somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

অপহরণ - সাখাওয়াত বাবনে'র কল্পকাহিনী ((২য় পর্ব )

১৩ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুই

খুব মৃদু চিনচিন একটা শব্দ হচ্ছে ।
মনে হচ্ছে,অনেকগুলো ঝিঝি পোকা একসাথে ডাকছে । ঘুম ভাঙ্গার পর অনেকক্ষণ যাবত ঘুমের ভান করে ক্যাপসুল আকৃতির বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে শব্দের উৎস স্থল বের করার চেষ্ট করছি । কিন্তু পারছি না । না পারার কারণে হচ্ছে, শব্দটা এক জায়গায় স্থির থাকছে না। ঘরময় ছোটাছুটি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে । একবার পায়ের দিকে যাচ্ছে তো হুট করে আবার মাথার কাছে চলে আসছে । পরমূহুতেই আবার জানালার কাছে চলে যাচ্ছে । মোট কথা স্থির থাকছে না । এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর এক সময় মনে হলো , শব্দটা আমার মুখে উপর এসে স্থির হয়ে গেলো । চোখ খুলে তাকালেই যেন ভয়াবহ কিছু একটা দেখতে পাবো । এমন একটা আশংকা থেকে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ করে পরে রইলাম । স্ক্যান করার মতো শব্দটা খুব ধীরে ধীরে মুখের উপর থেকে পায়ের দিকে গিয়ে কিছুটা সময় স্থির থেকে আবার মুখের উপর এসে স্থির হয়ে রইলো।

অজানা এক অনুভূতিতে মাথার চুলগুলো একটা একটা করে দাড়িয়ে যাচ্ছে । ছোটবেলা থেকে আমার এ অনুভূতিটা খুব মারাত্মক । কোন বিপদ-আপদ বা অযাচিত ঘটনা বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হবার পূর্বে আমি সেটা টের পেয়ে যাই । আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমায় সর্তক করে দেয় । ছোট বেলায় ব্যাপারটা শুধু নিজের ক্ষেত্রে ঘটতো । কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা বাড়ছে । ইদানীং প্রতিবেশীদের বিপদ আপদের খবরও আমি তাদের মুখ দেখে আগাম টের পেয়ে যাই ।

এই তো সেদিন আমার দু'বাড়ি পর নিউ ক্যাসেল এপার্টমেন্ট হাউজে বসবাসকারী মি.মর্গান সাহেব'কে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলাম । মর্নিং ওয়ার্কের জন্য ভোর ছটার সময় বাসার সামনের রাস্তায় পায়চারি করছিলাম । হঠাৎ দেখলাম, মিস্টার মর্গান একটা লাগেজ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলেন । ভদ্রলোককে দেখেই আমার ভেতর ক্যামন একটা অনুভূতি হলো । মনে হলো, তাকে থামানো দরকার ভদ্রলোক ভয়াবহ একটা বিপদে পরতে যাচ্ছেন ।

ইস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে আশেপাশের সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করি । প্রতিবেশীরা আমার এই গায়ে পড়ে সম্পর্ক রাখার চেষ্টাটাকে খুব একটা ভালো চোখে না দেখলেও আমি হাল ছাড়ি না । অনেক সময় এই ভাল সম্পর্কে'র কারণেই দু একটা পলিসি বিক্রি হয়ে যায় । এতো সকাল বেলা মর্গান সাহেব'কে বের হয়ে বাড়ির সামনের ট্যাক্সি ষ্টান্ড এ দাঁড়াতে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে গেলাম। ভদ্রলোক আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইলেন । দেখেও না দেখার ভান করলেন । ভেতরের খারাপ অনুভূতিটাকে এড়িয়ে তার সামনে গিয়ে হাসিমুখে বললাম, গুড মর্নিং মিস্টার মর্গান। ক্যামন আছেন আপনি ?

আমার প্রশ্নের জবাবে, "ভাল আছি" বলে ট্যাক্সির জন্য মিস্টার মর্গান এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন । ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দরদর করে ঘামছেন । আমি হেসে বললাম, মিস্টার মর্গান, ইজ এভরিথিং অলরাইট ? ইয়ু লুক ভেরি ওরিড ।

মিস্টার মর্গান যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললেন, হ্যাঁ ,তুমি ঠিকই বলেছো । এই মুর্হুতে কিছুটা টেনশনে আছি বলতে পারো । এয়ারপোর্ট যাচ্ছি । ফ্লাইট পৌনে সাতটায় অথচ এখন বাজে সোয়া ছ'টা । আজ ফ্লাইটা ধরতে পারবো বলে মনে হয় না ।
আমার একবার ইচ্ছে হলো ভদ্রলোককে আমার গাড়িতে করে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেই কিন্তু ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, থামাও ওকে, সামনে ওর ভয়াবহ বিপদ । যেতে দিও না ।

কি করবো বুঝতে পারলাম না । হুট করে এভাবে কাউকে বাধা দেওয়া যায় না । সেটা আইন বিরোধী হয়ে যায় । মুখের উপর বলাও যায় না যে,আজ তুমি বাহিরে যেও না,গেলেই বিপদ পড়বে । এমনিতেই ইন্সুরেন্স কর্মীদের কাছ থেকে পলিসি করার ভয়ে লোকজনের পালিয়ে বেড়ায় । তার উপর এসব উল্টা পাল্টা বলা শুরু করলে মানুষ পাগল ভাবতে শুরু করবে । গায়ে পরে হাসির পাত্র হবার কোন মানে হয় না ।

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মিস্টার মর্গান স্রেফ ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি খবর ? তুমি ঠিক আছো তো চার্লি ? আমি মাথা নেড়ে বললাম, হ্যা , আমি ঠিক আছি। তবে, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই । সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার মর্গান ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন, দ্যাখো চার্লি, তোমার কাছ থেকে পলিসি নেবার কোন ইচ্ছে নেই আমার । তাই এ ব্যাপারে কিছু বলে আমার সময় নষ্ট করো না ।

আমি একটু দমে গিয়ে বললাম, "না, মিস্টার মর্গান , বিষয়টা পলিসি সংক্রান্ত নয় । "
এবার মর্গান অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, পলিসি সংক্রান্ত নয় ! তাহলে, কি নিয়ে কথা বলতে চাও ?
আমি সরাসরি পয়েন্টে চলে এসে বললাম, তোমার কি এখন বাহিরে না গেলে হয় না ?

