somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহে রমজানের সওগাত-মানবতার জন্য অফুরন্ত রহমাত, ৩য় কিস্তি

৩০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের বিষয়: রোযার গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান।


সিয়ামের পরিচিতি ঃ
সাওম বা সিয়াম আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ সংযত হওয়া, বিরত থাকা , উপবাস করা বা পানাহার না করা। উর্দু ও ফারসী ভাষায় সাওমকে রোযা বলে। বাংলায়ও এটি প্রচলিত একটি শব্দ।
শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনার্থে সিয়ামের নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলে।

সিয়াম যাদের উপর ফরয
প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্ত বয়ষ্ক মুসলমান নর-নারীর উপর রমজানের সিয়াম ফরয।

সিয়াম পালন ওয়াজিব হওয়ার শর্ত
১. মুসলিম হওয়া। কাফিরের উপর সিয়াম ফরয নয়।
২. বালিগ হওয়া। নাবালিগের উপর ফরয নয়।
৩. রমজানের সিয়াম প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তির উপর ফরয হওয়া সম্বন্ধে জানা থাকা।
৪. মা’যুর বা অক্ষম না হওয়া।
৫. স্বজ্ঞান হওয়া। পাগলের উপর সিয়াম ফরয নয়।

সিয়াম সহীহ হওয়ার শর্তাবলী
১. সিয়ামের নিয়ত করা। অর্থাৎ মনে মনে সিয়াম পালনের ইরাদা করা।
২. মহিলাদের হায়েয নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া।

সিয়ামের ফরয সমূহ
সিয়ামের মধ্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকা ফরয ঃ
১. কোন কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
২. কিছু পান করা থেকে বিরত থাকা।
৩. যৌন বাসনা পূর্ণকরা থেকে বিরত থাকা।


সিয়ামের সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহ ঃ
১. সাহরীর ব্যবস্থা করা সুন্নাত।
২. সাহরী শেষ সময় খাওয়া মুস্তাহাব সুবহে সাদিক হতে যখন সামান্য বাকী।
৩. সিয়াম পালনের নিয়ত রাতেই করে নেয়া মুস্তাহাব।
৪. ইফতার তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব। অর্থাৎ সূর্যাস্ত হওয়ার পর অযথা বিলম্ব না করা।
৫. খুরমা খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব।

যে সব কারণে সিয়াম ভঙ্গ হয় এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হয় ঃ
১. সাহরীর সময় আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করলে।
২. সূর্য অস্ত গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার/পানাহার করলে।
৩. অনিচ্ছাকৃত ভাবে কিছু পেটের মধ্যে গেলে। যেমন: কুলি করার সময় কিছু পানি গলার মধ্যে চলে গেলে।
৪. কেউ জোর করে সিয়াম পালনকারীর মুখে কিছু দিলে তা কন্ঠনালীতে পৌঁছে গেলে।
৫. কোন নারীর সাথে কেউ জোর করে অথবা ঘুমে রেখে অথবা বেহুশ অবস্থায় সঙ্গম করলে ঐ স্ত্রী লোকের উপর কাযা আদায় করতে হবে।
৬. সাহরী খাওয়ার পর পান মুখে অবস্থায় প্রভাত হয়ে গেলে।
৭. ভুলে পানাহার করার পর সিয়াম ভেঙ্গে গেছে মনে করে দ্বিতীয়বার পানাহার করলে।
৮. কোন নফল সিয়াম স্বেচ্ছায় ভেঙ্গে ফেললে।
৯. দ্বিপ্রহরের পর সিয়াম পালনের নিয়ত করলে।
১০. ইচ্ছে করে মুখ ভরে বমি করলে অথবা মুখে অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে।
১১. দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত থুথুর চাইতে বেশী হলে এবং তা গলার ভিতর চলে গেলে।
১২. কোন স্ত্রী লোক সিয়াম পালন অবস্থায় গুপ্তাঙ্গের অভ্যন্তরে কোন ঔষধ বা তেল দিলে।
১৩. কোন মহিলা চিকিৎসার জন্য নিজে অথবা ধাত্রী তার আঙ্গুল লজ্জাস্থানে প্রবেশ করালে।
১৪. ইচ্ছাকৃত ভাবে যে কোন ধোঁয়া পান করলে বা নাকে গ্রহণ করলে। যেমন: বিড়ি, সিগারেট।
১৫. দাঁতের ফাঁকে আটকেপড়া চনাবুটের সমান খাদ্য বস্তু জিহবা বা খেলাল দ্বারা বের করে গিলে ফেললে।
১৬. নাকে নস্যি টানলে, কানে তৈল ঢাললে বা পায়খানার রাস্তায় ঢুস (সাপজিটরি) নিলে।
১৭. কোন কারণবশত : সিয়াম না রাখলে বা নিয়ত না করলে।
১৮. সিয়াম পালনকারীর মুখে গায়ের ঘাম বা চোখের পানি ঢুকে কন্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে গেলে।
১৯. সহবাস ব্যতিরেকে যৌন সম্ভোগের এমন কোন কাজ করলে যাতে সাধারণত বীর্যপাত হয়,এমতাবস্থায় সিয়াম ভঙ্গ হবে।
২০. যে কোন প্রকার যৌন সম্ভোগ বা যৌনান্দের চেষ্টা করলে এবং এ কারণে যদি বীর্যপাত হয় তা হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। এ জন্য শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।

