ঘুম থেকে উঠেছি খুব সকালে। রাতে ঢাকা থেকে ফুফাতো ভাইয়েরা চলে এসেছে , আনন্দের শেষ নেই। চাচাতো , ফুফাতো ভাইদের সাথে আড্ডা চলছে বাড়ির উঠোনে। সকালের নাস্তা এখনো করিনি। রান্নাঘরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল- আজ পরোটা, আলুভাজি আর সুজি। তবে নাস্তা নিয়ে আমাদের তেমন মাথা ব্যাথা নেই , আমাদের হুল্লোড় চললেই হলো।
হুট্ করে মেজ চাচা এসে হাজির। হাতে মিষ্টির প্যাকেট। আমি বললাম , কি মিষ্টি মেজচাচা ?
-রসগোল্লা !
আমাদের সবারই রসগোল্লা পছন্দ। ছোটোখাটো একটা শোরগোল হলো। সবার মুখে যেন রসগোল্লার রস এসে গেছে।
মেজ চাচা বলেন , ' দাঁড়া ! থাম। আগে বল খালি পেতে কে কয়টা রসগোল্লা খেতে পারবি ?'
আমার সবাই অবাক , ভাবছি - এ আবার কেমন প্রশ্ন !
রসগোল্লা গুনে খাইনি কখনো। মনে আছে একবার ১৬ তা খেয়েছিলাম। খালি পেতে অন্তত ১০ তা তো পারবোই। ভাবলাম বলেই দি ১০ টা ! তারপর ভাবলাম , না থাক। একেতে খালি পেট তারপর আবার মেজো চাচা। নিশ্চয় কিছু একটা আছে। মেজচাচার কথায় একটা 'ব্যাপার' থাকেই। খালি পেটে রসগোল্লা খেলে কি হয় কে জানে !
কেউ বললো , ৫ টা। কেউ ৭টা। কেউ ৩ টা।
মোটামুটি একটা প্রতিযোগিতা যেন! যেন আড্ডার এক নতুন আমেজ।
মেজচাচা বললেন , ' আরে থাম ! থাম !! তোরা খালি পেটে ১ টার বেশি রসগোল্লা খেতে পারবি না। '
বলে কি মেজ চাচা ! আমি তো এই মাত্রই বড়ফুফুর থেকে শুনে এলাম , খালিপেটে রসগোল্লা খেলে কোন সমস্যা হয় নাকি ? বড়ফুফু তো বললো অল্প খেলে সমস্যা নাই। বেশি খেলে একটু সমস্যা হতে পারে। তাহলে ৩/৪ টা খেলে নিশ্চয় সমস্যা হবার কথা না। আর মেজচাচা বলছে মাত্র ১ টা !
আমরা কেউ মানছি না। হৈচৈ করছি। মেজচাচা বললেন, 'আচ্ছা খা ! কে আগে খাবি শুরু কর। '
মেজচাচা রসগোল্লার প্যাকেট বাড়িয়ে দিলেন আমাদের দিকে।
৭টা খেতে চেয়েছিলো চাচাতো ভাই পরাগ। এসেই টুপ করে একটা রসগোল্লা মুখে পুড়ে গলদঃকরন করলো নিমেষেই। আরেকটা নিতে গেলেই মেজচাচা বলে উঠলেন , দাঁড়া ! থাম !! তোর কি আর 'খালিপেট' আছে ?
কিছুক্ষণের জন্য সবাই চুপ। স্তব্ধ। তারপর সবাই একসাথে হৈহৈ করে চিৎকার করে উঠলাম। কি মজা। কি মজা।
ভাবলাম , সামনের দিনগুলো বেশ আনন্দেই কাটবে।
তো প্রিয় পাঠক, আমি খালিপেটে কয়টা রসগোল্লা খেতে পারবেন?
চলবে....
পরবর্তী গল্পঃ শৈশবে নয়/ছয় এর হিসাব জানতাম না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৪