আমি সাধারণতঃ পড়তে খুব ভালোবাসি। উপন্যাস, গল্প, রহস্য উপন্যাস, বিভিন্ন আলোচনা এগুলো বেশী পড়ি। সুলতানা রুবি, একজন উদীয়মান লেখক। তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন এবং নিজের টাকা দিয়ে প্রকাশ করেছেন। তিনি আমার বই পড়ার বিষয়টি জানেন। তাই একদিন তার লেখা সমস্ত বই আমার কাছে নিয়ে এলেন। আমাকে পড়তে দিলেন। আমি ভেবেছি যে তিনি আমাকে সৌজন্য কপি দিয়েছেন। কিন্তু কথা প্রসঙ্গে বললেন যে তার লেখা গল্পের বই সাধারণতঃ কেউ কেনে না। তিনি বিতরণ করেন, কেউ যদি টাকা দেন তাহলে খুশী হয়ে নেন। আমার একটু খারাপ লাগলো। আসলে বইগুলির দাম দেয়ার ক্ষমতা আমার ছিল না। তাই আমি কিছু বলতে পারলাম না। তবে বললাম যদি বই গুলি পড়ে আমার ভালো লাগে তাহলে এর সমালোচনা লিখে দেব। উনি একটু খুশি হলেন। আমি বই গুলি পড়তে বসলাম। আমার ভালো লাগলো। পড়ার নেশায় পেয়ে বসলো। আমার অন্য সকল কাজ বাদ দিয়ে পড়তে থাকলাম। বইগুলি পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি পড়ে গেলাম। অর্থাৎ আমার মনযোগ ধরে রাখলো। আমার ভালো লাগলো। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি এই বইগুলি সম্পর্কে লিখবো। আজ আমার সেই কথা রাখতে বসেছি।আজকে আমি যে বইটি নিয়ে লিখছি তার নাম হলোঃ "জমিনে ভালোবাসা হিমালয়ে ভালোবাসা"। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। প্রকাশ করেছেন রামশংকর দেবনাথ-এর বিভাস নামক প্রতিষ্ঠান। প্রকাশকাল ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০১০। একুশে বইমেলা উপলক্ষ্য প্রকাশিত।
বইটি একটি প্রেমের গল্প। একটি মাতৃ হারা কিশোরী মেয়ে ছবি তার বাবা এবং ফুপুর কাছে বড় হচ্ছে। বাবা সেনাবাহিনিতে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরী করতেন। ছবির মা মারা যাওয়ার পর চাকরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে গ্রামে এসে একটি ওষুধ ও মুদিপণ্যের দোকান দিয়েছেন। পাশাপাশী নিজের ডাক্তারী চালিয়ে যাচ্ছেন। আর নায়ক হলো মিঠু। তার বাবা মারা গেছে। সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ছবি মিঠুকে ভালবাসে। তাকে বিয়ে করতে চায়। মিঠুর মা ও ছবিকে ভালবাসে এবং বউ করতে চায়। কিন্তু মিঠু ইউনিভার্সিটির একটি মেয়ের ফাঁদে পা দেয় এবং বিয়ে করে। ছবি মিঠুর মা সকলের মনের আশা ভেঙ্গে যায়। বইটিতে আরও কয়েকটি চরিত্র আছে। যেমনঃ মিঠুর মা, পাখি ছবির বান্ধবী লেখাপড়া করে, পাখির মা একজন গৃহিনী, পাখির বাবা কেরামত একজন সম্পন্ন গৃহস্থ, তবে তার মানসিকতা নেতিবাচক। গ্রামে কিছু মানুষ থাকে যারা সবসময় প্রতিবেশীর সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে, নিজের প্রাধান্য বিস্তার করে। তবে তার স্বভাব গ্রামের সবাই জানে তাই কেউ তার কথায় বিভ্রান্ত হয় না, সাবধান থাকে। গল্পের এই জায়গাটি আমার ভালো লাগে। কারণ ইদানিংকার গল্পে নেতিবাচক চরিত্রগুলি এত শক্তিশালী থাকে এবং প্রাধান্য বিস্তার করে যে তার সামনে ইতিবাচক শক্তিগুলি খুবই দুর্বল থাকে। তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। মানুষ খুব কষ্ট পায়। কাল্পনিক জগৎটাকে মানুষ একটি আদর্শ অবস্থান হিসাবে বিবেচনা করে। একজন মানুষ একটি সমাজ পরিচালিত হয় বুদ্ধিজীবি মানুষের কাল্পনিক জগতের উপর ভিত্তি করে। আমরা যদি রুপকথার দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে সে সময়টা যন্ত্রনির্ভর ছিলনা। তখন মানুষ চলাচলের জন্য পা, গরুগাড়ী, নৌকা ব্যবহার করতো। আকাশে উড়তে পারতো না। মানুষ উড়তে চাইতো। তাই লেখক তার গল্পে উড়ন ঝুঁড়ি, উড়ন্ত কার্পেট, পাখা ওয়ালা বিশাল বিশাল পাখী ইত্যাদির কথা গল্পে লিখতো। বৈজ্ঞানিকরা কবি বা লেখকের সেই গল্পকে উপজীব্য করেই আবিস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যেত। এভাবেই আমরা আজ উড়োজাহাজ রকেট পেয়েছে। নজরুলের লেখা সেই বিখ্যাত কবিতার পংতিটি হলো "গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরছে মানুষ কেমন করে" আজ সেই পংতিটি সত্যে পরিণত হয়েছে। আমরা জানি সমাজের মনস্তত্ব তৈরীতে লেখকের লেখনী একটি শক্তিশালী এবং গুরুত্ব পুর্ণ ভুমিকা রাখে। সুলতানা রুবি কেরামতের চরিত্রটিতে বুঝিয়েছেন যে, সমাজে খারাপ চিন্তার মানুষ থাকতেই পারে কিন্তু তাকে আমরা গুরুত্ব না দিলে পারি, তার কথায় বিভ্রান্ত না হতে পারি,বরং সাবধান থেকে তাকে আমরা শোধরাতে পারি, একটা সুন্দর মনের মানুষ হিসাবে তৈরী করতে পারি। এই উপন্যাসে তিনি আমাদের নারীর চিরন্তন যে সমস্যা, দ্বন্দ্ব, নারীর প্রতি শোষণ সবই তুলে এনেছেন দক্ষতার সাথে। এমনকি একজন নারী হয়ে অন্য নারীকে কিভাবে সমস্যায় ফেলে দেয় তাও তুলে এনেছেন। ভগ্নিপতি কিভাবে ছোট শ্যালিকাকে যৌন নির্যাতন করে সে বিষয়টিও এনেছেন। তার শব্দচয়ন, বাক্যগঠন সবই বেশসাবলীল ও শক্তিশালী। কথপোকথনে তিনি আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন। তবে কিছু বানান ভুল আছে। তার লেখনীকে আরও শাণিত করতে হবে। প্রচুর বই পড়তে হবে। গল্পের উপজীব্য নির্বাচনে আরও সতর্ক হতে হবে। আমি আশা করবো তিনি তাঁর প্রচেষ্টা অব্যহত রাখবেন। আর পাঠকেরা তার বইগুলি কিনে পড়বেন। তাকে উৎাহিত করবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





