somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে জল শুকাবে না শেষ বিকেলের রোদে

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( এক বন্ধু তার এক কাজের জন্য গল্প চাইলো । ভিডিও বেস কাজ । কয়েক মিনিটের । থিমটাও দিলো । আজ সকালে এক বসায় লিখে ফেললাম গল্পটা । সরল একটা গল্প । গল্পটা উৎসর্গ করলাম মামুন রশিদ ভাইকে । যে কয়জন মানুষের উৎসাহ এই ব্লগে লিখতে সাহস যোগায় তার মাঝে আপনি একজন

গল্প তবে শুরু হোক... )



নিতুনের আরও বড় হওয়ার কথা ছিলো ।


না এমন বড় নয় যে, গত বছরের জামাটা এই বছরে আর গায়ে হবে না । এমন বড়ও না হঠাৎ দেখে কেউ চোখ বড় বড় করে বলবে, আরে নিতুন এতো বড় হয়ে গেছিস ! সেদিনও তো কোলের মধ্যে ন্যাতা ন্যাতা হয়ে পড়ে থাকতিস । কিংবা পাশের বাসার নিঝুম এসে কানে কানে কোনও গোপন কথা বলে চোখ পাকিয়ে বলবে, তুই এটা জানতিস না?? এতোটা বড়ও না ।

কিন্তু নিতুনের এখন ফড়িং ধরবার কথা ছিলো । মখমলের মতো নরম ঘাসের গায়ে খুব সতর্ক যে ফড়িং তার লেজে সুতো বেঁধে দৌড়ে বেড়ানোর কথা ছিলো নিতুনের । দুপুরবেলা দারোয়ান চাচা ঘুমিয়ে পড়লে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো । তারপর সারা দুপুর হেঁটে হেঁটে সারা পাড়া । আইসক্রিমওলা কিভাবে গলা টেনে টেনে ডাকে, আইসক্রিম নিবেন আইসক্রিম । মধ্যদুপুরে মাঝপুকুরে ঢিল ছুঁড়লে কতটা আওয়াজ হয় । নিঝুমদের বড়ই গাছে টুনটুনিটা কি ডিম দিয়েছে , বিরেন চাচা আজকেও জিলেপিতে মিষ্টি বেশি হয়েছে কিনা জানবার কথা ছিলো নিতুনের । নিঝুমের সাথে নতুন পুতুলটা নিয়ে ঝগড়া করে, আড়ি দিয়ে জীবনের মতো সম্পর্ক শেষ করে কান্না করার কথা ছিলো । স্কুলে গিয়ে পড়া না পেড়ে কান ধরা , খানিকপরে প্রিয় বন্ধুকেও কান ধরে দাঁড়াতে দেখে মুচকি হাসা , স্কুল শেষে আঁচার খেতে খেতে বাড়ি ফেরা । বৃষ্টি এলে আম্মুর ফোন , ভিজবে না কিন্তু একদম সাবধান করে দিলাম । তারপর বৃষ্টিতে ভিজে শরীর মুছে লক্ষ্মী মেয়ের মতো আম্মুর অপেক্ষা । আর জ্বরটা যদি এসেই যায় তাহলে অপরাধীর মতো মুখ করে আম্মুকে ডাকা । এতোটুকুই বড় হওয়ার কথা ছিলো নিতুনের ।



