১.
প্রায় দুই সপ্তাহ পর দেখা হলো। কাছে থেকেও কতদূরে!
একসময় ইচ্ছে হলেই চলে যাওয়া যেত, ক্লাস শেষ করে সোজা স্টার কাবাব, এক কাপ চা।
সময় পাল্টাচ্ছে, উদ্যানে থাকছে না ঘাস, কংক্রিটে বাসা বাঁধছে কর্পোরেট
স্বপ্ন.... খবরের কাগজ বিছিয়ে সংসার পাতা হয়না অনেক দিন!
তারপরেও একটা দিনের জন্য সব উলট
পালোট হবে...একটা দিনের সেই হারানো সুর
বাজবে.. এইরাত তোমার আমার!
ভালো থেকো, কোন এক ছুটির দিনে আবার
দেখা হবে...।
--- স্বপ্নবাজ সৌরভ । ২৫.০১. ২০০৯।
২.
আজ বারোটায় কোচ। ভেড়ামারা ফিরবো। বরাবরের মত তোমাকে রেখে ভেড়ামারা চলে যাবো। বরাবরের মত ই বুকটা হু হু করবে, গলা আটকে আসবে! নিউমার্কেট থেকে বিকল্প পরিবহনে যখন উঠি ঠিক এক ই অবস্থা হয়েছিলো... এই বাসটায় উঠবো না, পরের বাসে যায়... তোমার পাশে আরো কিছুক্ষন থাকার জন্য ।
বাসে উঠার সাথে সাথেই চোখটা ভিজে গেল, এই অবস্থা প্রকৃতি তোমার দিকে তাকানোর ক্ষমতা এখনো দেয় নি। তার পরের তোমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম তুমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছো... বুঝলাম, প্রকৃতির ব্যবহার দুজনার জন্য ই সমান। সাত বছর ধরে হচ্ছে এখনো হয়... আসলে কংক্রিটে কর্পোরেট স্বপ্ন বাসা বাঁধলেও তোমার আমার চোখের জল আটকে রাখার দুঃসাহস রাখে না!
ভালো থেকো, ভালোবাসি.... ।
---স্বপ্নবাজ সৌরভ। ২২.১০.২০১০।
৩.
তুমি বললে, জানো আজ মনে হয় বৃষ্টি হবে?
আমার শরীরে জ্বর, হঠাৎ করেই শরীরটা আনচান করে উঠলো।
আমি বললাম, বৃষ্টিতে ভেজা মাটির গন্ধতোমার কেমন লাগে?
তুমি উৎফুল্ল হয়ে বললে, ভীষণ ভালো!
কিন্তু ঢাকা শহরে মাটি কোথায়?
নিখাদ মাটির গন্ধ নিতে হলে গ্রামে যেতে হবে।
আমি চুপচাপ তোমার কথা শুনছি--
তুমি আবার বলে উঠলে, আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর তাই না?
এখানে ভেজা মাটির গন্ধ, ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ! কোন কিছু না থাকার মাঝেও অনেক কিছু তাই না?
আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি--
জানালার ঠিক পাশে তুমি দাঁড়িয়ে।
বাইরের দিকে তাকিয়ে তুমি বললে, জানো আমার খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছে!
বলতে বলতে তোমার চোখ ঝাপসা হয়ে উঠছে!
আমি তোমার আপনজন আমি বুঝি। আমার শরীরে অসুখ, আমি তোমার দিকে তাকিয়ে।
তোমার চোখ আর আকাশ দুজনায় বৃষ্টির অপেক্ষায়!!
--- স্বপ্নবাজ সৌরভ। ১৭.০৩.২০১১।
৪.
হাসপাতালের ছোট একটা কেবিন। সাদা বেডকাভার,সাদা বালিশ। জানালার পর্দা গুলোও সাদা। রুমটা দোতলায়। জানলাটা খোলা। আমার মাথার কাছে অনেক গুলো বই। একটা বইয়ের নাম 'রুপেরডালি খেলা'! রাশিয়ান একটা বই।
নিচে কয়েকজন ছোট ছেলে ক্রিকেট খেলছে।ফর্সা ছিপছিপে কোঁকাড়া চুলে ছেলেটার হাতে একটা ব্যাট। ব্যাটে গোটা অক্ষরে ইংরেজিতে ইমরান খানের নাম লেখা, পাশে সিগনেচার। ঐ ব্যাটটা আমার।
আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখি। আমার শরীরে অসুখ।
দীর্ঘ ঘুমের মধ্যে ভাঙা ভাঙা অনেক গুলো স্বপ্নের একটি দৃশ্যপট। ছোট ছোট বেলা কেটেছে অসুখে অসুখে... এখনো পিছু ছাড়েনি।পৃথিবীর সকল ছানাপোনারা ভারো থাকুক। ইচ্ছের নীল রং আকাশ ছুঁয়ে যাক্।
---স্বপ্নবাজ সৌরভ। ১৭.০৯.২০১২।
৫.
সিএনজির ভেতর একবার মনে হলো আমি আর বাঁচবো না! আমি বোধহয় বমি করতে করতে মারাই যাবো।
সিএনজি চালক ভীত চোখে আমার দিকে তাকায়। জ্যামে আটকে থাকা রিকশা থেকে প্রেমিক প্রেমিকার জুটির প্রেমিকাটা বলে উঠলো, 'চাচা সিএনজি সাইড করান! মাথায় পানি দেন।'
প্রেমিক পুরুষটা ভ্রু কুঁচকায়।
বিকট শব্দে আর একবার বমি, তিতা তরল গুলো ছিঁটকে বের হয়।
উতলা সিএনজি চালক বলে, "বাজান, আপনের বাসা ঠিকানা বলেন।"
আমি আরেকবার বমি করতে করতে বলি, আমি মরবো না!
ইতিমধ্যে সিএনজি সাইড করা হয়ে গেছে। চায়ের দোকান থেকে পানি এনে মাথায় ঢালছে সেই ফুলওয়ালী মেয়েটি! কোথায় যেন বলে ছিলাম, ফুলওয়ালী মেয়েটা বেমালুম ভুলে যাবে ফুলের নাম!
আমি মরিনি। গত তিনঘন্টা আগে বাসায় এসেছি। বাসায় এসে আবার বমি। শেষ তরল পদার্থ টুকু ছিটকে পড়লো। আর বেশী কিছু মনে নেই। হাতরে হাতরে ফোনটা হাতে নিলাম... আমাদের বাংলাদেশের প্রেমিকা মেয়েটা, বুড়ো সিএনজি চালক, ফুলওয়ালী মেয়েটা কোন একটা কিছু কোনদিনই ভুলে না! ঠিক মনে রাখে।
---স্বপ্নবাজ সৌরভ। ২৬.০৯.২০১৩।
চলে যাওয়া দিন হাতড়ে ফিরি। ব্রেনসেলে জমাকৃত টুকরো টুকরো স্মৃতি গুলো দেয়ালে সেঁটে দেয়ার চেষ্টা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ২:৪৮