বাববার কানে বাজছে কথাগুলো। কিছুতেই ঘুম আসছে না আকাশের। মৌমিতা কেন বললো এ কথা? এটা কী কারও উদ্দেশ্যে না আপনমনে বিষোদগার! আকাশ আজই ভালোভাবে খেয়াল করলো কথাগুলো। এর আগেও শুনেছে সে কয়েকবার। তখন কোনো আমল দেয়নি সে। কিন্তু আজ মন থেকে ঝাড়তে পারছে না মৌমিতার কথাগুলোকে। আকাশের মুক্তমনে সন্দেহের মেঘ জমতে শুরু করেছে। বিছানায় শুয়ে আছে সে অনেকক্ষণ হলো। তার দুচোখ জ্বলছে, চোখের পাতা বন্ধ হচ্ছে না।
-ডার্লিং, এই নাও তোমার দুধ। খেয়েদেয়ে চটপট ঘুমিয়ে পড়ো।
মৌমিতার কথায় ধ্যান ভাঙে আকাশের। ঘুমানোর আগে মৌমিতা খুব সুন্দর করে সাজে প্রতিদিন। আজও সেজেছে খুব। তবে আজকে একটু আলাদা মনে হচ্ছে। মৌমিতার ফিগার এমনিতেই অনেক আকর্ষনীয়। ভারী নিতম্ব, খাড়া সুডৌল স্তন। হালকা রঙের নাইটির ফাঁক গলে বুকের পাহাড় দুটো যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। কপালের মাঝখানে সুন্দর লাল টিপ পরেছে মৌমিতা আজ। দুধে-আলতা গায়ের রং মৌমিতার। তার উপর ঘরে জ্বলছে ডিমলাইটের আলো। মানে আজ দারুণ লাগছে তাকে।
মফস্বল শহরের একতলা এ বাড়িতে আকাশ যতোবারই এসেছে ততোবারই ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি সে। প্রতিবারই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটেছে বা দুঃস্বপ্ন দেখেছে আকাশ। এ বাড়িটা কেমন যেন ভূতুরে মনে হয় তার কাছে। চারপাশে দেয়াল তুলে দেয়াল ঘেঁষে তিনটা টিনশেড করা হয়েছে তিন পাশে। পেছনের দিকটা যদিও ফাঁকা, একটা বাগান রয়েছে সেখানে- সেটাকে জঙ্গল জঙ্গল মনে হয় রাতে। প্রচুর আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারাসহ বেশ কিছু ফলের গাছ এবং নানান রকম ফুলের গাছে ভরে আছে বাগানটা।
এ বাড়িতে প্রচুর লোকসমাগম থাকে। নানান আত্মীয়-স্বজনের ভিড় লেগেই থাকে সবসময়। অনেক লোকের ভিড় কখনও ভালো লাগে না আকাশের। নতুন জামাই হিসেবে আকাশ মৌমিতাকে নিয়ে অবসরে একটু গল্প করবে সে ফুসরত নেই কোনো। যা সম্বল দিনের শেষে এই রাত্রিটাই। তখনই শুধুমাত্র মৌমিতাকে আপন করে পায় আকাশ। এরপর সারাদিন শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। এ বাড়িতে এলে আকাশের প্রতিটাক্ষণ তাই দুঃসময়ই মনে হয়।
আজ মৌমিতাকে পিয়াসের সাথে চুটিয়ে গল্প করতে দেখেছে আকাশ। সারাদিনে ফাঁক পেলে কতোবারই না কথা বলেছে তারা! অথচ আকাশ পত্রিকা পড়ে, বই পড়ে কাটিয়ে দিয়েছে সারাটাদিন। অনেক লোকের ভিড়ে মৌমিতাকে ডেকে বলাও হয়নি- একটু কাছে পেতে মন চায় তাকে; একটু আদর করতে ইচ্ছে করে যে! একবার পিয়াস এবং মৌমিতার কথা খুব কাছ থেকে কথা তাদের শুনেছিলো আকাশ। তখনই শুনেছে মৌমিতার ঐ কথাটি- .....আমিই আসবো। চুপিসারে তাদের কথোপকথন শোনার ব্যাপারটা মৌমিতা বুঝতে পেরেছে কী? আকাশ আন্দাজ করতে পারে না। তবে আকাশ জানে, মৌমিতা শান্ত বেশ এবং কৌশুলিও। আর মৌমিতা আকাশকে সরল, ভোদাই স্বভাবের মানুষ হিসেবেই জানে।
পিয়াস মৌমিতার দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই। বেশ কৰবছর যাবত এ বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছে। পিয়াসের গায়ের রং শ্যামলা। দেখতে খুব সুদর্শন বা হ্যান্ডসামও নয়। তবে খুবই চতুর এবং কথার মারপ্যাঁচ জানে সে। আকাশ এ বাড়িতে এলেই দুলাভাই, দুলাভাই বলে মুখ ফেনিয়ে তোলে। এমন ভাবখানা যেন সে দুলাভাই বলতে অজ্ঞান! আকাশ-মৌমিতা যদি চাইনিজে, মার্কেটে, কারও বেড়াতে গেলে পিয়াসেরও সাথে যাওয়া চাই-ই। আর সময় সুযোগ পেলেই মৌমিতার সাথে গল্পে মেতে ওঠে সে।
-দুধ খাওনি? নাও, খেয়ে নাও লক্ষ্মীটি। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো আজ । খুব টায়ার্ড লাগছে আমার।
সম্বিত ফেরে আকাশের। তাড়াতাড়ি দুধ খেয়ে নেয় সে। কিন্তু একটা তেতোস্বাদ যেন জিভে লাগে তার। মৌমিতাকে বলে-
-আজকের দুধটা এতো তেতো লাগছে কেন, মৌ?