মি.মর্গান বেশ অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন । কিছুটা সময় নিরব থেকে বুঝতে চেষ্টা করলেন আমি আসলে কি বলতে চাচ্ছি। তারপর থেমে থেমে জিজ্ঞাসা করলো, ক্যানও ? ক্যানও, তুমি এ কথা বলছো ?
আমি আমতা আমতা করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, ক্যানো বলছি তা জানি না। কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকেই আমার মনে হচ্ছে, তুমি আজ খুব বড় একটা বিপদে পরতে যাচ্ছো। হয়তো এখন বাহিরে যাওয়াটা বাতিল করলে বিপদটা কাটিয়ে উঠতে পারবে ।
একটু থেমে মিস্টার মর্গান এর মনোভাবটা বুঝে নিয়ে আবার বললাম, জানি এসব কথার কোন মানে হয় না। তুমি হয়তো বিরক্ত হয়ে আমাকে পাগল টাগল ভাবতে শুরু করেছো । কিন্তু তবুও কথাটা তোমাকে না বলে পারলাম না । তোমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হয়েছে, আজ তোমার বড্ড বিপদ । এখন বাকিটা তোমার মর্জি । দু:খিত সাত সকালে তোমার সময় নষ্ট করার জন্য ।

কথাটা বলে আমি আর দাঁড়ালাম না। বাসার দিকে হাটতে শুরু করলাম। পেছনে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম, মি.মর্গান অবাক হয়ে, ভ্রু কুচকে তখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

মি.মর্গানকে যেতে নিষেধ করার কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দুপুর ১২টার সময় মি.মর্গান আমাকে ফোন করলেন। এক গাদা থ্যাংকইউ জানিয়ে বলল, ধন্যবাদ তোমাকে চার্লি । তোমাকে ধন্যবাদ জানাবার ভাষা আমার জানা নেই । তোমার জন্যই আজ আমি প্রাণে বেঁচে গেলাম । কণ্ঠ ধরে এসেছে , উত্তেজনায় ভদ্রলোক কাঁপছে ।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন কি হয়েছে ?
মর্গান হাউমাউ করে উল্টো প্রশ্ন করল, তুমি টিভিতে নিউজটা দেখনি ?
কোন নিউজের কথা বলছ ? আমি রাতের আগে টিভি দেখার সময় পাইনা ।
মর্গান কোন ভণিতা না করে বলল, আজ সকালে যে ফ্লাইটাতে আমার যাবার কথা ছিল সেটা ১২৯ জন যাত্রী নিয়ে ক্রাশ করেছে । যাত্রী, ক্রু সবাই মারা গেছে । ১৩০ নম্বর যাত্রী ছিলাম আমি । তোমার কথায় যাত্রাটা বাতিল করে সত্যিই আজ নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলাম । ধন্যবাদ তোমাকে । আজ রাতের খাবারটা তুমি আমার সাথে খাবে । আমি তোমাকে ইনভাইট করছি । আর তখন পলিসি নিয়ে কথা বলা যাবে । ভাবছি , তোমার কাছ থেকে একটা পলিসি কিনবো ।

টিভি খুলে সত্যিই ভয়াবহ নিউজটা দেখলাম । বিজ্ঞাপন বিরতির সময়টুকু ছাড়া সবগুলো চ্যানেলে একটু পরপর নিউজটা দেখানো হচ্ছে ।

বিকেল নাগাদ নিউজটা সারা দেশে চাউর হয়ে গেলো । চ্যানেলগুলোতে একমাত্র বেঁচে যাওয়া যাত্রী হিসাবে রাতারাতি মর্গান পরিচিত হয়ে উঠলেন । বেঁচে যাওয়ার অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে, কেন,কিভাবে বেঁচে গেলেন সে কথা বলতে বলতে বারবার আমার কথা বলতে লাগলেন । এরপর থেকে রিপোর্টারেরা আমাকে খুঁজতে লাগলো।

খ্যাতি, যশ, অর্থকড়ি এসব পার্থিব জিনসগুলো মানুষের কাছে হুট করেই এসেই ধরা দেয় । আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো ।

"ভবিষ্যৎ বোলনেওয়ালা" হিসাবে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে গেলাম ।
একসময় যে আমি, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ছুটে যেতাম এই ঘটনার পর থেকে তারা আমার কাছে তাদের ভূত, ভবিষ্যত জানার জন্য ছুটে আসতে লাগলো । চ্যানেলগুলোতে শুধুমাত্র একটিবার আমার ইন্স্যরেন্স কোম্পানির নামটা উর্চ্চারণ করার জন্য আমার কোম্পানির পক্ষ থেকে আমাকে ৫ মিলিয়ন ডলার অফার করে বসলো । এখন আর আমাকে পলিসি বিক্রি করার জন্য কারো কাছে ছুটে যেতে হয় না । ঘরে বসেই প্রতিদিন ডজন ডজন পলিসি বিক্রি করছি । এ জন্যই বুঝি লোকে বলে ভাগ্য যখন ফেরে তখন সবদিক থেকেই ফিরে।

চলবে ........
অপহরণ - ১ম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:৩৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×