somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

হাসি বিড়ম্বনা

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাসির অলৌকিক এক ক্ষমতা আছে, যা দিয়ে খুব সহজেই মানুষ কে মোহিত করা যায়। যারা ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে অনরগল কথা বলতে পারেন তাদের কথা অন্যরা মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে। হাসি দিয়ে নাকি চাইলে বিশ্ব জয় করাও সম্ভব কিন্তু এই কথাটা আমার জন্য ঠিক প্রযোজ্য নয়। কারণ সেই ছেলেবেলা থেকেই আমি আমার হাসি নিয়ে নানাভাবে বিড়ম্বনায় পড়েছি। যেখানে অন্যের হাসির শব্দে মানুষের কানে প্রশান্তি জাগাতো সেখানে আমার হাসির শব্দে মানুষের পিলে চমকে যেতো।

আমার যখন কোনো কারণে খুব হাসি পায় তখন আমি কোথায় আছি, কি করছি এসব বেমালুম ভুলে বিকট শব্দে হো হো করে হাসতে থাকি। আমার বিশ্বাস তখন যদি আমার আশেপাশে আলিফ লায়লার জীনের বাদশা থাকে সেও আমার হাসির শব্দ শুনে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পগারপার। এই কারণেই হয়তো ছেলেবেলায় আমার দাদা বলতেন আমি নাকি ইবলিশের মতো শব্দ করে হাসি। আমি জানিনা, জীবদ্দশায় কখনো আমার দাদার সাথে ইবলিশের দেখা হয়েছিলো কিনা তবে আমি এটা নিশ্চিত যে তিনি সরাসরি ইবলিশের হাসির শব্দ না শুনলেও আমার হাসির শব্দ শুনে আন্দাজ করেছেন ইবলিশ মনে হয় এভাবেই হাসে।

আমি যখন বোর্ডিং স্কুলে পড়তাম তখন আমার রুমমেটদের মধ্যে আমার হাসি নিয়ে বেশ আতঙ্ক ছিলো। তারা সবসময় ভয়ে থাকতো এই বুঝি আমি হেসে উঠি। বিশেষ করে রাতের বেলায় তাদের এই আতঙ্ক বেশি কাজ করতো। আমি যে রুমে থাকতাম তার ঠিক এক রুম পরেই আমাদের গাইড টিচারের রুম ছিলো। পড়াশোনা শেষে রাতে যখন আমাদের গাইড টিচার আমাদের ঘুমানোর জন্য তাগাদা দিয়ে নিজে ঘুমতে যেতেন তখন আমরা জেগে উঠতাম। সারাদিনের জমিয়ে রাখা খাটাস কাজ-কারবার গুলো তখন করতাম। আর এসব করার মধ্যে যদি কারো কোনো কাজ আমার হাসির কারণ হতো তখন আমি সহ সবার পশ্চাৎদেশ লাল হতো। কারণ আমার পিলে চমকানো হাসি রাতের নিরবতার সাথে বিদ্রহ ঘোষণা করে আরও বিদঘুটে হয়ে যেতো। আমার হাসির শব্দ শুনে পাশের রুমে থাকা গাইড টিচার দুঃস্বপ্ন দেখেছেন ভেবে ঘুম থেকে উঠে এসে আমাদের পশ্চাৎদেশে জোড়া বেতের আঁকিবুঁকি করতেন। মাঝেমধ্যেই অধিকতর সতর্কতা অবল্বনে তারা আমার মুখ চেপে রেখে হাসির কথা বলতো বা কাজ করতো যাতে করে স্যার আমার হাসির শব্দ শুনতে না পায়।

