somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

উৎসবের নামে আমরা কি তবে ঘাতক হয়ে উঠছি?

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বছরের শেষ সূর্যাস্তের পর যখন পুরো পৃথিবী নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি নেয়, তখন আকাশ-বাতাস এক অদ্ভুত আতঙ্কে ভারী হয়ে ওঠে। সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা, মাদক সেবন ও উচ্ছৃঙ্খলতার জয়গান গেয়ে উদযাপিত হয় ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’।

আলোকসজ্জা, আতসবাজি আর উচ্চশব্দের গান—সব মিলিয়ে এক উন্মাদনা। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছি, আমাদের এই কয়েক ঘণ্টার আনন্দ অন্য কারোর জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
আমরা যখন আকাশের বুক চিরে আতসবাজির শব্দ আর আলোর ঝলকানি দেখে আনন্দে মেতে ওঠি, তখন সেই আকাশে দিনমান উড়ে বেড়ানো পাখিদের পৃথিবীটা ওলটপালট হয়ে যায়। প্রচণ্ড শব্দ আর আগুনের ঝলকানিতে আতঙ্কিত হয়ে পাখিরা দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে উড়তে থাকে। অন্ধকারে তারা দালানের কাচ বা বৈদ্যুতিক তারে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা সেই নিথর দেহগুলো আমাদের উৎসবের বীভৎস সাক্ষ্য দেয়। তারা তো কথা বলতে পারে না, তাই হয়তো তাদের এই নীরব কান্না আমাদের কানে পৌঁছায় না।


আপনার পাশের বাসার সেই অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষটি কিংবা দোলনায় শুয়ে থাকা নিষ্পাপ শিশুটির কথা ভাবুন তো? লাউড স্পিকারের বিকট শব্দ যখন দেয়াল ভেদ করে তাদের কানে যায়, তখন তাদের বুকটা কতটা ভয়ে কেঁপে ওঠে! উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের রোগীদের জন্য এই শব্দগুলো একেকটি মরণকামড়। গত কয়েক বছরে আমরা এমন খবরও শুনেছি যে, আতসবাজির শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে অবুঝ শিশু মারা গেছে। যে উৎসব মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, তাকে কি আদৌ উৎসব বলা যায়?


আকাশে রঙিন ফানুস উড়তে দেখলে খুব সুন্দর লাগে, তাই না? কিন্তু সেই ফানুস যখন কোনো বস্তিতে, পাটের গুদামে বা মানুষের বসতবাড়িতে গিয়ে পড়ে, তখন কয়েক সেকেন্ডে ছাই হয়ে যায় কারো সারাজীবনের সম্বল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন চারপাশ গ্রাস করে, তখন আমাদের সেই আনন্দ অন্যের সারাজীবনের কান্নায় রূপ নেয়।


সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হলো অন্যকে কষ্ট না দেওয়া। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, "প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ থাকে।" অথচ আমরা আনন্দের নামে প্রতিবেশীর হক নষ্ট করছি, পরিবেশ দূষিত করছি এবং অবলা প্রাণীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছি। অপচয় আর বিশৃঙ্খলা কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। অকারণে কাউকে কষ্ট দেওয়া, ভয় দেখানো কিংবা ক্ষতি করা—এগুলো কখনোই ইসলামের শিক্ষা হতে পারে না।


আমরা নিজেদের ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব’ বলে গর্ব করি। কিন্তু শ্রেষ্ঠত্ব কি সেই আনন্দ-উল্লাসের নাম যা অন্যের জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়? নাকি শ্রেষ্ঠত্ব হলো নিজের আনন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে অন্যের কষ্ট অনুভব করার নাম?


নতুন বছর আসবে, বসার ঘরে ঝোলানো ক্যালেন্ডার বদলে যাবে—এটাই তো চিরায়ত নিয়ম। জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গহ্বরে; এক পা দু পা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি মৃত্যুর দিকে। পৃথিবীতে আমাদের কেন পাঠানো হয়েছে আর আমরা কী করছি—সেই চিন্তায় আমাদের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাওয়ার কথা; অথচ আমরা এসব ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে মেতে উঠছি।


আসুন না, এবার একটু অন্যভাবে বছরটাকে বিদায় জানাই। থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিকট শব্দ, আতসবাজি আর বিজাতীয় সংস্কৃতি বাদ দিয়ে আমরা কি পারি না কোনো অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে? শীতার্ত মানুষের হাতে গরম কাপড় তুলে দিতে? কিংবা বিগত বছরের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে, আগামী বছরের বিপদাপদ থেকে সুরক্ষার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতার আসনে বেশী দিন থাকা শাসকদের মাঝে খালেদা জিয়া সর্বসেরা

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৩



আমার এক ছাত্র চাকুরীর পরীক্ষায় ৫২ নম্বর পেয়ে ৩ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। দ্বিতীয় জন পেয়েছিল ৪৯ নম্বর এবং তৃতীয় জন পেয়েছিল ৪৭ নম্বর। সে হিসাবে খালেদা জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপসহীনতার নাম খালেদা জিয়া: যন্ত্রণার বিনিময়ে গণতন্ত্রের প্রাচীর

লিখেছেন জুয়েল তাজিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৭



ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে একাত্তরের বিভীষিকায় বন্দিত্ব, অল্প বয়সেই বিধবা হওয়া—বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের শুরুটাই ছিল যন্ত্রণার অধ্যায়। এরপর ইতিহাস যেন তাঁকে একের পর এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×