বেদেরা যাযাবর জাতি। বাংলাদেশের নদীবহুল এলাকায় জীবিকার খোঁজে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বেদের বহর ঘুরে বেড়ায়। যাদের পেশা চুড়ি-মালা-কানের দুল, থালা-বাসন-কোসন, মষলাপাতি ইত্যাদ বিক্রি এবং সাপ খেলা, চুমচুমা বুড়ির খেলা দেখানো। খেলা দেখানোর সময় তারা নৃত্যগীতও করে থাকে। তারা রস খসায়, বিষ খসায়, দাঁতের পোকা খসায়, সিঙ্গা লাগায়।
বেদে গোষ্ঠির মধ্যে নারীর উপার্জনই মূখ্য। পুরুষরা লাকড়ি সংগ্রহ, পাখপাখালি শিকার, ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করা, নিজেদের ঘর এবং মালামাল সামলানোর কাজে, এমনকি রান্নাবান্নার কাজে অবদান রাখে। এদেরই জীবনালালেখ্য হলো বেজুন বিকির গান। লোকগাথা বেহুলা-লক্ষিন্দর-এ আমরা বেদে জাতির বর্ণনা পাই। বাংলাদেশের লোকসমাজে বেদের গীত অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে বলা চলে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি বেদের গীত উপস্থাপন করলাম আজ।
তরা কে লইবে লো তেজপাতা ফজ লইন
আবের চুড়ি আয়না কাঁকই লইবানি মা বইন।।
চাউলে বিকাই পয়সায় বিকাই যার যা খুশি দাও
তেল সুবাসি দাঁতের মাজন যার যা লাগে নাও।।
জিনিস বালা তেল সুবাসি চিকন করে কেশ
দাঁতে দিলে দাঁতের মাজন পাগল করে দেশ।।
জিনিস বালা তেল সুবাসি উদাস করে বাসে
কেশে দিলে রাত নিশীথে প্রাণের ভ্রমর আসে।।
জিনিস বালা সস্তায় বিকাই আয়না গারা চুড়ি
সুন্দরী বউ পাইলে দিমু টেহাতে এক কুড়ি।।
সই পাতিয়া লইলে চুড়ি লইনা চুড়ির দাম
সেই চুড়িতে লেখা সইয়ের ভালোবাসার নাম।।
সই পাতিয়া লইলে চুড়ি আমরা বানাই সই
হাতে দিলে ভাঙলে চুড় দাসী হইয়া রই।।
[তথ্যসূত্র: জুলফিকার ইয়াজদানী ভুট্টু(৭২), বিদ্যা বল্লভ, নেত্রকোণা]
সৌজন্য: হযরত আলী দেবল
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০০৭ দুপুর ১:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




