
দীর্ঘদিন পর নানুবাড়ি এসেছি। অনেকদিন পর আজ এখানে উৎসবের পালে হাওয়া লেগেছে। ভূতের বাড়িতে মানুষের আনাগোনা বলা যেতে পারে। আকাশে বাঁধভাঙ্গা জ্যোৎস্নার আলো ঠিকরে পড়ছে। আমরা সবাই উঠনে বসে গল্প, গান আর কবিতায় মেতে উঠেছি। ভূতেদের চলাফেরায় কিঞ্চিৎ ব্যাঘাত হচ্ছে। হোকনা, তাতে আমাদের কী? বছরের পর বছর ধরে তো ওরাই বাড়িটা দখল করে খাচ্ছে। একটা রাত না হয় আমরা একটু আনন্দ করে, শুকিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলোকে ভালোবাসার জল ঢেল জীবন্ত করি। কাল থেকে তো আবার ওদেরি কব্জায় চলে যাবে বাড়িটা... পুরো বাড়িজুড়ে মাকড়শা জাল বিছাবে, ধুলোবালি জমবে, উঠনে শ্যাওলা আর আগাছারা সংসার পেতে বসবে, নেমে আসবে নিঝুম নীরবতা।
অথচ একটা সময় এই বাড়িতে দিনমান উৎসবের ছোঁয়া লেগেই থাকত। আত্মীয়-স্বজন সহ নানা চেনা-অচেনা আর প্রতিবেশীদের পদচারণায় মুখর হয়ে থাকত। চুলায় রান্নার পর রান্না চাপত; কত রকমের রান্না, কত রকমের স্বাদ। এক পদ শেষ হতে না হতেই আরেক পদের আগম; এ যেন বিয়ে বাড়ির ধুম! ভোরবেলা থেকে শুরু করে মাঝরাত অবধি চলত, খাওয়া-দাওয়া, হাঁকডাক, হৈহুল্লোড় আর গল্পের আসর। রাত ঘুমিয়ে যেত কিন্তু এই বাড়ি আর বাড়ির মানুষেরা ঘুমাত না।
সময়ের সাথে আমূলে পাল্টেছে সবকিছু, এই বাড়ি হারিয়েছে তার যৌবন ও জৌলুশ। বাড়ির মানুষগুলো নিজেদের তাগিদে ভিন্ন ভিন্ন জাগায় স্থান্তরিত হয়েছে। এখন এই বড়িতে বছরান্তেও মানুষের সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না, হু হু করতে থাকে বিষাদি নিস্তব্ধতা! আমার কেনো যেন মনে হয় বাড়িটা মানুষের উপস্থিতি বুঝতে পারে—বাড়িটার দিকে মানুষের উপস্থিতি অবস্থায় তাকালে মনে হয় ও হাসছে, মনের আনন্দে হাসছে। কিন্তু যখন সবাই তাকে ফেলে চলে আসে তখন সে আবার জরাজীর্ণ শরীর নিয়ে কারো প্রতীক্ষায় দিন গুণতে থাকে...।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


