somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ পোকা

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখতে কেমন লাগে সেটা জহিরের জানার কথা নয় , কারণ এমন অনুভূতি জীবনে এই প্রথমই হচ্ছে ।

বাম দিকের চোখের সাথে সাথে শরীরের অর্ধাংশও যেন বিদায় নিয়েছে । নিজেকে মনে হচ্ছে অর্ধ মানুষ । এবং নিজের নাক দুই চোখ থাকা অবস্থায় শুধু সর্দি হলে যার অস্তিত্ব অনুভব হত ,এক চোখ দিয়ে সেই নাককেও মুখের উপর বসে থাকা পেট মোটা এক পাহাড় মনে হচ্ছে , সেই পাহাড় বাম দিকের পৃথিবী পুরোটাই আড়াল করে ফেলেছে ।

ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর টেবিলে বসলে বাম দিকের কোন ছাত্র ছাত্রীকে সে আর দেখতে পাবে না । আর কি কোনদিন সে ছাত্র ছাত্রী পড়াতে পারবে ? দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার বুক চিড়ে ।

আব্বু ! তার দুই বছরের ছেলে সিয়াম দৌড়ে এসে তার কোলে মাথা গোঁজে । সিয়াম আর তার মা মানে তার স্ত্রী রাখির জন্য তার আরও অনেকদিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয় ।

জহির মানেই জহির স্যার , বালীকানদা উপজেলার প্রায় সকল মানুষই ইংরেজির শিক্ষক জহির স্যারকে এক নামে চিনে । আর তা হবেই না বা কেন , বালীকানদা উপজেলায় অমন ভাল ইংরেজির শিক্ষক কি আর ছিল !

এমনকি তার স্ত্রী রাখিও তার ছাত্রী ছিল । ঐ সময় ১৭-১৮ টা ব্যাচ পড়াত । জহিরের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল । সব ছাত্র ছাত্রীদের নাম একবারেই মনে রাখত সে ।

কত ছাত্র ছাত্রীকে ফিরিয়ে দিয়েছে ব্যাচে জায়গা নেই বলে । রাখিদের ব্যাচটা ছিল সবার চেয়ে আলাদা এবং এই আলাদা থাকার কারণটাও ছিল রাখি।

ঐ ব্যাচটাকে খুব কদর করত জহির , এক ঘণ্টার জায়গায় দু’ ঘণ্টা পড়াত তাদের । প্রায়শই বিভিন্ন উপলক্ষে এমনকি উপ উপলক্ষেও যেমন তার “ চতুর্থ বোনের মেজ ছেলের মুসলমানি ” অনুষ্ঠানেও ভোজ দিত সে ।

রাখি যখন ছোট করে বিস্কুটে কামড় দিয়ে খেত , পানি খেয়ে গ্লাসে লিপস্টিক লাগীয়ে রাখত ,টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছত সব ভাল লাগত জহিরের ।

অনুবাদ বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে সে যখন ঠোঁটের ডান পাশ কামড়ে চিন্তা করত চোখের উপর পড়া চুল সরিয়ে দিত , কিম্বা বুকের উপর ওড়না ঠিক ঠাক করে দিত জহিরের মধ্যে কি যেন একটা হয়ে যেত !

রাখি কোনদিন পড়তে না এলে সেদিন জহিরের এত খারাপ লাগত ! সবাইকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে শুয়ে থাকত সে ।
এমনকি একদিন রাখির জুতা ছিঁড়ে গিয়েছিল বলে সে তাড়াতাড়ি তার ভাগ্নেকে পাঠিয়ে চকবাজার থেকে জুতা সারিয়ে এনেছিল যাতে সে আগে আগে চলে না যায়।

আর এই সব কিছুই তো ভালবাসার নমুনার সাথে মিলে যায় । নর-নারীর ভালবাসার তথ্যটা কোন এক “ মানসিক ইথারে ” পৌঁছে যায় এবং কিছু না বললেও বাকীজন সেই “ মানসিক ইথার ” থেকে তথ্যটা জেনে যায় । ভালবাসারত ও ভালবাসাপ্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে যতটা না কথা বিনিময় হয় তার চেয়ে অনেক বেশী তথ্য বিনিময় হয় মানসিক ইথারে । রাখিও জেনে গিয়েছিল এবং মৌণ হ্যাঁ টা ছড়িয়ে দিয়েছিল ইথারে ।

