শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলন দেখে, আমার ছোট বেলার একটি আন্দোলনের কথা মনে পরে গেলো । সেটি ছিলো আমার জীবনের প্রথম কোন আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহন । আমি তখন দশম শ্রেনীর ছাত্র । আমাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষের বিরুদ্ধে তখন একটি আন্দোলন গড়ে উঠে ছিলো । সে কি আন্দোলন ! সে কি বিরোধ ! সে কি উত্তেজনা! দফায় দফায় মিটিং, মিছিল আরো কত্ত কি। কিছু শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির একটি অংশ নানা কারণ দেখিয়ে তখন স্কুলের হেড স্যারের পদত্যাগ দাবী করে আন্দোলন শুরু করেছিলো ।
স্কুলের উন্নয়ন , নিয়োগসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে স্কুল পরিচালনা কর্মিটির নেতাদের ব্যক্তিগত দলাদলি, তাদের একটি অংশের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরোধীতা, মতো বিরোধ ই ছিলো প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণ । বাস! আর যায় কোথায় ? শিক্ষকদের সেই একটি অংশ নানান ভাবে ফুসলিয়ে, ফাসলিয়ে আমাদেরকেও দলে টেনে নিলো । ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় আন্দোলনের গতি বেড়ে গেলো । যার পরিনতিতে প্রধান শিক্ষক স্যার এবং স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কবির কাকা স্কুল থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হলেন।
সেই বিজয়ের অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলাম, যে আমাদেরকে শুধুই ব্যবহার করা হয়ে ছিলো। পথের কাটা সরিয়ে দিয়ে ফায়দা লুটেছে নতুন কমিটি। নিয়োগ দিয়েছে নিজেদের ভাই ব্রাদার আত্মীয় স্বজনদের । আজো সে কথা মনে হলে, বিদায়ের আগে স্যারের সেই করুণ মুখের কথা মনে পরে গেলে বুকের ভেতরটা টনটন করে উঠে ।
কেননা সেই আন্দোলনে শুধু স্যার,কবির কাকা হেরে যাননি আমিও হেরে গিয়েছিলাম । যতো বড় হয়েছি, "ততোই বুঝতে পেরেছি, সব আন্দোলন আসলে আন্দোলন নয় । সব দাবী, দাওয়া সত্যিকার অর্থেই কোন অর্থ বহন করে না । "
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বহুদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের কিছু ঘটনা রীতিমতো টক অব দ্যা টাউন । বাবা, মা অনেক আশা করে শরীরের রক্ত পানি করে । উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় । তাদের আশা সন্তান লেখা পড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে, পিতা মাতার মুখ উজ্জ্বল করবে । জাতীর জন্য সম্মান বয়ে আনবে । কিন্তু হায় ! দেশের লেখা পড়ার যেই শ্রী তাতে সম্মান তো দূরে থাক সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তায় অভিভাবকদের বেচে থাকায় ই দায় । পরিস্থিতি এমন যে, সন্তানের পিতা মাতা হওয়াই যেনো এখন মস্ত বড় শাস্তি , সব চেয়ে বড় অপরাধ ।
রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক সামাজিক সব কিছু মিলিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি যে, প্রতিটি মুহূর্তে আতংক গ্রস্ত হয়ে থাকতে হচ্ছে । এক দিকে সিন্ডিকেট ও আমলাদের দুনীতির কারণে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্ব গতি । অন্যদিকে করোনার কারণে, আয় রোজগার কম কমতে কমতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অবস্থা এমন একটি জায়গায় এসে থেমেছে যে, এর চেয়ে মৃত্যুও যেনো অনেক শ্রেয় ।
এতো কিছুর পরে ও যদি কারো ঘরে সু সন্তান থাকে তাহলে, পিতা - মাতার দু:খ, কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়ে যায় । সু সন্তান আল্লাহ্ তালার নেয়ামত । শুধু পরিবারের জন্য নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ও ।
বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার আগে যে, যুদ্ধটা শুরু হয়ে যায় সেটা দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয় । অভিভাবকের টাকা পয়সা পানির মতো খরচ করে শুধু মাত্র একটি ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করার জন্য । কোন সন্দেহ নাই, দেশে যে কটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তার মধ্যে শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম । কিন্তু গত কয়েকদিনে , সেখানে যা চলছে তাতে মনে হয় না বিশ্ব বিদ্যালয়টি তার পূর্বের সম্মান ধরে রাখতে পারবে । তারা যখন ভিসির বিরুদ্ধে লড়ছে , ব্যাক বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা তখন আন্ত:জাতিক রোবটিক কম্পিটিশনে অংশ গ্রহণ করে দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনছে ।
তাহলে, দেশের জনগণের টাকায় কেন এসব ছাত্রছাত্রীদের পেছনে খরচ করা হবে ।? সস্তার তিন অবস্থা । সস্তা লেখা পড়ার সুয়োগ পেয়েছে বলে , গ্রায্য করছে না কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে । প্রথমে হলের প্রভোস্ট'কে নিয়ে আন্দোলন ছিল তাকে সরানো হয়েছে । এখন আন্দোলন হচ্ছে, ভিসিকে নিয়ে । ভিসি কি হাতের মোয়া যে চাইলেই সরাতে হবে ? জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে তো দুণীতির হাজারটা অভিযোগ ছিলো কই তাকে কি সরানো গেছে ? যায়নি । পুলিশের লাঠি চার্জের বিরুদ্ধে যে, অভিযোগ ছিলো , সেটার জন্য ভিসির কাছে অভিযোগ দিয়েই প্রতিকার পাওয়া যেতো বলে মনে করি । সেই সাথে এটাও জানি যে, প্রশাসনের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ লাঠি চার্জ করে নাই । ইটা মারলে তো লাঠি খেতেই হবে । এটা ভুলে গেলে চলবে না । ভিসি তো শিক্ষামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া পদত্যাগ করবেন না, তাহলে কি এখন ছাত্রছাত্রীরা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করবেন ? আছে সেই হেডাম? দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য শুধু অসাধু, সুবিধা ভোগী লোকেরাই ই দায়ী নয় এর জন্য কিছু ফাঁকিবাজ, আন্দোলন প্রিয় ছাত্রছাত্রীও দায়ী ।
দেড় বছর পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে পরীক্ষা নিতে চাইলে পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রী পায়নি চিটাগং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগ । অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের ব্যাপারে আরো সর্তক হওয়া । নীতি, আদর্শের জন্য বড়, বড় কথা সবাই বললেও সুবিধা নেবার বেলায় কিন্তু সেটা সবাই চায় । এ কারণেই সমাজের সার্বিক পরিস্থিতির কোন উন্নয়ন ঘটে না । আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে । এমন স্বপ্ন এখন আর কেউ দেখে না । সন্তান বললেই এখন ভয় লাগে । চাই সন্তানটা যেনো শুধু বেচে থাকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৯