ছুডু বেলায় আড় চোখেও কোন পোলার দিকে তাকানো সাহস হয় নাই। কারণ আমার বাবার ছিল তিনখানা রেডী বন্দুক। একখানা টুটুবোর রাইফেল, যেটা কয়দিন পরপরই বাবা অতি যত্ন সহকারে ধোওয়া মোছা করতেন। একটা দুইনলা বন্দুক পাখি শিকারের জন্য আর একটা ছিল সুইট জোসিলা মার্কা ছোট্ট পিস্তল। তিনটাই আবার লাইসেন্স করা।
তো বাপ আমার বেশী কথার মানুষ ছিলেন না। একটু কিছু হইলেই, হুমকি ধামকি দিতেন-"বন্দুক দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলবো। এইসব ছেলেমেয়ে আমার দরকার নাই। দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।" তো ফলাফল যেটা দাঁড়ালো, কোন কুতুবেরই সাহস ছিল না আমার দিকে ফিরে তাকায় আর আমি যে কারো দিকে তাকাব, আমি কোন ছার!
ফলাফল হইল গিয়া কলেজে উঠতে উঠতে মোটামুটি চেহারায় কলাগাছ মার্কা ছাপ পড়ে গেল। সুযোগের অভাবে চরিত্রবান হইয়া কোন ছেলের দিকে তাকাই না।
কলেজে আমি যে হোস্টেলে পড়তাম, সেটি ছিল একভাগ মেয়েদের আর তিনভাগ ছেলে হোস্টেল দ্বারা পরিবেষ্টিত।
একদিন রাস্তা দিয়া হাঁটতাছি মানে কলেজ যাইতেসি, তো এক পোলা আরেক পোলারে কয়, এই মাইয়ার দিকে তাকাস না এর লগে প্রেম করা আর কলা গাছের সাথে প্রেম করা একই কথা। কি অপমান!
কি আর করা? এই কলাগাছ খেতাব নিয়া দিন রাত কাটাই। আমার বান্ধবীরা আমার চোখের সামনে দিয়া ইটিস পিটিস করে।
তারপর কলেজ ছাইড়া যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম, তখন আমার এক বান্ধবী জুটলো। সে ছিল আবার নায়িকার মত সুন্দরী আর আমি হের লগে ঘুরতে ঘুরতে এক্সট্রা হয়ে গেলাম। সুন্দরী বান্ধবীর সখী হওয়ার অনেক হ্যাপা।
তারপর ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত আমারে বসায় রাইখা, হেরা দূরে বইসা গফসফ করতো।
মাঝে মইধ্যে অবশ্য ছিঃনেমার এক্সট্রাদের মত যে এক্সট্রা ফেভার পাই নাই তা বলা যাবে না।
যেমনঃ একবার নায়িকা গান গাবে, ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই হইল নায়িকার দিওয়ানা। যাকির ভাই আবার কলচারাল প্রোগ্রামের হেড, তো সেখানে নায়িকা মধ্যমনি। সে গান গাইবে। যাকির ভাই নায়িকার সখী হিসেবে আমারে দিল উপস্থাপনার দায়িত্ব। এইরকম আর কি?
