somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মৌতাত গোস্বামী শন্তু
একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।

ফাগুনী পূর্ণিমা : দোলের পৌরাণিক প্রেক্ষাপট

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবির রঙে রাঙা


দেবাদিদেব মহাদেব কর্তৃক কামদেব ভস্মীকরণ

ফাগুনী পূর্ণিমাই আজ দোল হিশেবে আয়োজিত। এই দোলের সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি। সেইসব কাহিনি, আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও উত্সবরে মেজাজের মোড়কে বর্তমান চেহারা পেয়েছে দোল। পৌরাণিক ইতিহাসকে স্মরণে রেখে আজও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে রীতি মেনেই পালন করা হয় হোলি। তারই কিছু টুকরো গল্প-
ধুন্ধি- রঘু বংশের পৃথু রাজার রাজত্বে ধুন্ধি বলে এক রাক্ষসী ছিল। ছোট ছোট শিশুদের দেখলেই ধরে খেয়ে ফেলত ধুন্ধি। মহাদেবের কাছ থেকে বরপ্রাপ্ত ধুন্ধি জানত, তাকে মারার ক্ষমতা কোনও দেবতার, মানুষের, অস্ত্রের এমনকী প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও নেই। তবে কিছু উন্মত্ত বালকের হাতে তার প্রাণশঙ্কা রয়েছে। ধুন্ধির উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজা পৃথু তাঁর পুরোহিতের কাছে পরামর্শ চান। রাজ পুরোহিত বলেন, ফাল্গুন মাসের পূর্নিমায় যখন পৃথিবী থেকে শীত চলে গিয়ে বসন্তের আবির্ভাব হয়, সেই ক্ষণে কিছু বালক যদি কাঠ ও ঘাসের স্তুপে আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে ঘুরে নেচে, গেয়ে, তালি বাজিয়ে মন্ত্র পাঠ করে, তবে ধুন্ধির মৃত্যু হবে। সেই থেকেই দোল পূর্নিমার আগের সন্ধ্যায় এই রীতির চল হয়। উত্তর ভারতে এর নাম হোলিকা। বাংলায় দোলের আগের দিন ন্যাড়াপোড়ার মাধ্যমে এই যজ্ঞ করা হয়। অশুভ শক্তির হাত থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করার উত্সব হোলিকা। অন্যদিকে জীর্ণ শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্তের আগমনকে স্বাগত জানায় হোলিকা দহন।
কামদেব - দক্ষ রাজা কতৃক শিবের অপমান সহ্য করতে না পেরে আগুনে ঝাঁপে দেন সতী। স্ত্রীর দুঃখে কাতর শিব পৃথিবী ভুলে গিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন। এই সময়ই হিমালয় কন্যা পার্ব্বতীও শিবকে কামনা করে ধ্যানে বসেন। শিবের এহেন আচরণে দেবতারা শঙ্কিত হয়ে কামদেবের দ্বারস্থ হন। কামদেব ধ্যানমগ্ন শিবকে লক্ষ্য করে তাঁর শর ছোঁড়েন। কামদেবের আচরণে শিব ক্ষিপ্র হয়ে ওঠেন ও তৃতীয় চক্ষু উন্মীলিত করে তাঁকে ভস্ম করে দেন। তবে কামদেবের শরের প্রভাবে পার্ব্বতীকে বিবাহ করেব শিব। পরে কামদেবের স্ত্রী রতির অনুরোধে তাঁকে পুররুজ্জীবন দান করেন শিব। পুরাণ মতে দোল পুর্নিমার দিনই কামদেবকে ভস্মে পরিণত করেছিলেন শিব। দক্ষিণ ভারতে এই দিন কামদেবের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালন করা হয় হোলি। আম পাতা ও চন্দন বাটা দিয়ে কামদেবের দহন জ্বালা উপশম করা হয়। রতির দুঃখে গানও গাওয়া হয়। তামিল নাড়ুতে কামবিলাস, কামান পাড়িগাই ও কাম দহনম এই তিন নামে আরাধনা করা হয় কামদেবের।
পূতনা- শিশু কৃষ্ণকে বধ করতে রাক্ষসী পূতনার দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজা কংস। সুন্দরী রমনীর ছদ্মবেশে কৃষ্ণকে তাঁর বিষাক্ত স্তন্যপান করায় পূতনা। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁর রক্তপান করে ও শেষপর্যন্ত পূতনার মৃত্যু হয়। হোলির আগের দিন রাত্রে কাঠ ও ঘাসের স্তুপ জ্বালানোর মাধ্যমে পূতনা বধের আয়োজন করা হয়। অশুভ শক্তির বিনাশ করাই এর লক্ষ্য। অপরদিকে শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্তের আগমন। হোলিকা- সারা পৃথিবীতে একাধিপত্য স্থাপন করেন রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপু। তাঁর দাবি ছিল পৃথিবীর সকলকেই শুধমাত্র হিরণ্যরশিপুর উপাসনা করতে হবে। কিন্তু তাঁর নিজের পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত। প্রহ্লাদ বহুবার হত্যা করার চেষ্টা করেও বিষ্ণর আশীর্বাদে ব্যর্থ হব হিরণ্যকশিপু। শেষ পর্যন্ত তাঁর বোন হোলিকাকে হিরণ্যকশিপু অনুরোধ করেন শিশু প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করতে। হিরণ্যকশিপু জানতেন বরপ্রাপ্ত হোলিকা আগুনে প্রবেশ করতে পারেন। হিরণ্যকশিপুর আদেশ পালন করেন হোলিকা। কিন্তু হোলিকা জানত না বর তখনই কার্যকর হবে যদি সে একা আগুনে প্রবেশ করে। অন্যথায় তার মৃত্যু হবে। ক্রমাগত বিষ্ণ নাম জপ করে রক্ষা পায় শিশু প্রহ্লাদ। সেই থেকেই উত্তর ভারতে দোল পুর্নিমার আগের দিন পালিত হয় হোলিকা দহন উত্সব। হোলি নামেরও উত্পত্তি হোলিকা শব্দ থেকেই। হোলিকা দহনের আগুন থেকে একমুঠো ছাই তুলে নিয়ে ঘরে রাখার রেওয়াজও প্রচলিত রয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। বিশ্বাস, এই ছাই ঘরে থাকলে রোগমুক্তি ঘটবে।
রাধা-কৃষ্ণ - কাল মেঘের মত গায়ের রং। তাই দুঃখের অন্ত ছিল না বালক কৃষ্ণর। এদিকে রাধার দুধে আলতা রং দেখে ঈর্ষাও জাগে মনে। মা যশোদাকে দুঃখের কথা জানালে যশোদা কৃষ্ণকে বলেন তাঁর মনের মত রঙে রাধাকে রাঙিয়ে দিতে। দুষ্টু কৃষ্ণ ফাঁক বুঝে রং ঢেলে দেয় রাধার মুখে। সেই থেকেই শুরু হয় দোল খেলার রীতি। কৃষ্ণ রাধা ও গোপিদের গায়ে লুকিয়ে দূর থেকে রং দিয়েছিল। পিচকারির প্রচলনও সেই থেকেই। মথুরা, বৃন্দাবন, বরসন, নন্দগাঁওতে এখনও এই ভাবেই উদযাপন করা হয় হোলি। অনেক জায়গায় রাধা-কৃষ্ণর মূর্তি নিয়ে পালকিও বের হয়।

~ আবির রঙে রাঙুক সবার তনু মন........
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৫৬
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×