৪র্থ পর্বের লিংক: Click This Link
.
সাড়ে এগারোটা বাজে – আমি আসছি না। শাহানা একটু অস্থিরতা অনুভব করে। আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পায়। ভাবে, হয়তো চার্জ শেষ হয়ে গেছে। কোন যেন ওর মনে প্রায় উনশি বছর আগের স্মৃতি মনে পড়ে। তখন আমি লালমাটিয়ায়, নিউ কলোনী মাঠের পাশে একটা অফিসে চাকরি করি। থাকতাম মিরপুর ১২-তে। অফিস থেকে ফেরার পথে অনেক সময়ই আসাদ গেট থেকে বাস পেতাম না। তাই বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে স্কুটারে শেয়ারে আসতাম। এমনি একদিন স্কুটারে আসার সময় ছিনতাইয়ের মুখে পড়ি। তখন মাদকের আখড়া বলে পরিচিত বিনপি বস্তির কাছে এসে ওরা দু’পাশ থেকে দু’জন আমাকে চেপে ধরে। সমানের সিটের একজন পিস্তল বের করে চিৎকার দিতে মানা করে। একজন ক্রমাগত আমার বুকে ঘুষি মারতে থাকে। আমি নিজের অজান্তেই “লা ইলাহা ইল্লাহ্” জোরে জোরে পড়তে থাকি। ওদের একজন আমার চোখের চশমা খুলে চোখে কী যেন লাগিয়ে দেয়্। চোখ জ্বলতে থাকে। ওরা সোজা না যেয়ে একটা ইউ টার্ন নিয়ে আবার শ্যামলী শিশু-মেলার দিকে যেতে থাকে- ধীরে ধীরে। আমার ঘড়ি, মানিব্যাগ সব নিয়ে নেয়। তারপর একটা অন্ধকার জায়গায় নামিয়ে দেয় । পিছন থেকে হুমকি দেয়, চিৎকার করলে গুলি করবে।
.
পরে বুঝতে পারি, শুকনো মরিচের গুঁড়ো চোখে ডলে দিয়েছিল। বাসায় ফিরে অনেকক্ষণ পানি দিয়ে চোখ ধুই। আশঙ্কায় ছিলাম চোখে কোন সমস্যা হয় কি-না। আস্তে আস্তে চোখের লাল কেটে যায়। সেদিন স্কুটারে ওঠার সময় আমি এক সাইডে বসেছিলাম। পরে আর একজন এসে আমাকে মাঝখানে বসতে বলে- সে নাকি শেওড়া পাড়া নেমে যাবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি মাঝখানে বসি।
.
ঘটনার এখানেই শেষ না। এর দিন পনেরো পরের কথা। কোন বাসে ওঠতে না পেরে শেয়ারের স্কুটারের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। একটা স্কুটারে তখন একটা সিট বাকী – ডান দিকে। আমি গিয়ে ওঠলাম। স্কটারটা স্টার্ট নিচ্ছে। এমন সময় বাম দিকের যাত্রী নেমে গেল। আর তখনি আর এক যাত্রী আমার দিক দিয়ে ওঠতে চাইলে। মাঝখানের জন তখন বাম দিকে সরে গেছে। আমি বাধ্য হয়ে সরে বসলাম। শিশু-মেলা দিয়ে আগার গাঁও রোডে ঢুকে আবার সেই একই দৃশ্যের অবতারণা। এবার আমি শান্ত থাকলাম। ঘড়ি তখনো কিনি নি। তাই টাকা ছাড়া আর কিছু পেল না। আমার এই গরিবী হাল দেখে তারা আমার উপর বেশ গেস্বা হলো। আমি সবিনয়ে তাদের জানালাম, আমি খুব সামান্য বেতনের একটা চাকরি করি। দিন আনি, দিন খাই। তারা দয়া পরবশ হয়ে লাল দ্রব্য দিয়ে আমার চোখ রাঙানো থেকে বিরত থাকল। আমার হাতে কিছু টাকা গুচে দিয়ে অন্ধকার রাস্তায় নামিয়ে দিল-যেন আমি বাসায় যেতে পারি। উনাদের দয়ার শরীর।
.
