somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরা মাছের চোখ যায় যদ্দুরে

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





১.
জুম্মার নামাজ পড়ে এসে ভাত খেলাম খুব তাড়াহুড়া করে। কোথাও যাওয়ার আগে সব সময় আমার কেমন টেনশন কাজ করে। সেই ছোটবেলা থেকেই। কয়েকবছর আগেও বাড়ি থেকে ঢাকা আসার দিন সকাল থেকেই শুরু হত বমি , বাসের কথা শুনলেই বমি। কোন ওষুধেই কাজ হতো না। তবে এখন বমি না হলেও টেনশন কাজ করে। কোন রকম খেয়ে উঠে হাত ধুই। বৌ বলল , একলাই যাইবা আমারে নিবা না ?
আমি বললাম , আরে এই ভাষায় কথা বলছো কেন ?
বৌ হেসে বলে , তাহলে কিভাবে বলবো ? আমারে নিবা মাঝি লগে?
আমি হেসে ফেললাম , না না। এই শরীরে তোমার কোথাও যাওয়া চলবে না। সামনের বছরে আমরা তিন ব্লগার একসাথে যাবো ?
বৌ বললো , তিনজন ব্লগার মানে ?
আমি বললাম , কেন ? আমি, তুমি আর বাবু।
আমার বৌ আমার দিকে তাকায় । কি মায়া ! এই মায়ায় লুকিয়ে আছে অপেক্ষা।
আমি বললাম , তোমার ফোনটা দাও আর আমার টা রাখো।
বৌ অবাক হয়ে বললো , কেন ?
আমি বললাম , আরে বোকা ! আমার টা নরমাল ফোন। তোমার ফোনে তো ছবি তোলা যায়। প্রোগ্রামের ছবি তুলতে হবে না ?
-- তুমি মেয়েদের ফুল লতা পাতা লাগানো ফোন নিয়ে ঘুরে বেড়াবা ? কতবার বলি একটা ভালো ফোন কিনো।
-- কিনবো। কিনবো। কিডনীর ডোনার এখনো পায়নি।
-- কি বলো এইসব ??
আমি চুপ করে থাকি। কিডনীর বিক্রির কাহিনী সে জানে না।
-- কিছু না। এমনি। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক এশিয়ার সামনে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। কথা দিয়েছি আমি সবার জন্য অপেক্ষা করবো ।

২.
আমি দাঁড়িয়ে আছি।অপেক্ষা কষ্টদায়ক। আগে যখন সিগারেট খেতাম তখন অপেক্ষার সময় কেটে যেত সহজেই। এখন টের পাই। সিগারেট সম্ভবত ধূমপায়ীদের আশ্রয়। এই শহরে মেট্রো রেলের কাজ চলছে। নিমেষেই এখান থেকে ওখানে যাওয়া যাবে।কনস্ট্রাকশনের অজস্র ধূলিকণা বাতাসে উড়ে বেড়ায়। গাড়ীর ধোঁয়ায় সাথে মিশে পরিবেশ হচ্ছে আরো গুমোট। আমি আজ এইসব নিয়ে ভাবতে চাইনা। আজ বিশেষ দিন। আজকের এই খুশির দিনে বিষণ্ণ হয়ে এক কোন চুপচাপ বসে থাকা কোন কাজের কথা না। আমার অপেক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে। কাউকে দেখছি না। দেখলেই যে চিনবো এমনও না। আমি দাঁড়িয়ে আছি ব্যাংক এশিয়ার সামনে , ঠিক গলির মাথায়। ৩টা বাজতে ২০ মিনিট বাকি। অনেকেই হয়তো পৌঁছে গেছে।

তবে এমন অপেক্ষা আমি অনেক করেছি। বদরুন্নেসা কলেজের আশেপাশে সাত এলিফ্যান্ট রোডের মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একের পর এক সিগারেট শেষ করেছি। তখন বাংলা ফাইভ (৫৫৫) সিগারেটের দাম ছিল সাড়ে তিন টাকা। দেনদরবার করলে ১০ টাকায় তিনটা দিতো। এভাবে সাত নম্বর সিগারেট ধরাতেই তার দেখা মিলতো। সিগারেট ছেড়েছি কয়েক বছর হয়ে গেল। এখন আর কারো জন্য অপেক্ষা করতে সিগারেটের আশ্রয় নিতে ইচ্ছা হয় না। লিটন কিরমানী ভাইয়ের আসার কথা।দেরি হচ্ছে কেন ? উনি কি আসবেন না ? আমার কাছে কারো মোবাইল নাম্বার নেই। নাম্বার রাখাটা খুব একটা যুক্তি সঙ্গত মনে হয়নি। আমাদের পরিচয় লেখায় , কথায় কি আসে যায়! জানি খুব ঠুনকো যুক্তি , যেখানে আবেগের বহিঃপ্রকাশ বেশি। তবুও।