কিন্তু নিতুন বড় হতে পারে না । ওর জীবন আটকে গেছে এক দুর্ঘটনায় । সেদিনও ব্যস্ত সকাল ছিলো । স্কুল ড্রেস পড়ে দ্রুতই নামছিল নিতুন সিঁড়ি বেয়ে । তাড়াহুড়োতে খেয়াল করেনি তার সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট ভাই মিতুন একটা খেলনা ফেলে রেখেছিলো সিঁড়িতে । নিতুনের পা পড়েছিলো খেলনাটার উপরে , তারপর ওর আর কিছু মনে নেই । জ্ঞান ফেরার পর অবাক বিস্ময়ে নিতুন আবিষ্কার করে অন্ধকার কি প্রবল হতে পারে । ও চিৎকার করে বলেছিলো, মা আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেনও ?? এরপরে আর সে ঘাস ফড়িঙের পেছনে দৌড়াতে পারেনি । দারোয়ান চাচা ঘুমিয়ে গেছে কিনা আর খোঁজ রাখে না নিতুন । আইসক্রিমওয়ালার ডাক অলিতে গলিতে হারিয়ে যায় । ভর দুপুরে ঢিল পরে না মাঝ পুকুরে । টুনটুনিরা আজও আছে কিনা গাছের ডালে কে জানে । স্কুলে যাওয়া হয়না কতদিন, এখনও কি তার প্রিয় বন্ধুরা পড়া না পেরে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, এখনও কি তাদের নিতুনের কথা মনে পড়ে, জানা হয়না নিতুনের । কার পুতুল বেশি সুন্দর এই নিয়ে ঝগড়া হয়না নিঝুমের সাথে , আড়ি ছাড়াই কথাহীন কাটে দিনের পর দিন । বৃষ্টি এলে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে ও । কারও মিশতে ইচ্ছে করে না , ইচ্ছে করে না কারও সামনে যেতে অন্ধত্ব নিয়ে । নিতুনের জীবন থমকে থাকে ঠিক দুর্ঘটনার দিনটাতে ।



অথচ সবাই এগিয়ে যায় । সেদিনও নিতুনের ছোট্ট ভাইটা আধো আধো বোলে কথা বলতো সেও এখন পরিষ্কার কথা বলে । কিন্তু এখনও আতা আতা ডাকটা ছাড়তে পারেনি । সবসময়ই আতা আতা ডাকে আর নিতুনকে খোঁজে মিতুন । কিন্তু তার আতা আর আগের মতো সাড়া দেয়না । আগের মতো আদর করে না । আগের মতো কোলে নিয়ে ছুটে বেড়ায় না এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত । লুকিয়ে লুকিয়ে মুখের ভিতরে পুরে দেয়না লজেন্স , আম্মুকে ফাঁকি দিয়ে ঝুলতে দেয়না বারান্দায় , মুখোশ পড়ে ভয় দেখায় না । বই বের করে পড়ে শোনায় না আশ্চর্য সব রাজপুত্র আর রাক্ষসের গল্প । মিতুন বুঝতে পারে না কেনও আতা এমন হয়ে গেলো । এটাও কি কোনও খেলা?? সেই খেলাটার মতো , মাঝে মাঝে নিতুন নাই হয়ে যেতো । মিতুন যখন খুঁজে খুঁজে হয়রান তখন কোত্থেকে নিতুন তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলতো টুকি ! মিতুন বোঝে না, কেউ তাকে কিছু বলে না । বোঝে না বলেই এই ঘর ওই ঘর নিতুনকে সে খুঁজে বেড়ায় আর ভাঙ্গা গলায় ডাকে, টুকি । মিতুন জানে না, খেলা নয় নিতুন বেছে নিয়েছে সত্যিকারের আড়াল । বাইরের বারান্দায় গ্রিলের সাথে লেগে থাকা সবুজ লতানে গাছগুলো একটা পাশ অন্ধকার করে রেখেছে । মিতুন সেই অন্ধকারে চুপচাপ বসে থাকে । কোনও শব্দ কোনও মানুষ সেখানে পৌঁছায় না । হঠাৎ হঠাৎ মিতুন সেই জায়গাটা খুঁজে বের করে ফেলে । আতাকে খুশি করতে কখনও কখনও লজেন্স নিয়ে আসে কখনও নিয়ে আসে রুপকথার বই । নিতুনের নিস্প্রান চোখ ভিজে যায় । সবুজের ফাঁক গলে কোনও পথভোলা শেষ বিকেলের রোদ যদি বারান্দায় এসে পড়ে পড়ে তবে সেও থমকে যায় নিতুনের চোখের জলে । মিতুনের কষ্ট হয় নিতুনের চোখে চকচকে জল দেখে , অবুঝের মতো ডাকতে থাকে আতা আতা । শেষ বিকেলের রোদ চুপ থাকে, নয় বছরের একটা মেয়ের কষ্ট ধারণ করার ক্ষমতা ওই ক্ষুদ্র অশ্রুবিন্দুর নেই, এই জেনে ।


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৫২
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×