- পানি খাবে ? কপালে শীতল হাতের স্পর্শে তন্দ্রাভাব ভেঙ্গে যায় জহিরের ।
মাথার কাছে রাখি দাড়িয়ে আছে , শান্ত সৌম্য একটা মুখ ।

প্রথমদিকে অনেক কাঁদত রাখি , একটার পর একটা অপারেশোন , কেমোথেরাপি , টেস্ট, রিপোর্টে হত-বিহ্বল হত আর কাঁদত । কখনও আড়ালে , কখনও সামনেই । তার চোখের জল যেন ছিল বাধ ভাঙ্গা নদীর স্রোতের মত । কিন্তু আস্তে আস্তে সে স্রোতে পলিমাটি জমতে শুরু করে । একসময়ে শান্ত, স্থবির হয় নদী ।
ঘটনায় একটা ভয়ঙ্কর খারাপ অনাহুত আশঙ্কায় দিনাতিপাত একসময় ঘটনাটা গা সওয়া হয়ে যায় । রাখিও এখন আর শিশুর মত কাঁদে না । মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে উদাস হয়ে ঘন রেইনট্রি গাছের সারির দিকে তাকিয়ে থাকে ।


দুপুরে জহিরকে গোসল করিয়ে জানালার পাশের বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হয় । অনেক দিন পরে গোসল করায় তার শরীরে এক প্রশান্তি ও আরাম বোধ ছড়িয়ে যায় ।

একটা আমগাছের মাথার অংশ , দূরের রেইনট্রি গাছগুলো যেন ঘন হয়ে নিরবিচ্ছিন্ন সবুজ শামিয়ানা বানানোর চেষ্টা করছে ।

তাদের মাঝখানে হঠাৎ ডালপালাহীন মৃত এক তালগাছ চোখে পড়ে তার । সব সবুজের মাঝে বেমক্কা শ্রীহীন গাছটি বড় বেমানান ।
নিজেকে হঠাৎ করে শ্রীহীন তালগাছ মনে হয় তার । ইদানীং এই বিষয়টা বেশী হয়েছে , যেদিন থেকে সে চলার শক্তি হারিয়েছে সেদিন থেকেই নিজেকে কখনও বিদ্যুতের খুঁটি , কখনও নামাজের চৌকি কখনও এমনকি মুখ ভাঙ্গা মুড়ির কৌটাও মনে হয় ।

এই বিছানাটা জহিরের খুব পছন্দের । এখান থেকে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা যায় । আকাশ থেকে ভেসে যায় বিভিন্ন আকৃতির মেঘ ।
ডানা ঝাপটে দু’ একটি কাক উঁরে যায় । ডানা না ঝাপটে ঘুরে বেড়ায় সোনালী ডানার চিল ।

দুপুর গড়ানো রোদ হলদে সাদা দ্যুতি ছড়ায় । আস্তে আস্তে চোখটা বুজে আসে তার। আচমকাই একটা কণ্ঠস্বর তার অবচেতনে কথা বলতে শুরু করে ।

- স্যার ভাল আছেন ?
- কে , কে কথা বলে !
- খুব কি জানার দরকার ? শরীর কেমন এখন ?
- আগের চেয়ে ভাল ।
- কে বলেছে আপনাকে ? এক অতি ক্ষুদ্র পোকা বসতি গেড়েছে আপনার শরীরে । একটা দুটা , একশ ,দুশ , লক্ষ কোটি তারা ঝাঁকে ঝাঁকে আপনার শরীর ঝাঁঝরা করে ফেলেছে । খুব দ্রুতই নিঃশেষ হবেন আপনি ।

- না ... না ... না......। শব্দ করে বলে উঠে জহির । ঘুম ভেঙ্গে যায় তার ।

ঘুম ভেঙ্গেই জহির টের পায় নিঃশ্বাস তার ভারী হয়ে আছে । আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে সে । চারপাশে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে ।

