ভোর ৫টা ৫ মিনিটে খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়। বাসটির চালক সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারান। বাসটি রেলিং ভেঙে পল্টি খেয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এক্সপ্রেসওয়েতে এর আগেও বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়েছে। কিন্তু এবারই প্রথম বাস খাদে পড়ে ১৬ জন মারা গেছেন। এক্সপ্রেসওয়েতে চালকেরা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালান, যা এখানে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
১. অনেকের ধারণা সড়ক বাঁকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু জরিপ করে দেখা গেছে বাঁকে দুর্ঘটনা ঘটে ৩০ শতাংশ, আর বাকি সব দুর্ঘটনা ঘটে সরল বা সোজা সড়কে।
২. বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা দেখছেন, সোজা সড়কেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে, আর মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো।
৩. সারাদেশের সড়কগুলোর উপর দুইশর বেশি হাট ও বাজার রয়েছে। এই হাটবাজারের যানজটে পরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় চালককে। ওই চালকরা যখন গাড়ি নিয়ে সরল পথে আসে, তখন যানজটে নষ্ট হওয়ার সময় পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়।
৪.সমীক্ষা করে দেখা গেছে ৩০ শতাংশ গতিতে চলমান কোনো গাড়ির ধাক্কায় আঘাত পেয়ে আহত হলে বাঁচার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। কিন্তু ১০ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ৪০ গতির গাড়ির ধাক্কায় আঘাত পেয়ে আহত হলে বাঁচার সম্ভাবনা ৪৫ শতাংশে নেমে আসে আর ৫০ শতাংশ গতির গাড়ির ধাক্কায় আহত বাঁচার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ নেমে আসে।
৫. এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের গতি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কম গতি, মধ্যম গতি ও সর্বোচ্চ গতিসীমায় গাড়ি চালানোর জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া হয়েছে। যে গাড়ির যেমন গতি, সেই গাড়ি নির্দিষ্ট লেন ধরে চলাচল করবে। কিন্তু কোনো যানবাহনের চালকেরা ওই নিয়ম মানেন না। এক্সপ্রেসওয়েতে উঠলেই চালকেরা বেপরোয়া হয়ে যান। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর নেশায় মেতে ওঠেন।
৬. পদ্মা সেতুর সুফল পাওয়ায় ভাঙ্গা-মাওয়া-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। মহাসড়কে গাড়ি উঠলেই চালকেরা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালান। দ্রুত সেতু পার হতে পেরে এবং মহাসড়ক ফাঁকা পেয়ে নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে পারার কারণে চালকেরা কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চান। সেতু চালু হওয়ার পর যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই ঘটেছে।
৭. পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলায় চলাচলকারী অধিকাংশ বাস ও ট্রাকের রুট পারমিট নেই। ওই সব গাড়ির চালকেরা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালান। ছোট গাড়ির চালকেরা দক্ষ নন। দূরপাল্লার গাড়ি চলে অতিরিক্ত গতিতে। তখন সড়কে যান চালকেরা গতি সমন্বয় করতে পারেন না। এতে দুর্ঘটনা ঘটে।
৮. ৩ লাখ টাকা খরচ করে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করায় মালিকরা, কিন্তু এক হাজার টাকায় চালাকের ফিটনেস করাতে পারে না। চালকের চিকিৎসাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছে না মালিক পক্ষ। চালকরা তো নিজেরাই নিরাপদ নয়, তাহলে নিরাপদ সড়ক কীভাবে আসবে?
বাংলাদেশ অদক্ষ চালক ও হেলপার দিয়ে যানবাহন চালানো হয় । যাদের বড় অংশ গাঁজাখোর। তারা আবার অত্যধিক আত্মবিশ্বাস নিয়ে গাড়ি চালায় । মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালায় । বিপদজনক ওভারটেকিং করে । যানবাহনের ফিটনেস আছে কি নাই সেই তদারকি প্রশ্নাতীত।
লেখা আর ছবি : বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:১৬