somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নজরুল করেন ঢং, তা ছড়ায় কত্ত রং!

০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



==
১৩
==
জাতীয় কবি নজরুলের তখন তরুণ সময়। একদিন তিনি ঘরের বারান্দায় বসে রয়েছেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন, কাছেই একটি পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছোট্ট একটি মেয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে।

নজরুল তাড়াতাড়ি কাছে গেলেন। গিয়ে তো অবাক! ওমা! গাছে তো কেউ নেই! তাহলে, মেয়েটি কার সাথে কথা বলছে!

মেয়েটিকে শুধুতেই, সে জানালো, 'কাকাবাবু! ওই দেখো দুষ্টু কাঠবেড়ালী। রোজ রোজ দুষ্টুটা পেয়ারা খেয়ে পালিয়ে যায়। আমাকে একটাও দেয় না।'

কাঠবেড়ালী'র সাথে সেই মেয়েটির এমন মান-অভিমানের ঘটনা নজরুলের মনে এতোটাই দাগ ফেলে যে, তিনি একটি ছড়া লিখে ফেললেন-

‘কাঠবেড়ালী! কাঠবেড়ালী! পেয়ারা তুমি খাও?/ গুড়-মুড়ি খাও! দুধ-ভাত খাও? বাতাবি লেবু? লাউ?...’

==
১৪
==
'ঐ দেখো, আরেকজন আড়ষ্টকাক এসেছে।'

কাজী নজরুল ইসলামের বাচন ভঙ্গিতে কৌতুকের ছোঁয়া পেয়ে সাথীরা দেখতে পেলেন যে ঘরে একজন ধোপদুরস্ত সাহেবী পোশাক-পড়া মানুষ প্রবেশ করেছে। আসলে, নজরুল 'এরিস্টোক্রেট'-কে মজা করে 'আড়স্টকাক' বলতেন।

আর, যারা বক্তৃতা দিতে পছন্দ করতেন, তাদের 'বখতিয়ার খিলজী' বলে সম্বোধন করতে ভালোবাসতেন।

কেউ বেশি বকবক করা শুরু করলে, কথার মোড় ঘুরাতে বলতেন- 'জানে দেও কন্ডাক্টর'।

==
১৫
==
আরেকবার হয়েছে কি, একজন গায়ক নজরুলের কাছে এসে বকবক করেই চলেছে। অথচ, সে এসেছিলো গান শোনাতে। গান না শুনিয়ে লোকটির এমন প্যাঁচালে নজরুল যারপরনাই বিরক্ত হচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বলে ফেললেন-

'আপনি তো দেখছি একটি জানোয়ার লোক।'

এই কথা শুনে লোকটি বেশ রেগে গেলো। চোখ বড় বড় করে বললো - 'কি বললেন!'

নজরুল এবারে উত্তর দিলেন - আরে না না, কিছু মনে করবেন না। আপনি তো অনেক কিছু 'জানেন'। তাই, 'জানোয়ার' শব্দটাই আপনার সঙ্গে মানানসই!


==
১৬
==
একবার নজরুল শুনতে পেলেন যে, একজন শিক্ষকতা পেশায় জড়িত এক মানুষ নজরুলের লেখা গান গাইতে চাচ্ছেন। অথচ, সেই ভদ্রলোকের গানের গলা নেই।

নজরুলের ক্যারিয়ার তখন সূবর্ণ শিখরে। নিয়মিত গ্রামোফোন কোম্পানী'র রিহার্সাল রুমে এসে গান লেখার পাশাপাশি, সুর করেন, অন্যদের গান শিখিয়ে দেন। এমনবস্থায়, এই রকম আবদার!

সেই ভদ্রলোকও নাছোড়বান্দা। তিনি কেঁদে-কেটে অস্থির হয়ে জানালেন যে, কোম্পানী'র লোকেরা 'ঘুষ' হিসেবে তাঁর কাছ থেকে মিষ্টি পর্যন্ত খেয়েছে। আর এখন বলছে তাঁর গান তারা নিবে না!

এই কথা শুনে নজরুল বললেন যে, যখন মিষ্টি খাওয়া হয়েছেই, তখন সেই লোকের গান রেকর্ড করতেই হবে।

নজরুলের কথা শুনে কোম্পানী'র লোকেদের তো চক্ষু চড়কগাছ। নজরুল বলছেন কি!

নজরুল তাঁদের আশ্বাস দিলেন - 'আরে! আমরা বাঙালীরাও কিন্তু কম হুজুগে নই, দেশটাও হুজুগে।'

যেই ভাবা সেই কাজ! পরের দিন নজরুল গান লিখে নিয়ে এসে লোকটিকে এই লাইনগুলো গাইতে বললেন-

কলা গাড়ি যায় ভষড় ভষড়
ছ্যাকরা গাড়ী যায় খচাং খচ,
ইচিং বিচিং জামাই চিচিং
কুলকুচি দেয় করে ফচ...


সেই শিক্ষক ভদ্রলোক দ্বিগুণ উৎসাহে গলা সাধলেন। ঐদিন এই লাইনগুলোই তাঁকে শেখানো হলো।
পরের দিন, আরো কয়েকটি লাইন লিখে নিয়ে এসে নজরুল শিক্ষক মহাশয়কে গাইতে বসালেন-

মরি হায় হায় হায়,
কুব্জার কী রুপের বাহার দেখো।
তারে চিৎ করলে হয় যে ডোঙা
উপুড় করলে হয় সাঁকো।
হরি ঘোষের চার নম্বর খুঁটো,
মরি হায় হায় হায়...


যাহোক, চরম গোপনীয়তা রক্ষা করে গানের রেকর্ড করে বাজারে ছাড়া হলো। কয়েকদিন পরে, নজরুল একজনকে বাজারে পাঠালেন গানটি কেমন চলছে জানার জন্যে। তিনি ফিরে এসে নজরুলকে বললেন-

'কাজীদা, খুব বিক্রি হচ্ছে অদ্ভুত গানদুটো। ক্রেতারা কিনছে আর গাইছে, কলা গাড়ী যায় ভষড় ভষড়...'























সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×