এক ।
হুট করে পরিকল্পনা করলাম চিটাগাং যাবো । কিন্তু বাস কাউন্টারে গিয়ে বাসের ভাড়া শুনে আতকে উঠলাম । আড়াই হাজার টাকা ।
দ্রব্যমূল্যের এই নির্যাতনের সময় আমার মতো গরিবের কাছে আড়াই হাজার মানে অনেক টাকা। তিন দিনের বাজার খরচ । ট্রেনে গেলে ভাড়া কম লাগবে । ট্রেনের কথা মাথায় আসাতে আর দাঁড়ালাম না । আরাম বাগ থেকে হাটতে হাটতে কমলাপুর চলে গেলাম । দুপুর বেলা । কমলাপুর রেল ষ্টেশন ক্যামন ফাকা ফাকা লাগছে । কোথাও ভিড় বাট্রা নেই । এমন ফাকা তো থাকার কথা না । কথায় আছে না , "ঘরে পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় । " আমার ভেতরটাও তাই ক্যামন ক্যামন করতে লাগলো। টিকিট কাটতে হলে নাকি , আগের দিন রাতে এসে লাইনে দাড়াতে হয় । এই মধ্য দুপুরে এসে আমি যে টিকিট পাবো না এটা ভেবে বের করতে আইনস্টাইন হতে হয় না । মাথায় সামান্য ঘিলু থাকলেই বোঝা যায় । কয়েক দিন আগেও দেখেছি , টিকিট কাটা নিয়ে বিস্তর দাঙ্গা ফ্যাসাদ হচ্ছে । সেখানে এই নিরবতা মানে হচ্ছে, ভয়বহ কিছুর আলামত ।
টিকিট কাউন্টারের কাছাকাছি এসে দেখি গুটি কয়েক নারী,পুরুষ লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটছে । সবাই হাতে এ ফোর সাইজের সাদা কাগজে । টিকিট কাটার সময় কাগজটা কাউন্টারের ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে । তারপর টাকা দিয়ে টিকিট হাতে পেয়ে লজ্জাতুর হাসি মুখে কাউন্টার ত্যাগ করছে । ঘটনা কি বুঝার আগেই কাউন্টারের সামনে চলে গেলাম । এমনটা স্বপ্নেও হয় না ।
কাউন্টারের ভেতরে বসে থাকা ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন , কোথায় যাবেন ?
আমি বললাম, চিটাগাং । কবে যাবেন ? আমি বললাম, কাল রাতে , লোকটা একক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো, সন্ধ্যা ৭ টাকা,রাত্রি ৯ টা ও ১০।৪৫ কোনটা দিবো ?
আমি ভাবনায় পরে গেলাম কোনটা নিবো ? অবশেষে বললাম, ১০।৪৫ দিন ।
লোকটা আবার বলল, এসি 788 টাকা, স্নিগ্ধা 656 টাকা, এসি বার্থ 1179 টাকা। কোনটা দিবো ?
