লেজেহুমু এরশাদ। এককালীন স্বৈরশাসক ছিলেন। বর্তমানে গণতন্ত্রপ্রেমীদেরও প্রিয়ভাজন। স্বনামধন্য প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ভালো কবিতা ও গান লিখতেন তাঁর শাসনকালীন সময়ে। কিন্তু দুর্মুখেরা বলতেন অন্য কথা। তাঁর কবিতা নাকি নিজের লেখা ছিলো না। লিখে দিতেন অন্যেরা। তার মধ্যে অনেক নামকরা কবিরাও ছিলেন। তাঁর লাম্পট্যের দোসর টাইপের কবি। আজকে অনেকেই যারা কট্টর প্রগতিবাদী তাদের মধ্যেও নাকি কেউ কেউ ছিলেন। উপলক্ষ্য ছিলো নাম-যশ আরও বাড়ানো এবং রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ। তো লাভ হয়েছে সে সমস্ত কবিদের। লাভ হয়েছে লেজেহুমু এরশাদ-এরও। প্রতিদিন কোনো না কোনো প্রত্রিকায় কবিতা ছাপা হতো পল্লী-দরদী কবি এরশাদ-এর। রাষ্ট্রীয় রেডিও-টেলিশিনে তাঁর লেখা গান বাজতো, দেখাতো। এক হাঁটু পানিতে ঘুরে রাষ্ট্রপতি এরশাদ বন্যার্তদের মাঝে খাবার-কাপড় বিলি করতেন। আর দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের কণ্ঠে বেজে যেতো তাঁর লেখা বিখ্যাত সব গান। আহা! কী সৌন্দর্যের ব্যাপারই না ছিলো সে সময়!?
আমার ছিলো তখন ছাত্রজীবন। টগবগে তরুণ আর ঘোরতর এরশাদ বিরোধী। কবিতা লিখতাম, পত্রিকায়ও ছাপতো। প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসবে যোগ দিতে এলাম ঢাকায়। দারুণ জমজমাট ভাব মনে। কবিতা পাঠ চলছে। তিনদিন ধরে চলবে কবিদের কবিতা পাঠ। সাথে আছে ক্লাসমেট বন্ধু দেলোযার হোসেন হীরা। ছাত্রলীগ করতো, ভালো কবিতা লিখতো ও। ওর কবিতাও কয়েকটি পত্রিকায় ছেপেছে ইতোমধ্যে। মঞ্চের সামনে বসে কবিতা শুনছি। হঠাৎ-ই ও বললো- যে যাই পড়ুক, এরশাদকে দু'একটা কবিতা লিখে না দিলে খবর আছে সবার! আমি বললাম- কোন্ এরশাদ? ও বললো- কেন, প্রেসিডেন্ট লেজেহুমু এরশাদ। আমি বললাম- প্রেসিডেন্ট এরশাদ নিজেইতো অনেক কবিতা লেখেন। প্রতিদিনই প্রায় পত্রিকায় তাঁর কবিতা পড়ি। ও বললো- তুই শালা ছাই জানিস! আসল খবর হলো- তাঁর কবিতা লিখেন অন্যেরা। যাই হোক, সেদিন প্রকৃতই জানলাম লেজেহুমু এরশাদ-এর কবিতা লেখার আসল খবর। এখন অবশ্য আর কবিতা বেরায় না তাঁর কলম থেকে।
এখনো কবিতা লিখি। বড়ো কবিতো দূরের কথা কবিই হতে পারিনি হয়তো! কবি হতে হলে নাকি তাবেদারও হতে হয় তাদের- হইনি, হতে পারিনি। কাউকে কাউকে নাকি মাঝে মাঝে কবিতাও লিখে দিতে হয়। আমি পারিনা, দেইনা আমার লেখা। নিজের সৃষ্টিকে খুব বেশি মায়া করি। তাই হয়তো স্বত্ত্ব ত্যাগ করে দিতে পারি না কাউকে। আমার কবিতা পড়ে অনেকেই স্তুতি করে, হয়তো কেউ আবার পছন্দ করে না তেমন। তবে একটাই কথা যদি বেঁচে থাকি- কবিতা আগেও লিখেছি, এখনও লিখি, ভবিষ্যতেও লিখবো আরও অনেক কবিতা। কেউ পড়ুক বা না পড়ুক, কী আসে যায়, লিখবোই তো!?
বি.দ্র. গল্পটার তথ্য-বিভ্রাট আমার নিজের না। অনেক পত্র-পত্রিকায় ছেপেছে এ ব্যাপারে। এখনও শোনা যায় কিছু কিছু।
29.09.2006
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



