এক কুম্ভকর্ণের কারণে আমাকে একবার সারারাত ছাদের টাংকির উপর কাটাতে হয়েছিল, তখন আবার আমি ছিলাম ভার্জিন (গুগল করে দেখলাম ইংরেজীতে ভার্জিন ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়- তাই জ্ঞানের জাহাজরা একশ হাত দূরে পিলিজ
আমি বিয়ে করি আমার প্রথম জবের দেড় বছর পর, এই দেড় বছরের প্রথম এক বছর বুয়েটের দুই ফ্রেন্ড আর আমরা জাহাঙ্গীরনগরের দুইজন-এই চারজন ব্যাচেলর ছেলে নিকুঞ্জ দুই এর একটা বাসায় ভাড়া ছিলাম। সেই বাসাতেই এই কাহিনী, সেদিন বাসায় তাওকীর আর তুষার ছিলনা, ছিলাম শুধু আমি আর সেই কুম্ভকর্ণ শরীফ। ২০০৯ সালের এই কাহিনী, তখন রাত ৯-১০টা পর্যন্ত নিয়মিত এক ঘন্টা লোডশেডিং হত, সেই সময়টায় আমি ছাদে চলে যেতাম আর হবু বউয়ের সাথে ফোনে কথা বলতাম, এফএম রেডিওতে গান শুনতাম, টাংকির উপর শুয়ে আকাশের চাঁদতারা দেখতাম আর এসব শেষে কারেন্ট আসারও প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর বাসায় ফিরতাম। প্রতিদিন ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে গেলেও সেই বিশেষ রাতে চাবি নিতে ভুলে গিয়েছিলাম এবং শেষমেশ সেটাই কাল হল!
রাত বারোটার পর বাসায় গিয়ে কলিং বেল দেই, পাগলের মত দরজা ধাক্কা দেই, মোবাইলে কলের পর কল, মেসেজ কিন্তু সেই কুম্ভকর্ণের ঘুম কিছুতেই ভাঙেনা। একবার পাশের ফ্ল্যাটের সদ্যবিবাহিত ভাই দরজা খুলে উকি দেন কিন্তু কাহিনী শোনার পর কিছু না বলেই আবার দরজা লক করে দেন। আমার মোবাইল থেকে ব্যর্থ হয়ে ওদিকে আমার হবু বউও বারবার মোবাইলে কল দেয় কিন্তু শরীফের কোন সাড়া নেই। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে সারারাত ছাদেই কাটাতে হবে মেনে নিয়ে রোমাঞ্চ অনভুব করতে করতে ছাদে ফিরে যাই। পরদিন অবাক হয়ে শরীফকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা মোবাইল নাহয় সাইলেন্ট ছিল এতবার কলিংবেল, দরজা ধাক্কাধাক্কি এসবেও তোমার ঘুম ভাঙেনি? অদ্ভুত! শরীফ খুব মজার রিপ্লাই দিয়েছিল সে নাকি দরজা বন্ধ করে রুমের মধ্যে ঘুমের ঘোরে ভেবেছিল, বাথরুমে সে লাইট জ্বালিয়ে এসেছে কিংবা কেউ হয়তোবা ঠিকভাবে ফ্লাশ করেনি এজন্য আমি চিল্লাচিল্লি করছিলাম তাই সে উঠে দেখবার প্রয়োজন মনে না করে কুম্ভকর্ণের সুখনিদ্রায় হারিয়ে গিয়েছিল আবার!!!
আমার অবশ্য সেরাতে ছাদে খারাপ কাটেনি, দুজনের মোবাইলের ব্যালেন্স, চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফোনালাপ, রাতের আকাশের অদ্ভুত সুন্দর ভিউ আর সাততলায় ছাদে উথালপাতাল বাতাসে ভালোই লেগেছিল এই অন্যরকমের অভিজ্ঞতা! কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ছিল আমার আম্মুর রিএকশন এই কাহিনী শুনবার পর, সারারাত আমি একাকী ছাদে ছিলাম জেনে আম্মু বেশ কিছুদিন চিন্তিত ছিল, মাঝরাতে অসহায়ভাবে ছাদে ঘুমিয়ে আছি দেখে তার একমাত্র ছেলের দিকে কোন পরী (জ্বীনদের ফিমেইল ভার্সন) আবার কোন কুনজর দেয়নিতো!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




