প্রফেসর ইউনুস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কেতাব পড়ুয়ারা আর আমাদের কর্পোরেট মিডিয়াগুলো (যাদের টাকায় আমাদের মতো অনেক শিবলী নোমান খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে, যাদের দৌলতে আমার মতো সাংবাদিকেরা অনেক নাম-টামও কামিয়েছেন) তাকে নিয়ে স্তুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার গণ্ডগোহালি গ্রামের নাদিরার মনে শান্তি নেই। কীভাবে শান্তি থাকবে? ুদ্র ঋণের সুমহান দারিদ্র্য দূরীকরণের কেতাবি থিওরি তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস তার স্বামীর জীবন যে কেড়ে নিয়েছে। তা নিক না। সমস্যা কী? ওদের কথা তো আর কেউ লিখবে না। প্রফেসর ইউনুসের মতো এতোবড় একজন মানুষ যে থিওরি দিয়েছেন তার গ্যাঁড়াকলে পড়ে হতদরিদ্র প্রান্তিক মানুষগুলোর মনে অশান্তি যতোই থাক, প্রফেসর ইউনুস তো বিশ্ব শান্তির দূত! তাই নাদিরাও স্তম্ভিত হয়, এতোবড় একজন শান্তির দূতের এনজিওর কর্মীরা কীভাবে কলার ধরে টাকা আদায় করতে না পেরে তার স্বামীকে বিষ খেয়ে মরতে বলেছিলেন! খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়, এ বছরের 17 আগস্টই ঘটেছিলো সেই মর্মান্তিক ঘটনা। ঘটনাটি খুবই সামান্য! যে মানুষ খেতে পেতো না, সে ঋণ নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে 'নিজের দোষেই' সুদাসলে শোধ করতে না পেরে বিষ খেয়ে মরেছে। ছোঃ, সংবাদ মাধ্যমগুলোর ব্যবসা প্রসারের জন্য এ আবার কোনো খবর হলো? মুষ্টিযোদ্ধাদের মতো হাত ওপরে তুলে প্রফেসর ইউনুস বিগলিত মুখে জাতিকে সামনে এগুনোর কথা যখন বলছেন, তখন এই সব মরা মানুষদের কথা যারা বলে তারা তো পেছন থেকে টেনে নামানোর উপায় খোঁজা চক্রান্তকারী! মৃত লোকটির নাম নবাব। বয়স খুব বেশি নয়, ছিলো 25-26। নিহত নবাবের বাবা শাজাহান আলী জানান, মুদি দোকানদার নবাব আলী দোকানের জিনিস কেনার জন্য প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে 5 হাজার টাকা ঋণ নেয়। এরপর কারিতাস থেকে 12 হাজার টাকা, ব্র্যাক থেকে 10 হাজার টাকা এবং বোনের নামে ব্র্যাক থেকে 16 হাজার টাকা ঋণ তোলে। কিন্তু দোকানের জিনিস বাকীতে বিক্রি করে টাকা আদায় করতে না পেরে ঋণের কিস্তি চালাতে ব্যর্থ হয়। ফলে এনজিও'র মাঠকর্মীরা তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। নবাবের স্ত্রী নাদিরা অভিযোগ করে বলেন, নবাব মারা যাবার এক সপ্তাহ আগে গ্রামীণ ব্যাংকের এক মাঠকর্মী এসে বলেন, টাকা দিতে না পারলে বিষ খেয়ে মর, তাহলে টাকা শোধ দিতে হবে না। এ ছাড়া ব্র্যাকের এক মাঠকর্মী নবাবের শার্টের কলার চেপে ধরে ঋণের টাকার জন্য অপমান করেন। ফলে 17 আগস্ট রাত 12 টার দিকে নবাব সকলের অগোচরে বিষপান করেন। রাত 1 টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তার মৃতু্য হয়। ুদ্র ঋণের সেই কিস্তি এখন টানতে হচ্ছে স্বামীহারা নাদিরাকে। প্রফেসর ইউনুস যখন শান্তিতে নোবেল পেলেন সেই ুদ্র ঋণের ক্যারিশমার জন্য তখন নাদিরর কিছুই আসে যায় না । আমরাও অবাক হই না। আমরা মাঠে ঘোরার চেয়ে কেতাবি তকমা, কেতাবি থিওরিতেই যে আস্থা রাখি! তাই জয় হোক এই নোবেল বিজয়। নবাবরা তো এভাবেই মরবে! চুদির ভাইয়েরা, ঋণ নিয়েছে, শোধ করতে পারে না! আগে বড় ব্যাংকে তো তোরা যেতেই পারতিস না। এখন টাকা তোদের দুয়ারে দুয়ারে চলে আসছে, তবু টাকা নিয়ে টাকা শোধ দিতে পারিস না। বানচোত, তোরাই তো অশান্তির মূল। তোরা মরে যা! তাহলেই আমরা আরো বেশি করে শান্তিতে নোবেল পাবো!
এই লেখাটির প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করেছিলেন সমকালের পুঠিয়া প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান সৌরভ। তাকে কৃতজ্ঞতা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০০৬ রাত ৩:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



