১.
" কি শরীফ সাহেব? রমজানের প্রস্তুতি কেমন নিলেন?"
রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শরীফ সাহেব গত শুক্রবার দুহাত ভর্তি বাজার করেছেন। টোকাইয়ের মাথায় এক ডালা বাজার মাথায় তুলে দিয়েছেন। তাঁর হাতেও এক ব্যাগ বাজার। চাইলে টোকাইয়ের মাথায় তুলে দিনে পারতেন। কিন্তু বেশি কষ্ট হবে বলে দিচ্ছেন না। চার পদের মাছ কিনেছেন। কালিবাউশ , বোয়াল , রূপচাঁদা , দেশি কৈ । ভালো পাবদা না থাকায় আজ নেন নি। আগামী বাজারে দেখবেন বলে মনস্থির করেছেন।
জিনিসের দাম বাড়ছে । তিনি গরু , দেশি মুরগি , খাসির মাংশ কিনেছেন। সেহেরীতে তিনি দেশি মুরগি খেতে ভালোবাসেন।
পাকিস্তানি মুরগি হিসেবে পরিচিত সোনালি মুরগি কে অনেক বিক্রেতা দেশি মুরগি হিসেবে চালিয়ে দেয়। ঠিকমত না চিনলে বিপদ। সোনালী মুরগির পা মসৃণ, আর দেশি মুরগির পা খসখসে ও অমসৃণ। দেশি মুরগীর ঝুঁটি গাঢ় লাল রঙের, সোনালিরটা ফ্যাকাশে। সোনালী মুরগির চোখ গাঢ় , দেশিরটা লাল। দেশি মুরগীর ধারাল , পাকিস্তানির ঠোঁট ভোতা।
কেনার সময় এসব খেয়াল রাখতে হয়। শরীফ সাহেব দেখে বুঝে বাজার করেন।
আপাতত তিনি যা মাছ মাংস কিনেছেন তাতে তার ডীপ ফ্রিজ ভর্তি হয়ে যাবে। তাছাড়া পরেরটা পরে দেখা যাবে।
শরীফ সাহেব ভালো বেসন আনিয়েছেন গ্রাম থেকে। ছোলা, পেঁয়াজ, তিন পদের খেজুর কিছুই বাদ রাখেননি। রমজানে সব কিছুর দাম বাড়বে। এই দেশের কোন সিস্টেম আছে নাকি! এই দেশে মানুষ বাস করে? সে যায় হোক, রমজানের প্রস্তুতির কোন কমতি তিনি রাখেননি।
২.
আব্দুল করিমের মনটা বিশেষ ভালো নেই। বারবার মনে হয় রমজান আসতে আসতে নামাজটা ধরে ফেলবেন। বয়স হয়ে যাচ্ছে। জরুরী দোয়া গুলো মুখস্ত করে ফেলবেন।সবই ঠিক আছে শুধু বিতরের নামাজের দোয়া কুনূত এ এসে আটকে যাচ্ছেন । তার একটা নামাজ শিক্ষা বই কিনতে হবে। তিনি ঠিক করেছেন রমজানের আগেই সব গুছিয়ে ফেলবেন। এমন ভাবে ধরবেন আর ছাড়বেন না। আব্দুল করিম তেমন কোন খারাপ কাজ করেননি। সৎ ভাবে চলার চেষ্টা করেন। এইবার তিনি সব নামাজ পড়বেন। তারাবীহ পড়বেন। নিয়ত ঠিক থাকলে আল্লাহ নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন।
আব্দুল করিমের মেয়ে এবার প্রথম রোজা রাখবে। তিনি একদিন মেয়েকে বললেন, "মা জননী । তুমি ভোর রাতে কি খাইতে চাও?" মেয়ে বললো,"আমার বাপজান যা খাইবো তাই।" আব্দুল করিমের চোখটা ছল ছল করে। মেয়েটা তার কাছে কিছু চাই না। তবু তিনি ঠিক করেছেন এবার রমজানে তিনি মেয়ের জন্য একটা জায়নামাজ কিনে দেবেন আর সাথে একটা তজবীহ। বাইতুল মোকাররমের সামনে সুন্দর সুন্দর জায়নামাজ পাওয়া যায়। আর কিছু টাকা জমলেই তিনি সোজা চলে যাবেন কিনতে।
আব্দুল করিমের রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে নামাজ শেখার বই, মেয়ের জন্য জায়নামাজ আর তজবীহ। এটুকুই !
৩.
একটি পুরাতন ঘটনা।
নিহালরা চাচা ফুফু দাদারা একসাথে থাকে। নিহালের এবার প্রথম রোজা থাকবে । ওর বাবা সেই উপলক্ষে খাসির গোশত কিনেছে। নিজের ঘরে কেরোসিনের স্টোবে তার বাবা রান্না করেছে। নিহাল বাবার পাশে বসে রান্না দেখেছে। বাবার পাশে বসে রান্না দেখতে ভালো লাগে। বাবা একটা একটা মসলা দেন। পানি দেন। সুন্দর গন্ধ বের হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার বাবা লবন চেখে দেখার জন্য পিরিচে গোশত তুলে দেন। আজকের গোশত অনেক মজা হয়েছে। মনে হয়েছিল রাতেই খেয়ে নিতে। কিন্তু মাংস তো ভোর রাতে সেহরি করার জন্য ! তাই কিছু বলেনি। বাবা বাটিতে বাটিতে অল্প অল্প গোশত তুলে দিয়েছিলেন , সেটা চাচাতো ভাইদের ঘরে ঘরে দিয়ে এসেছে।
নিহালের প্রথম সেহেরি। উঠেছে অনেক আগে। দাদার ঘরে লাইট জ্বলে। দাদাও উঠেছেন। দাদা এবার রোজা থাকতে পারবেন না। বয়স হয়ে গেছে তো। উঠানের লাইট জ্বলছে। সবার ঘর পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
ভাত বাড়া হচ্ছে। খাসির গোশত স্টোবে গরম করা হচ্ছে। এই গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে বহুদূর। পাশের বাড়ির ফারুকরা নিশ্চয় গন্ধ পায়। ওরাও তো রোজা থাকবে।
'দাদু ভাআআই ?'
'জ্বি দাদা !' নিহাল ভেবে পাইনা। এই আলোই দাদা তাকে চিনলো কিভাবে !
সেহেরি খাইছো ?
না দাদা। খাবো। গোশত দিয়ে খাবো।
রোজা থাকতে পারবা তো ?
পারবো দাদা।
এখন কোথায় যাও।
ফারুকের বাড়িতে। খাসির গোশত দিতে। সেহেরি করবে ....
দাদু ভাই ?
জ্বি দাদা!
গোশত দিয়ে এসে একটু আমার কাছে আসবা ।
আচ্ছা। কেন দাদা ?
মাথায় হাত বুলায়ে দিবো।
দাদা নিহালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কাল থেকে রোজা। কিছুক্ষন পর আজান হবে। ভোর হবে। আলোকিত হবে চারিদিক।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:০৮