জাঁকালো শীত পড়েছে। রেল লাইনের ধারে কালাইয়ের রুটির দোকানে ভীড়। স্টেশন সরগরম - সেদ্ধডিম , ঝাল মুড়ি। অপেক্ষা আর ব্যস্ততা। জবুথুবু যাত্রীরা চায়ের দোকানে , অনবরত টুংটাং শব্দে চা চিনি আর দুধের মিশেল। কিছুক্ষন পরে হাজির হবে আন্তঃনগর। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের ছোট শুরু করবে। ট্রেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আপনারা হয়তো খেয়াল করেননি। স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় নিঃশ্বাস ফেলার মত একটা শব্দ হয়। আমি অনেক খেয়াল করেছি। সামান্য একটু সময়ের অবসর , আবার ছুটে চলা। দীর্ঘশ্বাস বৈকি। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ভাবি খুব। স্টেশনে কোলাহল বাড়ছে। সবারই সামান্য অবসর। তারপর আবার ছুটে চলা। গৌন্তব্যে পৌঁছনো। আমি চুপচাপ বসে আছি। কিছুক্ষন পর আমিও উঠে দাঁড়াবো। আন্তঃনগরের মত দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পুউউ ঝিক ঝিক.....
প্রিয়মুখ গুলো ফেলে কিংবা কে জানে ভুলে যাওয়া মুখ গুলো আচমকা স্মৃতির জানালায় আবছা আবছা আলোয়। কোনো এক আন্তঃনগর ট্রেন ছুটে চলতে চলতে এই লাইন থেকে ওই লাইনে মোড় নেয় , ঠিক যেন গল্পের মত। জীবনের গল্পের মত।
ছুটে চলা ট্রেন এক লাইন থেকে আরেক লাইনে গিয়ে নিরন্তর জীবনের গল্প বলে। সবার ই আসলে গল্প থাকে, দীর্ঘশ্বাস থাকে ! মানুষের জীবন ঠিক ছুটে চলা কোন ট্রেনের মত। ফেলে আসা শহর ছেড়ে , সুদূরের কোন আনন্দ নগরের সন্ধানে। ছুটেই চলা শুধু।
শিরোনামহীন আমার খুব পছন্দের ব্যান্ড। তাদের একটা গান ট্রেন। স্বপ্নচূড়া – ৩ নামের একটা মিক্সড অ্যালবাম এ বের হয়েছিল ২০০৭ সালে। ওই সময় গুলোতে অনেক গান শুনেছি। ইদানিং আর শোনা হয় না।
কিছুটা জেনে কিছুটা না জেনে
আঁধার নামা পুরনো শহরে
প্ল্যাটফর্ম ছুয়ে ক্লান্ত দেহে
অভিমানী পদচিহ্ন রাখে
অভিমানী এক ট্রেনে
করিডর ধরে হেঁটে যায়
একা একা স্বপ্ন অচেনা
জানালার বুকে চোখ জুড়ে
সুদূরের আনন্দনগর ।
ধীরে ধীরে ভেসে যায় চোখে শেষ প্রিয়মুখ
তবু যদি থেমে যায় সব কল্পনা
ছুঁয়ে দেখা স্মৃতি আর ছুঁয়ে দেখা আঁধার
ভেবে নেয়া শহরের ফেলে আসা পথ।
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৯