একটি বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হলো অথচ হত্যাকারীকে আটক করার পরেও সোশ্যাল মিডিয়ার মেয়েটির পিতা,মাতা তথা পরিবারকে নিয়ে চলছে দফায় দফায় ভার্চুয়াল ধর্ষণ। মৃত মেয়েটির ফুটফুট মুখ কারো মনেই যেনো কোন নাড়া দিতে পারলো না । কোথায় নেমে গেছে মানুষের বিবেক বোধ । একটি ধর্ষণের ঘটনাকে মিচিউয়াল সেক্স এর ঘটনা বানিয়ে মনের সুখে যে যার মতো শত সহস্রবার মেয়েটিকে ধর্ষণ করে চলেছে । নির্যাতনে জীবন দিয়েও মেয়েটি ধর্ষণ হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে না । রসিয়ে রসিয়ে চটিয়ে চটিয়ে মন্তব্য করে এরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে চলেছে ।
অতি উচ্চ শ্রেণির এক উত্তেজিত আতেলকে দেখলাম, পোষ্ট দিয়ে বসে আছে, আনুশকা'র মা জবাব দিন, আপনার মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে কেন মৃত্যু বরণ করলো ।
ধর্ষক নিজের বাড়িতে মেয়েটিকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে, এখন উল্টো মেয়ের বাবা, মাকে প্রমাণ করতে হবে, যে তার মেয়ে নিজের দোষে ধর্ষিতা হয়নি । এর চেয়ে নির্মম,কষ্টের,বেদনার আর কি হতে পারে ? ফেসবুকে মন্তব্যগুলো দেখে মনে হয়েছে, যারা মেয়েটিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে তাদের সবার মা, বোনেরা ধর্ষিতা হোক তখন এরা বুঝতে প্রিয় সন্তান নির্যাতনে মৃত্যু বরণ করলে কেমন লাগে।
আমার নানী একটা কথা বলতেন, নিজের পাছায় ছ মন গু অন্যরে কয় পুটকি দো । অর্থাৎ নিজের দোষ আমরা দেখি না । অন্যের দোষ নিয়ে, জীবন নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই ।
বর্তমান সময়ে ছেলে মেয়েরা নিজেরা এমনিতেই অনেক বেশি বোঝে । তাদের কাছে পিতা মাতা হচ্ছে, ব্যাকডেটেট । অনেক পিতা, মাতা সন্তানের প্রতি এমনিতেই উদাসীন । তারা ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে সন্তানকে সময় দেবার সময় তাদের নেই । এই সব পিতা মাতাদের নিয়ে বলার কিছু নেই । তাই বলে সন্তান ধর্ষণের শিকার হলে সেই দোষ পিতা মাতার কেন হবে ? সব সময় সব দোষ পিতা মাতার হয় না । সমাজ ও রাষ্ট্রেও অনেক দায় থাকে ।
যে জানোয়ারটা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফূর্তি করতে গিয়ে মেয়েটিকে মেরে ফেললো , তার পিতা মাতা নিয়ে কারো কোন আগ্রহ নেই । উল্টো তার মা বলে বেড়াচ্ছে , হত্যার উদ্দেশ্যে নয়, একান্তে সময় কাটাবার জন্য ই মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে এসেছিলো । উনি হচ্ছেন আর্দশ না । আর আনুশকার মা হচ্ছেন, খারাপ ।
মেয়েটি ধর্ষণের পর চার, পাঁচজন মিলে হাসপাতালে নেওয়া হলে, চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। সে সময় চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ হিসাবে যা যা বলেছে, তা মিডিয়ায় এসেছে । অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের সাথে পেটে আঘাতের চিহ্নের কথা চিকিৎসক পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করে ছিলেন । কিন্তু পরবর্তীতে যখন অযখন পোস্টমর্টেম করা হলো , তখন এই আঘাতের কথা বে মালুম চেপে যাওয়া হলো ।
যারা মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো, মূল ধর্ষকসহ তাদের সবাইকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও রহস্যজনক কারণে চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হলো । ধর্ষক প্রথমে ধর্ষণ করে হত্যার কথা স্বীকার করলে ও এখন বলছে, মিউচুয়াল সেক্স করতে গিয়ে নাকি মেয়েটি মারা গেছে । একটু হিসাব নিয়ে দেখুন তো, মিউচুয়াল সেক্স এর ফলে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কত নারী মারা গেছে ? সম্ভবত একজন ও না । ধরেই নিলাম মেয়েটির সাথে ওই জানোয়ারটির প্রেমের সম্পর্ক ছিলো , তাই যদি হতো তা হলে, ব্লিডিং এর শুরুতেই মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো । জ্ঞান হারাবার পরে নিয়ে যাওয়া হতো না । প্রিয় মানুষের একটু কষ্ট ও নিজের কষ্ট ।
পুরো বিষয়টি পড়ে মনে হয়েছে , মেয়েটি জ্ঞান হারাবার পরেও তার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। একজন নয় কয়েকজন মিলে মেয়েটিকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে । এটি ছিলো একটি পরিকল্পিত গ্যাং রেইপ ।ও হত্যাকান্ড । অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে মৃত মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে তারপর পুরো ঘটনাটিকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । এ কথা কেন বলছি ? পুরো ঘটনাটিকে একটু খতিয়ে দেখেন , মেয়েটির মায়ের বক্তব্য থেকে পাওয়া যায় , একটি চক্র মেয়েটির বয়স বাড়িয়ে দেখাবার জন্য ব্যস্ত ছিলো অন্যদিকে ধর্ষক জানোয়ারটির বয়স কমিয়ে দেখাবার জন্য তারা অতি আগ্রহী ছিলো এবং কমিয়ে দেখিয়েছেও কারণ তাহলে এটিকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মিউচুয়াল সেক্স এর ফলে মৃত্যু দেখিয়ে হত্যাকারীকে রক্ষা করা সহজ হয়ে যেতো ।
এছাড়া ও মেয়েটির বাবা সকলের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেও পুলিশ নাকি একজন এর বিরুদ্ধে মামলা করতে তাদের বাধ্য করেছে । বাকিদের ছেড়ে দেয় । কিন্তু কেন ? এখানে পুলিশের কি স্বার্থ আছে, কোন ঘটনা ঘটলেই পুলিশের ভূমিকা কেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পরে ? যাদের হাতে মানুষের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব তারা যদি তা পালনে ব্যর্থ হয় তা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে । ছেড়ে দেওয়া ওই চারজনের পরিবারই এখন এই জানোয়ারটিকে বাচাতে অদৃশ্য শক্তির ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে । কারণ সে মুখ খুললেই পুরো ঘটনা প্রকাশ হয়ে পরবে । জানোয়ারটি পরিবার এ কারণেই উকিল দেয়নি কেননা , তার ছেলে তো একা ধর্ষণ করে নাই তাই তাকে বাচাবার দ্বায়িত্ব অন্যে চারজনের পরিবারের তারাই উকিল দেবে মামলার খরচ যোগাবে ।
আইজি সাহেব গতকাল পিতা মাতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সন্তান জন্ম দিলে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে অত্যন্ত সুন্দর কথা । আইজি মহোদয়কে বলবো, দয়া করে করোপটেড পুলিশের দায়িত্বও আপনি নিন । মানুষের বিচার পাবার ব্যবস্থা সহজ করুণ । বিচারের কথা উঠলেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মানুষ হাসে এটি বন্ধ করুণ ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:২৫