
আমি তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি আর পারু আপা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে।
আমাদের বাসার পাশের বাসায় পারু আপারা ভাড়া থাকতেন।পারু আপা দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দরী ছিলেন।তার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকতো।তার কথা বলা তার হাসি আমার ভীষণ ভালো লাগতো।
তাদের পরিবারের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক থাকায় তাদের বাসায় আমাদের এবং আমাদের বাসায় তাদের হরহামেশাই যাতায়াত ছিলো।
আপু গণিতে বেশ পারদর্শী ছিলেন আর অন্যদিকে আমার গণিতের স্কিল এতো ভালো ছিলো যে বুদ্ধি হবার পর ম্যাট্রিক ব্যতীত কোনোদিন গণিতে পাশ করেছিলাম বলে মনে পড়েনা। যেবার আমি ম্যাট্রিক দেই গণিত পরীক্ষার পরবর্তী সময়ে আমাদের গণিতের টিচার আমাদের সাথে দেখা করতে যান পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে। উনি গিয়েই প্রথমে আমাকে জিজ্ঞেস করেন এই শাওন পরীক্ষা কেমন হয়েছে? আমি বললাম আলহামদুলিল্লাহ ভালো পাশ করব। আমার উত্তর শুনে স্যার বললেন তাহলে আর বাকিদের জিজ্ঞেস করলাম না তাদের পরীক্ষা কেমন হয়েছে। এই ছিলো আমার গণিত স্কিল!
আমি মাঝেমাঝেই গণিত বুঝতে পারু আপার কাছে যেতাম।
সে যখন আমাকে গণিত বুঝাতো আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।আমার চোখের দিকে তার চোখ পড়তেই আমার মাথায় ছোট্ট করে একটা থাপ্পড় দিয়ে হেঁসে বলতেন কিরে বাঁদড়?গণিত বুঝা রেখে কি দেখছিস?
আমি কিছুনা সূচক মাথা নাড়তাম।পারু আপা যখন ছাদে আসতেন আমিও আমাদের বাসার ছাদে চলে যেতাম।লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখতাম কিন্তু তারপরো তার কাছে ধরা পড়ে যেতাম।
সে আমাকে দেখেই হেসে দিয়ে বলতেন কিরে?এখানে কি? যা পড়তে বস।আমিও বাধ্য ছেলের মত চলে আসতাম।
পড়তে বসেই আমার বইয়ের পাতায় পাতায় তার নাম লিখে ভরে ফেলতাম।
একদিন সকালে পারু আপার মা এসে আমাদের ইনভাইট করে গেলেন, বললেন আগামীকাল পারুর জন্মদিন!
আমি তার জন্মদিনে তাকে টিফিনের টাকা বাঁচানো টাকা থেকে কয়েকটা লাল গোলাপ আর একটা চিরকুট দিয়ে চলে এলাম।(সিনেমা দেখে শিখেছিলাম ভালোবাসলে লাল গোলাপ দিতে হয়) চিরকুটে লিখা ছিলো আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।
চিঠি আর গোলাপ দিয়ে এসে আমি বাধ্য ছেলের মতো পড়ার টেবিলে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর পারু আপা আমাদের বাসায় এসে হাজির! নিশ্চয়ই চিরকুট টা পড়েছে! ভয়ে আমি খাটের নিচে লুকাবো না রুম থেকে ভো দৌড় দিয়ে বের হয়ে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। এসব ভাবতে ভাবতেই পারু আপা আমার রুমে ঢুকলেন আর আমাকে বল্লেন আরে পাগল ছেলে! তুই এখনো অনেক ছোট।
আগে লেখাপড়া করে বড় হয়ে উঠ।তারপর আমার থেকেও সুন্দরী মেয়েদের সাথে প্রেম করতে পারবি।আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুই বলতে পারলাম না।এর কিছুদিন পর পারু আপার বিয়ে হয়ে গেলো।আমাদের বাসার সবাই দাওয়াত খেতে গেলেও আমি যাইনি।সারাদিন বাসায় বসে কেঁদেছিলাম।
আমি ছেলেটা এখন যথেষ্ট বড় হয়েছি।কিন্তু পারু আপাকে আজো ভুলতে পারেনি!
বাসা বদল হবার কারণে আমি আর আমার পারু আপাকে খুঁজে পাইনি।
শহরের অলিতে গলিতে এমন কতশত হারানোর গল্প হারিয়ে যায় তার হিসেব কে রাখে!
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




