
করোনা মহামারীতে আমার উপর দিয়ে বড় একটা ঝড় গিয়েছিল। সীমিত পরিসরে অফিসে যাতায়াত শুরু হলো। যারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে এবং অফিস থেকে দূরে বাসা তাদেরকে অফিসে আসতে নিরুৎসাহিত করা হলো। আমার ছেলের বয়স তখন সম্ভবত দুইমাস। সেই ভয়েই অফিসের নিরুৎসাহিত করণে উৎসাহিত হলাম। একদিন শুনলাম আমার আর অফিসে যাওয়া লাগবে না। অর্ধেক বেতন দেয়া শুরু করলো এরপর একদিন না করে দিল।
সহ্য করতে কষ্ট হলেও কাউকে জানিয়েছিলাম না। এরপর একদিন এই শহরের উপর ভীষণ অভিমান নিয়ে বাড়িতে চলে গেলাম।
দীর্ঘ ২০ মাস পর আবার ঢাকায় ফিরে এলাম। চাকুরী জয়েন করলাম পুনরায়। রোজগারের একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকুরীর পাশাপাশি কিছু না করলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। করোনার আগে সেটা খুব একটা ভাবায়নি। বরং ভেবেছিলাম সময় তো আছেই, পরে দেখা যাবে। কিন্তু করোনা ধাক্কাতে প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল। খরচ বাড়তে শুরু করলো। জিনিসপত্রের দাম, যাতায়াত, অন্যান্য জীবন যাবনের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা গুলো নাগালের বাইরে চল যেতে লাগলো।
কিন্তু করোনার আগের রোজগার যা ছিল এখনো সেটাই আছে। এই টাকা থেকেই রিক্সাওয়াকে বাড়তি দিতে হয়। সিএনজি আগের থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। বাবুকে নিয়ে আগে উবারে উঠতাম, এখন নাগালের বাইরে বলে আনস্টল করে দিয়েছি। মুদির দোকানে মাসিক খরচ প্রায় ৩০ ভাগ বেড়ে গেছে। ৫৮ টাকার চাল এখন ৮০ টাকা। তেলের হিসাব আর কি বলবো।বাবু ফর্মুলা মিল্ক খায় সেটার দাম বেড়ে গেছে। বেকারীর বিস্কুট কিনতাম ৩০০ টাকা কেজি, সেটা এখন ৪২০ টাকা। অনেকদিন কেনা হয় না।
এগুলো বাদেও প্রয়োজনীয় অনেক সামগ্রী আছে। যেগুলো জন্য মাত্রাতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। সেই নির্দিষ্ট রোজগারের হিসাব আর মিলছে না। কারণ রোজগারটা তো আর বাড়েনি।
করোনার প্রভাবের আগে চাকুরীর পাশাপাশি বড় কিছু করার কথা ভাবতাম। কারণ তখনো পিঠ ঠেকেনি। করতেই হবে এমন তাগাদাও মনে আসেনি। কিন্ত আমরা এখন যে সময় পার করছি তাতে করে কিছু করার সময়ও চলে যাচ্ছে।
করোনাকালীন সময়ে বাড়িতে হোমমেড ফুড নিয়ে কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। কেক, পিৎজা, শর্মা, চাপ, গ্রীল, বসনিয়ান পরোটা আর বিয়ে বাড়ির জর্দা বেশ আলোড়ন তুলেছিল। সেখান থেকে চাকুরী না থাকাকালীন অবস্থায় অন্তত কিছু রোজগার হতো। কিন্তু সময় লাগতো প্রচুর। ৯ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত অফিস করে এটা চালিয়ে নেয়া একেবারেই সম্ভব না। অনেকেই অনলাইনে ইনকাম করে থাকেন। কিন্তু আমাদ এই ধরনের কোন কাজই জানা নেই, যেটা ৯ টা ৬টা অফিস করেও মেন্টেন করা সম্ভব।
মাঝে মাঝে অফিস সময়ের পরে এমন অনেকেই দেখা যায় যারা খাবার কিংবা গার্মেন্টস সামগ্রী নিয়ে বসে আছেন। ৩০০ থেকে ৩৭০ টাকায় কোয়ালিটিফুল প্যান্ট/শার্ট নিয়ে বসে থাকতে দেখি। যেটা তারা অনায়াসেই ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকাতে বিক্রি করতে পারে। এরা বসে অফিস শেষ করে। প্রতিদিন ৬টা থেকে ৯টা মানে এই ৩ঘন্টা তারা কার্টুন নিয়ে বসে থাকে। ১০ থেকে ১৫ টা বিক্রি করে দিনে ১৫০০ টাকা ইনকাম করে থাকে। মানে মাসে ৪৫ হাজার টাকা। চাকুরীর পাশে দূর্দান্ত একটা সাপোর্ট।
সামনে আরো খারাপ সময় আসছে। চাকুরীর পাশাপাশি অন্য কিছু নিয়ে ভাবা জরুরী। মাঝে মাঝে মনে হয় তেমন কিছু থাকলে হয়তো ঐ সময় এই শহর ছেড়ে চলে যেতে হতো না। আমার মনে হয় সবাইকে এই বিষয়ে ভাবা উচিত। আশারাখি কোন আইডিয়া বের হয়ে আসবে।
জানিনা এই পোষ্টটা শুধুই আমার জন্য কিনা। কিংবা হতে পারে এই পোষ্ট পর্যালোচনার পরে হয়তো অন্য কারো ইনকামের রাস্তা বের হলো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