অদূরেই পিলারের কাছে একটা কাঠের টুকরা নিয়ে খেলছে তার ছেলে সিয়াম । সিয়ামের দিকে তাকিয়ে থাকে জহির । তার ছোট রক্তমাংসের শরীরে জহিরের অধিকার আছে ।

সে মরে গেলেও একটা অংশ রয়ে যাবে সিয়ামের মাঝে । সিয়াম যখন প্রথম হাটতে শিখল তখন টালমাটাল পায়ে একটু দাড়িয়ে প্রায় পড়তে পড়তে ছোট হাতটি জহিরের দিকে বাড়িয়ে দিত । জহির এগিয়ে এসে হাতটি ধরে ফেলত , আর সিয়াম দু একটি দাঁতের মাড়ি নিয়ে খিল খিলিয়ে হেসে উঠত ।

একটু যখন বড় হবে সিয়াম এসব কিছুই কি তার মনে থাকবে ?
সিয়াম খেলতে খেলতে জহিরের খাটের পাশে এসে দাড়ায় । জহিরের গালে চুমু খেয়ে দৌড়ে অন্য রুম এ চলে যায় । মনের অজান্তেই জহিরের চোখ বেয়ে দু’ ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে ।

বিকেল হলেই দর্শনার্থীরা আসে জহিরকে দেখতে । তাদের মধ্যে যেমন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা তেমনি দুঃসম্পর্কের স্বজনরাও । কলেজের প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে কলেজের সামনের আচার বিক্রেতাও আসে । ছাত্র প্রতিবেশিরাও আসে কেউ কেউ।

রাখি প্রায়ই বলে ,তুমি অনেক ভাল মানুষ গো , কত লোক তোমায় দেখতে আসে । সবার দোয়ায় তুমি নিশ্চয় ভাল হয়ে উঠবে ।

রাখির এই “নিশ্চয়” শব্দটি জহিরের মাঝে অনেক সাহস সঞ্চয় করে । মনে মনে সে আবার ক্লাশের মধ্যে পায়চারি করে , ব্যাচে পড়তে আসা ছাত্র ছাত্রীদের গ্রামার এর ফর্মুলা বোঝায় ।

দুপুর হলেই জহিরকে জানালার পাশের খাটে শোয়ানো হয় । শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখে সে । জানালার পাশের রেইনট্রি গাছগুলোর পরিপক্ক ফল । কাঠের মত গোল আবরণের ফলগুলো ফেটে তেলাপোকার পাখনার মত দেখতে বীজগুলো বাতাসে ঘুরে ঘুরে উড়ে যায় । ছোট বেলায় এগুলো দিয়ে সে হেলিকপ্টার হেলিকপ্টার খেলত।


আস্তে আস্তে রোদের রঙ লালচে সোনালী হয় । জহিরের চোখটা বুজে আসে ।
- জহির স্যার ঘুমিয়ে পড়েছেন ?
- কে ?
- আমি আপনার শরীরে বাস করা পোকাদের প্রতিনিধি ।
- কোথায় তুমি ?
- আমায় তো আপনি দেখতে পাবেন না । খালি চোখে দেখার মত শরীর আমাদের নেই । তাছাড়া আপনার তো একটা চোখ এমনিতেই নেই ।
- ঠাট্টা করছ আমার সাথে ?
- না ,জনাব তা কি করে হয় , আপনি আমাদের আশ্রয়দাতা , আমি ত মাত্র আপনার খোজ খবর নিতে ও আমাদের খবর জানাতে এলাম ।
- আমি ভাল আছি ।
- জি স্যার সেটা জানি , কিন্তু আমাদের একটু সাহায্য দরকার ।
- কার সাহায্য ?
- জি হুজুর, আপনার ই । বিষয়টা হল আমরা আপনার শরীরের যে জায়গায় বাস করছি সেখানে আর আমাদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না , গত পরশু আমাবস্যার রাতে আমাদের সব মেয়েছেলেরাই নতুন অনেক সদস্য জন্ম দিয়েছে । আপনি যদি আপনার যকৃতের কিছু অংশ ছেড়ে দিতেন তাহলে নতুনদের বাসস্থানের সমস্যাটার একটা সমাধান হত ।
- দয়া করে দূর হও । দূর হও .........।