আমি যেন ভাবনায় পরে গেলাম, কোনটা নিবো বুঝতে পারছি না । এর আগে একবার ট্রেনের টিকিট কাটতে এসে ভোর বেলায় লাইনে দাড়িয়ে নন এসি টিকিট নিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম , এখন তো দেখি ভিন্ন অবস্থা ।
আমি বললাম, "এসি বার্থ" দুটো । যাবার কথা একা কিন্তু টিকিটের এই সহজ প্রাপ্তি আমাকে অস্থির করে তুলল , অতি উত্তেজনা নীরা'র জন্যও একটা টিকিট কেটে ফেলতে ইচ্ছে করলো ।
ভদ্রলোক কিছুক্ষণ কম্পিউটারের বোতাম টিপাটিপি করে আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন, "দিন,আপনাদের এনআইডির ফটোকপি দিন । " আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম , থতোমতো খেয়ে বললাম , ভাই এনআইডি তো সাথে নেই ।
তাহলে টিকিট দেওয়া যাবে না ।
আমি বললাম , মোবাইলে আছে, দেখেন ।
সম্ভব না ভাই , আপনি প্রিন্ট করে নিয়ে আসেন । আমার পেছনে লাইনে দাড়িয়ে থাকা একজন বলল, রাস্তার ওপাশের দোকান থেকে প্রিন্ট করা যায় নিয়ে আসুন । কাউন্টারের লোকটা বলল, নিয়ে আসুন চিন্তার কিছু নেই । মিনিট বিশেকের মধ্যে । দুটো টিকেট কেটে মনের আনন্দে বাসায় ফিরে এলাম । টিকিট কাউন্টার ত্যাগ করার আগে একজন বলল, এনআডির ফটোকপি সাথে রাখবেন । ট্রেনে চেক করা হবে । না দেখাতে পারলে জরিমানা করবে । ধন্যবাদ রেল কর্তৃপক্ষ । ধন্যবাদ নতুন নিয়ম ।
দু:খের বিষয় যাত্রীদের টিকিট প্রাপ্তির এই সহজ সিস্টেমটি পছন্দ করতে পারছে না একটা শ্রেণি । তারা এর বিরুদ্ধে জাতিয় দৈনিকগুলোতে লিখে যাচ্ছে । এর ফলে নাকি টিকিট বেচা কমে যাচ্ছে । এতে রেল ও সরকার নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । ভাবুন একবার যেখানে এতো বছরের দুনীতি,অনিয়ম,কালোবাজারির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে সেখানে ওই শ্রেণীটা এর বিরুদ্ধে পরে লেগে সেই কালোবাজারিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ।
দুই
মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণে আসছে নতুন নীতিমালা । "পরিবহন বিভাগের যুগ্ম সচিব আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি ‘মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩’ এর খসড়া তৈরি করেছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাজধানীতে মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চালানো যাবে না। ঈদ ও উৎসবের সময় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। "
জনগনের নিরাপত্তার জন্য নতুন নিয়ম করা হচ্ছে ভালো কথা । কিন্তু কথা হচ্ছে, একটি বাইকের গতি কত ? ১০০ সিসির নিচে কোন বাইক বাংলাদেশে চলে না । অবৈধ ভাবে চলাচলরত মোটর লাগানো একটি রিকশা কত গতিতে চলে ? সে খবর সচিব সাহেবের জানার কথা নয় । কারণ তিনি চলেন সরকারী গাড়িতে । ওনার সময়ের মূল্য অনেক তাই ওনার গাড়ির জন্য গতির প্রয়োজন । জনগন আস্তে আস্তে চললেও চলবে ।
বাইক যাত্রী পরিবহনের জন্য নয় । কিন্তু উবার, পাঠাও নামে বাইকে দেদারসে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে । সারা বাংলাদেশ থেকে বাইক এসে জড়ো হয়েছে ঢাকার রাস্তায় । একদিকে বড় লোকদের গাড়ির চাপ অন্যদিকে দুই চাকার রিকসা অর্থাৎ বাইকের চাপ । মাঝখানে চেপটা জনগণ । মোটরসাইকেলে নিকট আত্মীয়,যেমন বাবা,মা,স্ত্রী,সন্তান ছাড়া সকল প্রকার যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে হবে । এক জেলায় রেজিস্টেশন করা বাইক অন্য জেলায় চলতে পারবে না ।
দেশের পরিবহন খাতে শৃঙ্খলার জন্য চাই, "যথাযথ পরিকল্পনা ও আইনের প্রয়োগ । " বাইকের গতির নিয়ন্ত্রণ বা বেঁধে না দিয়ে উচিত বাইক নিয়ন্ত্রণ করা । প্রশাসন কঠোর হলে জনগণ আইন মানতে বাধ্য । এক জেলায় রেজিস্ট্রেশন করা বাইকে অন্য জেলায় চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত । রেজিস্ট্রেশন দেওয়া ক্ষেত্রে স্থায়ী বসবাসের প্রমাণপত্র চাওয়া যেতে পারে । শুধু তাই নয় , রাস্তা যানজট কমাতে, রাস্তাগুলোকে ভিআইপি ফ্রি করতে হবে । অফিস টাইমে , নো ভিআইপি । নো রিকশা, বাইকে নো যাত্রী পরিবহণ । তাহলেই ঢাকা শহরের জান জট অনেকটা কমে আসবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৫