আমার এক বান্ধবী ছিলো ওরও আমার মতো হাসির ব্যমো ছিলো। আমরা একে অন্যকে ভালো বুঝতে পারতাম। আমার মন খারাপ থাকলে মাঝেমধ্যেই আমি আয়োজন করে হাসবার জন্য ওদের বাসায় যেতাম। তারপর বিভিন্ন হাসির ঘটনা নিয়ে আমরা হো হো করে হাসতাম। আমরা দুজন যখন একসাথে গলা মিলিয়ে হাসতাম তখন মনে হতো জীনের বাদশা আর মালেকা-হামিরা একসাথে হাসছে। আমাদের এমন জঘন্য হাসির শব্দ আর আর অঙ্গ-ভঙ্গি দেখে আমার বান্ধবীর আপু আমাদের বলতো তোদের এই জীবনে বিয়ে-সাধি হবেনা। মানুষ ভাববে তোদের মধ্যে কিছু একটা আছে। যদিও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। আমরা একসাথে প্রাইভেটে যেতাম আর সারা রাস্তা, ক্লাসরুম সব খানেই এমন করে হাসতাম। ওর অদ্ভুত এক গুণ ছিলো ও খুব সহজেই মানুষের কথা ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নকল করতে পারতো। দেখা যেতো রাস্তায় হাঁটছি এমন সময় ওর এরকম কিছু মনে হয়েছে, তখন আমরা জস্ট ভুলে যেতাম আমরা রাস্তায় আছি। রাস্তায় দাঁড়িয়েই ও অভিনয় করে দেখাতো, ওর অভিনয় দেখতাম আর দুজন মিলে হো হো করে হাসতাম। রাস্তার মানুষজন আমাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে পাগল ভেবে চলে যেতেন। আমরা মানুষের এমন আচরণ দেখে আরও জোরে শব্দ করে হাসতাম। ওর সাথে আমার অনেক স্মৃতি, আমরা বৃষ্টির দিনে আজাইরাই প্রাইভেট থেকে ফেরার পথে রাজপথ দিয়ে ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরতাম, রিক্সা করে ঘুরতাম, শহরের এ গলি ও গলি হেঁটে বেড়াতাম, এখানে সেখানে এটা সেটা খেতাম। হাসির কথা লিখতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। লিখছি আর ভাবছি ওর নাম্বার জোগাড় করে ওর সাথে কথা বলতে হবে।

তো যা বলছিলাম, আমার এই হাসির ব্যমো আমাকে বেশ বিড়ম্বনায় ফেলেছে। ক্লাসের সবচেয়ে বদমেজাজি স্যরের সামনেও হেসে উঠতাম আমি এবং এটা আরও ভয়ানক রূপ নিতো যখন শত চেষ্টায় হাসি আটকে রাখতে ব্যর্থ হতাম। তবে এখন আমার হাসির মাত্রা অনেক কমে গিয়েছে। এখন খুব একটা শব্দ করে হাসা হয় না মাঝেমধ্যে বাসায় শব্দ করে হাসলে ভাবি বলেন ভিলেনের মতো করে হাসি। তখন মনে হয় আমার পদন্নতি হয়েছে ইবলিশ থেকে ভিলেন হতে পেরেছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, ঘুরেফিরে সেই নেগেটিভ রোলের মধ্যেই আটকে আছি। ছেলেবেলায় আমাদের পাঠ্য বইয়ে একটা ছড়া ছিলো এরকম,

হাসতে নাকি জানেনা কেউ
কে বলেছে ভাই?
এই শোন না কত হাসির
খবর বলে যাই।

খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে
চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে

কাজল বিলে শাপলা হাসে
হাসে সবুজ ঘাস।
খলসে মাছের হাসি দেখে
হাসে পাতিহাঁস।

টিয়ে হাসে, রাঙ্গা ঠোঁটে,
ফিঙ্গের মুখেও হাসি ফোটে

দোয়েল কোয়েল ময়না শ্যামা
হাসতে সবাই চায়
বোয়াল মাছের দেখলে হাসি
পিলে চমকে যায়।

এত হাসি দেখেও যারা
গোমড়া মুখে চায়,
তাদের দেখে পেঁচার মুখেও
কেবল হাসি পায়।

ছেলেবেলায় আমার হাসি নিশ্চয়ই বোয়াল মাছের মতো ছিলো তাই মানুষের পিলে চমকে যেতো।
তবে আমার হাসি হোক বোয়াল মাছের মতো, হোক ভিলেনের মতো কিংবা হোক ইবলিশের মতো আমি আমার হাসিকে ভালোবাসি। আমি হাসতে ভালোবাসি।

ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ২:১৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×