কি হয়েছে ? খারাপ কোন স্বপ্ন দেখেছ ? রাখি তার গোলাপি ঠাণ্ডা হাত টি জহিরের কপালে রাখে ।
ইলিয়াস এসেছে । চোখ মেলে খাটের পাশে বসা ইলিয়াসকে দেখতে পায় জহির । ইলিয়াস “আহারে” টাইপের একটা মুখভঙ্গি করে জহিরের দিকে তাকিয়ে আছে ।

- ভাই জান কেমন আছেন ?
- ভাল আছি ।
- হ , দেখতেই ত পাইতেছি , কি মানুষটা কি হইয়া গেছেন । চক্ষুডাও কাইট্টা বাদ দেওন লাগলো । শরীরের হাড় কয়ডা গোনা যায় ।
- আমরা সবাই দোয়া করি আপনের জন্য । কানাই লালের মিষ্টি আনছি আপনের জন্য। গরম গরম খাইয়া নিয়েন ।
জহির আরেকদিকে ফিরে থাকে । কর বিভাগে চাকুরী করা বিপত্নীক এই ফুপাত ভাইকে নিয়ে মনে মনে একটা আশঙ্কা হয় তার। সেটা সত্যি হোক সে তা চায় না।

আগস্টের অলস দুপুরগুলো পার হয়ে যায়। জহিরের এক চোখ দেখে চলে বরষাঝরা দুপুর অথবা ঝকঝকে স্ফটিক নীল আকাশ ।
আকাশের আর আলোর যে এত রকম আছে তা এতদিন একাধারে না দেখলে কোনভাবেই জানত না জহির ।

রাখীও তার সেবা করে যায়। দিন দিন সে সেবায় যেন ভালবাসার থেকে দায়ীত্বের হারই বাড়তে থাকে ।
মাঝে মাঝেই দুপুরে অর্ধচেতনে পোকাদের প্রতিনিধির সাথে কথা হোয় তার। একদিন পোকাদের প্রতিনিধি তাকে বলল “ আজ একজন বিশেষ কেউ আসবে”। সেদিন বিকেলে সত্যিই তার অত্যন্ত প্রিয় একজন ছাত্র যে কিনা সৌর শক্তির গবেষণায় পৃথিবীব্যাপী নাম কামিয়েছে সে এসে উপস্থিত।

আবার যে দিন সে বলল , স্যার আপনার ছেলের দিকে খেয়াল রাখবেন। সেদিন রাত থেকেই সিয়ামের কি জ্বর ! টানা ৪ দিনেও সে জ্বর কমে নি।

তবে প্রতিবারই পোকাদের প্রতিনিধি একটু করে বাড়তি জায়গা চায়। জহির প্রতিবার দূর হও বলে তাড়িয়ে দেয় ।

সেপ্টেম্বারের শুরুর দিকে যখন আকাশে উজ্জ্বল রঙের বিশাল মেঘেরা ভেসে যাওয়া শুরু করে আর শরীর ঠাণ্ডা করা বাতাস বয় , সেইরকম এক দুপুরে তিরি তিরি বাতাসে আধবোজা চোখে শুয়ে ছিল জহির ।
- স্যার কি ঘুমিয়ে পড়েছেন ?
- কে পোকা রাজ ?
- হূম
- স্যার কি একটু ডালিম খেতে পারেন না বেশী করে ?
- কেন?
- আপনার লোহিত রক্ত কণিকা যে হারে কমে গেছে ! নিজেও বিপদে পড়বেন খাবারের অভাবে আমরাও বিপদে পড়ব ।
- কিছুক্ষণ চুপ থেকে পোকারাজ বলল স্যার আজকের দিনটা তো আপনার জন্য বিশেষ ।
- কেন বিশেষ ?
- সময় হলে জানতে পারবেন ।
জহিরের তন্দ্রা ভেঙ্গে যায় । বিকেলের আকাশে কতগুলো পায়রা ওড়াঊড়ী করছে । তারও উড়ে যেতে ইচ্ছে হয় ।