হাবিব স্যার আমার জন্য জায়গা রেখেছেন।আমাকে বললেন , আপনাকে অস্থির লাগছে কেন ? আমি বললাম , জানি না ! মনের ভেতর কেমন যেন হচ্ছে।
ভাই বসুন তো শান্ত হন। আমি একটু ঘুরে আসি। -- হাবিব স্যার উঠে দাঁড়ালেন। মিশে গেলেন পরিচিত ভিড়ে। প্যানিক ডিজঅর্ডার নিয়ে হামা ভাইয়ের সাথে একটু বসা দরকার। নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে চমৎকার একটি আর্টিকেল লিখেছেন। উনাকে দেখছিনা। একটু দূরে আপুরা কথা বলছেন। এখান থেকে ঠিক চিনতে পারছিনা। এগিয়ে গিয়ে কথা বলবো নাকি ? না থাক! আমার অস্থিরতা বাড়ছে।

সবাই ব্যস্ত। আড্ডারত। কাউকে ঠিক বাগে পাচ্ছি না। ব্লগের সিনিয়র ব্লগাররা নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় । ঠাকুর মাহমুদ স্যার , জিএস স্যার টরে টক্কা টরে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন। শ্রদ্ধেয় খাইরুল স্যার খাতাতে কি যেন লিখছেন বুঝতে পারছি না। আমি একটা প্রশ্নটা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। উত্তরটা জানা আমার খুব জরুরি। কাকে জিজ্ঞেস করবো ? আমি এদিক ওদিক তাকায়। ভৃগু দা কে পেলে হতো ,উনি দেখলাম কাভা ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন। হাত নাড়িয়ে কথা বলছেন , আঙুলের আংটি গুলো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। হুট্ করে নিজেকে একা মনে হতে লাগলো। এটা আমার পুরোনো রোগ। অনেক মানুষের ভিড়ে হটাৎ করেই কেন জানি একা লাগতে থাকে।
চেয়ারে বসে আমি পিছনের দিকে ফিরলাম। দেখি , অনেক পেছনে প্রায় কোনায় একজন বসে আছেন ।উনার কি আমার মত রোগ আছে নাকি। বিষণ্ণ ওই মানুষটার দিকে আমি এগিয়ে গেলাম। ঠিক করলাম উনার কাছেই জানতে চাইবো। কিংবা বলা চলে ওনার সঙ্গে খানিকটা সময় বসা যাবে। আমি এগিয়ে গেলাম , বললাম -- 'ভালো আছেন ? '
উনি চুপ থেকে বললেন - অস্থির হবেন না। আপনি যেই প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা - ‘জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন।'
আমি চুপ করে থাকি। পরক্ষনেই বলি , 'আমার কেন জানি মনে হয়েছিল আপনি আসবেন।' প্রতিউত্তরে তিনি কিছু বলেন না। মুগ্ধ নয়নে আমি সিলিঙের দিকে তাকায় , সিলিঙের ওপারে সুবিশাল আকাশ। ওই আকাশে তারারা জ্বলজ্বল করছে।

ব্লগারদের সমাগম বাড়ছে।ব্লগ ডে সফল হতে চলেছে। আশা , আকাঙ্খা ,উৎকন্ঠা আর ভালোবাসা বৃথা যাবে না। আমি ঝাপসা চোখে হাসিমুখ গুলো দেখি , প্রিয় মুখ গুলো দেখি ।



৩.
উপরের লেখাটা পোষ্ট করেছিলাম ১১তম ব্লগ ডে উপলক্ষে ২০১৯ সালে কাউন্ট ডাউন পোস্ট হিসেবে । মাঝেখানে কিছু বছর চলে গেছে। আমার এখন তিনজন হয়েছি। বৌকে কথা দিয়েছিলাম পরেরবার আমরা তিন ব্লগার একসাথে যাবো। আমার ছেলের নামে একটা নিক খোলা আছে , বড় হয়ে ব্লগিং করবে। ছেলের মা ব্লগ কম লিখলেও একটিভ থাকতে দেখি।
১১তম ব্লগডের সময় যারা ছিলেন তাদের অনেকেই এখন আর লেখেন না আগের মত। কেউ কেউ ব্লগ ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ বেশ কিছু বছর ধরে ব্লগ কে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন , আগলে রেখেছেন। টিকিয়ে রেখেছেন। জীবনের অতি প্রয়োজনীয় সময় থেকে যারা এখনো ব্লগে সময় দেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো।
আমাদের না বলে ব্লগার নূর মোহাম্মদ নুরু চলে গেলেন। গত ব্লগ ডেতে কথা হয়েছিল। উনার কথা খুব মনে হয়। ব্লগ অন্তঃপ্রাণ এই মানুষ কে নিশ্চয় সম্মানিত করা হবে। আসছে ব্লগ ডেতে।


প্রতীক্ষিত আরো একটা ব্লগ ডের ঘোষণা হয়ে গেল আজ।। উৎসাহ উদ্দীপনার মাঝে দিন কাটবে , সমাগত হবে মাহেন্দ্রক্ষণ ! আমি সার্বিক সফলতা কামনা করছি। ব্লগারদের মিলনমেলায় সামুর দুয়ার মুখরিত হোক। ভালোবাসা সতত !

গতবারের মতো এবারও নিশ্চয় কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করবে। আমার মত।



ছবিঃ ১১তম বাংলা ব্লগ দিবস উপলক্ষে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের ছবি অ্যালবাম
জোবাইর ভাইয়ের একটা পরিশ্রমী আর কষ্টসাধ্য ব্লগ


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×