- তুমি না একটা আনকালচারড, গেঁয়ো। গেঁয়ো দুধ ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না তোমার। এগুলো হলো মিল্ক-ভিটার বিশুদ্ধ দুধ। একটু তেতো তো লাগবেই।
আর কিছু বলে না আকাশ। গপগপ করে গিলে ফেলে গ্লাসের বাকিটুকু।
দুৰচোখ খুলতে পারছে না আকাশ। খুব ঘুমঘুম ভাব লাগছে তার। তবু মাথা থেকে একবারও ঝেড়ে সরাতে পারছে না মৌমিতার বলা ঐ কথাগুলোকে। এদিকে মৌমিতাকেও খুব রহস্যময়ী মনে হচ্ছে আজ রাতে। অন্যদিন মৌমিতাকে কাছে টেনে আনতে আকাশই প্রথম জড়িয়ে ধরে তাকে। কিন্তু আজ বিছানায় শুয়েই মৌমিতা নিজেই আকাশকে কাছে টানছে বারবার। আকাশের খুব একটা আগ্রহ ছিলো না। তবু একরকম জোর করেই আকাশের উপর মৌমিতা উপগত হয়। কিছুক্ষণ চলে যায় এভাবেই। এরপর আকাশ আরও নির্জীব হয়ে যায়। এবার আর ঘুম ঠেকাতে পারে না আকাশ। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সে।
রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসে চারদিকে। বাসার আশেপাশের সবাই ঘুমাচ্ছে এখন। মৌমিতা তবুও জেগে আছে। আকাশকে ধাক্কা দিয়ে দেখলো সে একবার। এ যেন কুম্ভকর্ণের ঘুম! দুধের সাথে ঘুমের বড়িটাও তাহলে কাজে দিয়েছে বেশ। একবার ঘুমালে দুনিয়ার কোনো খবর থাকে না আকাশের। বিয়ের পর বাসরের প্রথম রাতেই এ ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছিলো মৌমিতা। এ যেন তার সোনায় সোহাগা! আকাশ আর উঠবে না। একবারে ভোর পর্যন্ত একটানা ঘুমাবে সে।
বাইরের বাগানের ফুলের মৌ মৌ গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। ঘরে বসেই মৌমিতা ঠিক ঠিক টের পাচ্ছে তা। বেশ পুরনো মফস্বল শহর এটা। দূরে নিশির ডাকও শোনা যাচ্ছে। একটু পরে একটা গলা খাকড়ির শব্দ শুনতে পায় মৌমিতা। হা, মৌমিতা ঠিকই শুনেছে। খুব সাবধানে আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে নেমে আসে মৌমিতা। ধীর পায়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যায় বাগানের দিকে। নিষিদ্ধ মহুয়ার গন্ধে মাতাল আজ তার সর্বান্তকরণ।
আকাশ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে একা বিছানায়। মাঝে মাঝে তার নাক ডাকার শব্দও শোনা যাচ্ছে দূর থেকে। সে কী কোনো স্বপ্ন দেখছে? অনাগত জীবনের কোনো স্বপ-ধ্যান কী ঘুমের অতলে নিমগ্ন করে রেখেছে তাকে? ওদিকে আরও দূরে বাগানে চেনা নারী-পুরুষের ফিসফাস শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্ধকারে দুৰটি ছায়া নাড়াচাড়া করছে বেশ। একসময় ছায়া দুৰটির নাড়াচাড়ার গতি বেড়ে যায় আরও। দূরে নিশি ডাকে আবার, কয়েকবার। আঁধার ঘনিয়ে আসে বাগানের ছায়ার ভিতর। কারও লীলা-খেলা, কারও স্বস্তির ঘুম ভারী করে রাতের আঁধারটাকে। সময় এগিয়ে যায় দ্রুত।
০৯.১১.২০০৬
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১২:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