সন্ধ্যা নাগাদ তার অনেক আত্মীয় স্বজনরা আসে। জহিরের খুব ভাল লাগে । তার নিজের ভাইবোন , চাচাত ভাইবোন , তার বর্ষীয়ান বড় চাচাও এসেছেন।

এই সব আপন লোকজনের সাথে জড়িয়ে আছে তার কত সময়, স্মৃতি আর মমতা।
সুস্থ হবার প্রত্যাশা রেখে রাতে তারা ফিরে যায়।

রাতে গুটি গুটি পায়ে সিয়াম এসে তার বিছানার পাশে দাঁড়ায় ।
- আব্বু তুমি কি সত্যিই মরে যাবে ?
- কেন বাবা ? একথা বলছ কেন ?
- ইলিয়াস চাচা বলেছেন , আর বলেছেন আমি যেন তাকে আব্বু ডাকি ।
- আমি কোনদিন তাকে আব্বু ডাকব না । কোনদিনও না ।
ঠোট ফুলানো জিদ নিয়ে সিয়াম চলে যায় ।

জহিরের চুপ করে থাকে । হঠাৎ করে পৃথিবীকে মনে হয় থমকে যাওয়া কিছু। সে যেন অমসৃণ ইটের টুকরো বিছানো পথে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে । পায়ে পায়ে ব্যাথা কিন্তু পা সরানোর জো নেই ।
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে জহিরের বুক চিড়ে ।


দিনে দিনেই বাসায় ইলিয়াসের আনাগোনা বেড়ে যায়। তার জন্য কানাইলালের মিষ্টি, সিয়ামের জন্য খেলনা আর রাখীর জন্য দুটো বড় ইলিশ বা চারটি দেশী মুরগী ।


রাখীও আজকাল অনেক সহজ হয়েছে । জহিরের অসুস্থ লিকলিকে হয়ে যাওয়া জীবনের ভার আর কতই বা সে বইবে ।

শেষ নভেম্বরের এক হিম হিম সন্ধ্যায় সিয়ামের হাত থেকে একটা গ্লাস পড়ে যায়। পাশের রুম থেকে শব্দ পেয়ে দৌড়ে আসে রাখী । অসাবধানে কাঁচে পা পড়ে যায় তার , রক্তে লাল হয়ে যায় পা ।
ইলিয়াস জহিরের পাশ থেকে দৌড়ে গিয়ে রাখীকে ধরে ফেলে ।

রাখীর ছিপছিপে শরীর এক ঝটকায় বলিষ্ঠ হাত দিয়ে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয় । পরম মমতায় ব্যাণ্ডীজ করে দেয় পা । এক অজানা সহানুভূতির বিনিময় ঘটে । জহির তার এক চোখ বন্ধ রাখে । কিছু অনুভূতি ,কিছু ঘটনা কিম্বা ,কিছু সহানুভূতি কোনটাই দেখার ক্ষমতা তার এই এক চোখের আর নেই ।


অবচেতনে সে পোকারাজকে স্মরণ করে ।
- কি সৌভাগ্য স্যার , আপনি কোনদিন আমায় স্মরণ করবেন ! এ এক অবাক কাণ্ড স্যার ।
- ভাল আছ পোকারাজ ?
- জী , ভাল আছি । আপনার কি অবস্থা স্যার ?
- পোকারাজ তোমার দলের সবাই ভাল আছে ?
- জী জনাব ।
- তোমাদের না থাকার জায়গার খুব সঙ্কট ?
- জী হ্যাঁ , আপনাকে তো কয়েকবার বলেছিলাম ।
- তুমি তো শুধু যকৃতে জায়গা চেয়েছিলে , আমার পুরো শরীরটাই তোমাদের দিলাম ।
- কি বলছেন স্যার ! সত্যিই !
- হ্যাঁ একদম ।
- অনেক ধন্যবাদ স্যার , জানেন না কত বড় উপকার করলেন ।


পোকাটা অদৃশ্য হয় । জহিরের শরীর ঝিম ঝিম করে উঠে । শরীরের সর্বত্র তারা ছড়িয়ে পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ......লক্ষে , কোটিতে ......।

জহির বাইরে তাকায় , বাইরে অমাবস্যার নক্ষত্রহীন গাঢ় কাল অন্ধকার আকাশ ।
৩৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×