এই সব পুরনো ঘটনা ভাবতে ভাবতে শাহানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আরো উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে। ঘড়িতে তখন প্রায় বারোটা বাজে। আমার মোবাইলে ফোন করে। মোবাইলে রিং হচ্ছে। একজন অপরিচিত লোক ফোনের অপর প্রান্তে। শাহানা জানতে চায়, আপনার কাছে মোবাইলটা আসল কী ভাবে? লোকটা বলে, আমি মোবাইলটা আঙ্কেলের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি। শাহানা ভয় পেয়ে যায়। তবে কী আমাকে আটকে রেখে টাকা দাবী করবে? ও ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে, মানুষটা এখন কোথায়? লোকটা বলে, আমি উনাকে শাহবাগ থেকে ফলো করি। তারপর শাহবাগে মোবাইলটা কেড়ে নেই। পুলিশ আমাকে জেলে পাঠায় । জেল থেকে ফিরে আমি কোন কাজ পাচ্ছি না। তাই আঙ্কেলের মোবাইলটা কেড়ে নেই। আঙ্কেলকে বলবেন, আমাকে ক্ষমা করে দিতে। তারপর ফোনের লাইনটা কেটে দেয়।
শাহানা অস্থির হয়ে আবারও ফোন দেয়। কিন্তু ফোনটা আর বাজে না।
অসহায় শাহানা পাশের বাসার ভাবীকে ডাকে। ভাই-ভাবীকে ঘটনা জানায়। ভাগ্নীকেও ফোন দিয়ে ঘটনা জানায়।
.
আমি অক্ষত অবস্থায় বাসায় ফিরায় ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। ওর ভাগ্নীকে ফোন দিয়ে জানায়, তোর আসা লাগবে না। তোর খালু এই মাত্র বাসায় ফিরল। তবে ওর মোবাইলটা ছিনতাই হয়ে গেছে।
.
ঘরে এসে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করি। শাহানাও আমাকে সাহায্য করে। আমার মোবাইলে পাসওয়ার্ড দেওয়া ছিল। ছিনতাইকারী মোবাইলটা বন্ধ ও খুলতে পারছে। তার মানে ও আমার পাসওয়ার্ড ভেঙ্গে ফেলেছে। আমি শাহানার মোবাইল থেকে আমার মোবাইলে ফোন দেই। ওটা আর বাজছে না। আমার মোবাইল থেকে দেশের বাইরে ফোন করা যায়। ছিনতাইকারী যদি সেটা করে আমার বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি নম্বরটা ব্লক করার জন্য অফিসের সহকর্মীর সাহায্য নেই। ওর সাথে গ্রামীন ফোনের ভালো পরিচয় আছে। এতো রাতেও ওর সাহায্য পেয়ে কৃতজ্ঞ বোধ করি।
.
ছেলে কক্সবাজার থেকে ফোন করলে আমার ফোন বন্ধ পাবে। তাই শাহানা ওকে ফোন করে সংক্ষেপে ঘটনাটা জানায়। ছেলে ওর মাকে বলে,মোবাইলের আইএমইআই নম্বর দিয়ে পুলিশকে জানাতে। শাহানা আমার মোবাইলের প্যাকেটটা বের করে। হ্যাঁ, আইএমইআই নম্বরটা পাওয়া গেল। রাত প্রায় দেড়টা বাজে। আমি এশার নামাজটা পড়ে শুয়ে পড়লাম। মনে মনে একটা আশা তখনো জেগে আছে। মোবাইলটা কী কোন ভাবে ফেরত পাব?
.
চলবে...
মো. শামছুল ইসলাম
২০ এপ্রিল ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৭:৫৪