জীবন তার অনেকটা পথ পেরিয়ে গেলো। যৌবন এখন তার শেষ সীমানা ছুঁই ছুঁই করছে। কি পেলাম আর কি হারালাম সেই চিন্তায় আজ মনটা গল্পে মশগুল। জীবনের এই চলার পথে কত কিছুই না করেছি, কত মানুষের সাথেই না মিশেছি। গলা ফাটিয়ে কত জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছি। উন্মত্ত স্লোগানে স্লোগানে রাঙ্গিয়ে দিয়েছি রাজপথ। আজ এই সাঝবেলা, নিজেকে নিজেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসিনু- 'কি করেছো তুমি যবে যৌবন এসেছিলো প্রখর রোদে এক টুকরো বটের ছায়া'র রূপ ধরে?'
একবার ডাক এলো- 'তোমার সাথীরা জেলে বন্দী। থানার সামনে তোমাকেই যেতে হবে।' বাবাকে কদমবুসি করে, মাপ চেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। অথচ, তাদের মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাইনি। নিজ সত্ত্বা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে গেলেও, আহত হয়েছি বারংবার। ফিরে এসেছি নিজ নীড়ে আশাহত হয়ে।
আরেকবার পল্টন ময়দানে ডাক পড়ে। কাঁপাতে হবে রাজপথ। পুলিশের নির্মম লাঠির বাড়িতে রক্তাক্ত হয়েছে অধর। পিছু হটিনি। কি লাভ হয়েছে তাতে। একদল শৃগাল দিনের বেলা ঠিকই 'ব্যবহার' করে নিয়েছে এই পবিত্র স্বত্বা। যখন বোধে এসেছে, হাতে তখন আর সময় নেই। কোমরে পড়েছে লালঘরের শক্ত পাকানো আঁশটে দড়ি।
নিজেকে খুঁজে ফিরেছি প্রার্থনাগারের ধর্মভীরুদের দলে। পেয়েছি কি নিজেরে সেথায় সদাই, ছাই! সেখানেও বিভেদ, হিংস্রতার কাকপক্ষীয় অপলাপ। ছুটে বেরিয়ে গিয়েছি অজানা কোন দূর পথ পানে।
ব্যথিত মনে প্রিয়ার নিকটে প্রশ্ন রেখেছিলাম- 'কোথায় তুমি! কোথায় ছুটে গেলে পাবো তোমায়!'
কুহু ডাকে কোকিলকন্ঠী বলে উঠেছিলো- 'নিজেকে ছেড়ে দাও। তবেই, খুঁজে পাবে আমায়।'
প্রিয়ার চিঠিতে ছিলো বৃষ্টির ঝাপটা, সবুজ পাতার ঘ্রাণ। ম্রিয়মান জীবনে তা এনে দিয়েছে আলো, সতেজ করেছে প্রাণ। প্রেমহীন জীবনে শরাবের পেয়ালায় চুমুক, সে তো পাথুরে মেঝেতে অযথা মাথা ঠুকা মাত্র! যে বুঝবে তা, কোকিলের ডাক পৌঁছুবে তার কাছে হয়ে অনির্বাণ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:১৫