[গাঢ়]মিঠুর বায়না[/গাঢ়]
সায়রার কোলে বসা ছিলো মিঠু। তাকে ভাত খাওয়াচ্ছে সে। হঠাৎ মিঠু জিজ্ঞেস করলো- আম্মু! ঈদ হবে কবে? ছোট্ট এ ছেলেটির প্রশ্নে সায়রার চোখ কপালে উঠলো। কেন যেন তার অন্তরের ব্যথাটা হঠাৎ নাড়া দিয়ে উঠলো।
আজ পাঁচ বছর গত হয় সায়রার স্বামী মারা গিয়েছে। রেখে গেছে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মিঠুই সবার ছোটো। বড়ো দু'জনের নাম আবু ও সায়লা। মিঠু গর্ভে থাকাকালেই তার বাবা মারা যায়।
সায়রার কোনো ধন-সমপদ নেই। শুধু ভিটে বাড়িটাই সম্বল। এ ভিটে বাড়িতেই সে তিনটে ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে। ভিটেতে শাক-সব্জির চাষ করে আর নিজে এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়।
আগামী মাসে প্রথম শুক্রবার ঈদ। পাড়ার সবাই ঈদের জামা-কাপড় নিচ্ছে। সায়রার খুব ইচ্ছে এ খুশীর দিনে ছেলেমেয়েদের নতুন পোশাক দেবে। ভালোভাবে রান্না করে পেট পুরে খাওয়াবে। মিঠু প্রায়ই বলে- আম্মু! এ ঈদে আমাকে জামা দিতে হবে, লাল জামা। আবু কিছুটা বোঝে, সে কিছু চায়না। কিন্তু সায়লা মাঝে মাঝে বায়না ধরে।
ঈদ আসেছে দেখে সায়রা পরিশ্রমটা বাড়িয়ে দিয়েছে। কী করে ছেলেমেয়েদের এ অভিলাষ পূরণ করা যায়- এটাই তার একমাত্র চিন্তা এখন। খেটে খেটে তার শরীরটা এখন একেবারে ভেঙ্গে গেছে।
স্বামী বেঁচে থাকাকালে কতো সুখই না তাদের ছিলো! জমি-জমা, ধন-সমপদ কী না ছিলো! এ রঙিন স্মৃতি মনে পড়লে সায়রার চোখে পানি এসে যায়। মিঠুটা দেখতে ঠিক তার বাবার মতো হয়েছে। মিঠুকে দেখলে সায়রার সব সময় তার স্বামীর কথা মনে হয়।
সত্যি সত্যিই ঈদ আসলো একদিন। পাড়াশুদ্ধ ধুমধাম পড়ে গেলো। আবু, সায়লা ও মিঠুর সমবয়সী অনেক ছেলেমেয়ে তাদের বাড়িতে বেড়াতে এলো। তাদের পরনে নতুন জামা-কাপড়, চোখে-মুখে খুশীর ছাপ। একটি ছেলে মিঠুকে ডেকে বললো- মিঠু চল্ ঈদের মাঠে যাবি না, চল্না! মিঠু দৌড়ে এসে মার কাছে গেলো- আম্মু আমার লাল জামা কই?
মিঠুর মাথা তখন সায়রার কোলে। সামনের খোলা প্রান্তরের দিকে সায়রার চোখ। আর সেই চোখ বেয়ে টপ টপ করে পড়ছে অঝোর জলের ধারা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১২:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