সেই আমি এইরকম করে প্রায় পার করে দিলাম, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ব ছাড়ব -এই সময় নায়িকার বদৌলতে এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয়। সেই বড় ভাই আবার একবার পরিচয় করিয়ে দিলেন, তার এক বন্ধুর সাথে।
সেই বন্ধুরে রাস্তাঘাটে দেখলে চিকন করে সালাম দেই। "স্লামালেকুম ভাইয়া।"
তারপর পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে যখন চাকরিতে ঢুকলাম তখন সেই চিকন সালাম নেওয়া বড়ভাই বেহুদাই একদিন দুইদিন খোঁজ নেয়, মাঝে মধ্যে কোন কারণ ছাড়াই দেখা করতে ডাকে।
অবস্থা এই দাঁড়ালো যে, আমার মত কলাগাছের যেহেতু বেহুদাই খোঁজ নিল--- সেহেতু সেই ভাইরে আমার মনে ধরল।
তাই একদিন তারে কইলাম, দেখেন বিয়া করলে করেন নাইলে অফ যান। খামোকা এই আপনার লগে ঘোরাঘুরি করতে পারব না।
"ভয় কাতুরে মাহবুব আজ ভীষন সাহসী টাইপের অবস্থা।"
তো সে কতক্ষণ থম ধইরা বল্লো, আমারে সাত দিন সময় দাও ভাইবা দেখি।
সাতদিন পরে কারে দিয়া যেন খবর দিল। গেলাম দেখা করতে। একটু ভাব ধরে বল্লাম ডাকছেন কেন? তার প্রথম ডায়ালগ ছিল, -- "আমাদের প্রেমটা মনে হয় হয়েই গেল।"
তারপর দুজনের বাংলা ছিঃনেমা টাইপের কুইক প্রেম সেলিব্রেট করতে আমরা চল্লাম শাহবাগের সিলভানায়।
নাস্তা করলাম, গরম পরোটা, ঝোল ঝোল ঝাল ঝাল চিকেন আর পাইলট চা দিয়ে।
আমাদের ডেটিং ছিল, অফিস শেষে মাঝে সাঝে একটু দেখা আর আজিজে ঘোরাঘুরি করা।
তারপর প্রেম পোক্ত না হইতেই, ঘটনায় চক্কর লাগলো। বাড়িতে একখান বিয়ার কথা পাকাপাকি প্রায়। আমি ঝেড়ে কাশলাম যে, আমার একখান পছন্দ আছে।
বাপ হুন্কার দিল 'খবর্দার'। কিন্তু গলায় কেমন মিনমিনে ভাব। আগের তেজ আর নাই।
আমি তেনারে খবর দিলাম।
সে ইন্টারভিউ দিতে আসলো। সোজাসুজি নাকি বলেছিল, "আমি ছেলে ভালো কিন্তু তিন হাজার টাকা বেতন পাই। ভবিষ্যতে হয়তো কিছু করতে পারবো। এই অবস্থায় মেয়ে বিয়ে দিবেন কিনা, আপনার বিবেচনা।"
আমার কঠিন বাপ নাকি আধশোয়া ছিলেন, এই কথা শুনে নড়েচড়ে উঠে বসলেন। (আমার ধারণা এইটা গুল আমার তিনি আমারে চাপা পিটাইছে।কারণ আমি তখন সীনে নাই।)
যাই হোক বাংলা ছিঃনেমার জরিনার বাপ, তিন হাজার টাকার বেকার নায়কের সাথে তিনমাসের মাথায় মিল করাইয়া দিল।
ট্যানট্যানা ট্যান বাদ্য বাজলো।
বাংলা ছিঃনেমা শেষ।
অতঃপর তাহারা lived happily ever after.
শুধু বিবাহের পরে সে নিজেরে বিরাট হতভাগা মনে করে... কারণ বিবাহের পরে আমি যে কি জিনিষ তিনি হারে হারে টের পাইছেন, আর কি?
এখন তার লাইফের জীবনটা দারুণ সাউণ্ড। কারণ আমি তারে একটা দারুণ সাউণ্ড লাইফ উপহার দিয়েছি।
তারে আমি সব সময় ৮০% সাউণ্ড আর ২০% উপদেশের মধ্যে রাখি।
এবং এভাবেই আমরা, মানে জরিনা এবং জরিনার তিনি গত ১০ বছর এক সঙ্গে হাসাহাসি করে পাশাপাশি আছি।
হাসাহাসি মানে হইল গিয়া আমি জিনিষ ছুঁড়ে মারলে আমি যদি মিস করি, তাহলে সে হাসে। আর সে মিস করলে আমি হাসি।
জরিনা আর তেনার জন্য দোওয়া কইরেন গো ভাইজান, আফারা।
বিঃ দ্রঃ এই লেখা খারাপ লাগলে রামুর দোষ। ঐ কাল আমাকে প্ররোচিত কর্সে এইটা লিখতে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




