধরে বইতে হবে!
(সংগ্রহিত)