ধর্ষণের কথা উঠলেই নারীর পোশাক, তার চালন বলন,স্বভাব চরিত্র ইত্যাদি সব কিছু টেনে নিয়ে আসা হয় । সব দোষ যেন নারীর। নারীই যেন বলছে, এই দেখে আমি এমন পোশাক পরেছি, এমন ভাবে চলছি এসো আমাকে ধর্ষণ করো।
সত্যিই কি ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক,তার চলন বলন দায়ী নাকি অন্য কিছু?
ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক দায়ী। এই বক্তব্য দিয়ে অনেকেই আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন।
নারীর পোশাক সংক্রান্ত বিষয় কথা উঠলেই অনেকেই এর পক্ষে বিপক্ষে ফুসে উঠেন। কেউ কেউ আবার ধর্মীয় রীতিনীতি টেনে এনে যুক্তি দেখাবার চেষ্টা করেন যে, ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক ই দায়ী। নারী বাদীরা আবার পাল্টা বক্তব্য দেন,আগে ব্যাটা তোর চোখ ঠিক কর আমি যা ইচ্ছা পরমু তাতে তোর কি?
মূলত যারা খুবই অল্প তথ্যের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তারাই মূলত এই ধরনের বির্তকে জড়িয়ে পরেন।
ধর্ষণের সঠিক কারণ যদি খুঁজতে যাই তাহলে অনেকগুলো বিষয় চলে আসতে বাধ্য। একটু খোলা মনে চিন্তা করলে আশা করি সবাই একমত হবেন।
নারীর পোশাক ই যদি ধর্ষণের জন্য দায়ী হতো তাহলে শিশুরা,পশুরা কখনো ধর্ষণের শিকার হতো না। আবার আধুনিকতার নামে ছোট ছোট পোশাক পরিহিতা আলট্রা মডার্ন নারীরা যদি বেল্লা পানা করে না বেড়াতো তাহলেও তাদের কেউ টার্গেট করতে পারতো না। এদের কথা না হয় বাদ দিলাম। এখন প্রশ্ন হল,তাহলে সাধারণ মেয়েরা,শিশুরা এমনি পশুরা কেন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে? এই ঘটনাগুলোর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। ধর্ষণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় আবার যারা ধর্ষণ করে তারা কেউ ভিন গ্রহ থেকেও আসেনি।
তারা আমাদের সমাজেই বাস করে। আমাদের পরিবারেরই সদস্য।
ধর্ষণের কারণগুলো নিম্নরুপ -
১.আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনের প্রয়োগের অভাব।
২. পারিবারিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব।
৩.অশ্লীল সংস্কৃতির প্রভাব।
৪.অপরাধীদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আশ্রয় প্রশ্রয়সহ তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার।
৫.মাদক দ্রব্যের প্রভাব
৬. ধর্ষকের মানসিক সমস্যা।
অনেক জার্নালে শেষের এই কারণটিকে বড় করে দেখানো হয়েছে। উপরের পাচটি কারণ ছাড়াও শুধুমাত্র ষষ্ঠ কারটির জন্য ৭৫% ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরা মানুষিক রুগী। এজন্য ই মৃত দেহের সাথে ধর্ষণ করার মতো ন্যাকারজনক ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়।
সুতরাং এটা সহজেই অনুমেয় যে,শুধু নারীর পোশাক নয় ধর্ষণের জন্য দায়ী নয়। পুরুষের গঠনগত হরমোনও ধর্ষণের জন্য অনেকাংশে দায়ী।
কঠিন থেকে কঠিনতর আইন করেও সমাজ থেকে ধর্ষণ একেবারে বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু যথাযথ আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা ফলে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
একটি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে,বেশির ভাগ ধর্ষণকারী ই মানসিকভাবে অসুস্থ এবং ধর্ষণের পূর্বে তারা কোন না কোন প্রকার মাদক গ্রহণ করেছে। এবং তাদের সকলেরই বিকৃত যৌন ছবি বা ব্লু ফ্লিম দেখার অভ্যাস রয়েছে।
তাই বলা যায় যে, আইনের কঠোর প্রয়োগ করে হয়তো, সমাজ থেকে সন্ত্রাস,মাদক দূর করা যাবে কিন্তু ধর্ষণ একেবারে বন্ধ করা যাবে না। তবে কমিয়ে আনা যাবে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হতে পিতা মাতা ভাই বোন ও রাষ্ট্রকে। মনে রাখতে হবে সবচেয়ে নিকট আত্মীয় স্বজন দ্বারাই বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।।
সাখাওয়াত বাবন
মহাখালী
১২.১০.২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:০৬