যে সব কারণে সিয়াম ভঙ্গ হবে এবং কাযা ও কাফ্ফারা উভয়-ই ওয়াজিব হবে
১. সিয়াম পালনকারী ইচ্ছাকৃত ভাবে পানাহার করলে।
২. এমন ঔষধ ব্যবহার করলে যা পাকস্থলীতে প্রবেশ করতে পারে।
৩. সিয়াম পালনকারী নিয়ত করে পরে ভেঙ্গে ফেললে।
৪. কেউ সিয়াম পালন অবস্থায় যৌন কাজে লিপ্ত হলে, সে নারী হোক বা পুরুষ হোক অথবা কোন পুরুষ সমকামিতায় লিপ্ত হলে।
৫. কোন নারী পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হলো এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ নারীর লজ্জাস্থানে প্রবেশ করালো, এমতাবস্থায় বীর্যপাত হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় কাযা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে।
৬. কোন নির্বোধ বা রুচীহীন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে তার পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করায়, তা হলে উভয়ের রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাযা,কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে।
৭. ঘুমন্ত বা বেঁহুশ হয়ে পড়ে থাকা স্ত্রীর সাথে স্বামী সহবাস করলে স্বামীর উপর কাযা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে।
৮. কেউ এমন কিছু কাজ করলো যাতে সিয়াম নষ্ট হয় না, কিন্তু সে সিয়াম নষ্ট হয়েছে মনে করে পানাহার করলে কাযা ও কাফ্ফারা দুটিই দিতে হবে। যেমন- কেউ সুরমা/তেল লাগালো/স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরলো ও চুমো দিলো, তার পর সিয়াম নষ্ট হয়েছে মনে করে ইচ্ছা করে পানাহার করলো, তা হলে কাযা ও কাফ্ফারা দুটোই ওয়াজিব হবে।

সিয়াম এর কাযা ও কাফ্ফারার বর্ণনা

কাযা কাকে বলে ঃ কাযা অর্থ ক্ষতি পূরণ। সিয়াম কাযা করার অর্থ হলো, কোন শরীয়ত সম্মত কারণে সিয়াম ভঙ্গ হলে সে সিয়াম রমযানের পরে আদায় করা। যতটি সিয়াম ভাঙ্গা হলো, ঠিক ততোটি সিয়াম অন্য সময়ে আদায় করা।

সিয়াম কাযা আদায় করার মাসায়েল
১. কোন বিলম্ব না করে সুযোগ মত রমজানের সাওম কাযা আদায় করা উচিৎ। তবে ক্রমাগত করা জরুরী না।
২. কাযা সিয়ামের জন্যে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা জরুরী নয়।
৩. যদি রামযানের দু বছরের সাওম কাযা পরে থাকে , তাহলে কোন বছরের কাযা আদায় করা হচ্ছে তা নির্দিষ্টি হওয়া জরুরী।
৪. কাযা সাওম পালনের ক্ষেত্রে রাতেই নিয়ত জরুরী।
৫. কাযা সাওম আদায় করার পূর্বে আরেক রামযান আসলে, তাহলে প্রথমে রামযানের সিয়াম আদায় করতে হবে। পরে পূর্বের বছরের কাযা হওয়া সাউম আদায় করতে হবে।

কাফ্ফারা কাকে বলে ঃ কাফ্ফারা শব্দের অর্থ গোপন করা, ঢেকে রাখা, আবৃত করা। শরীয়তের পরিভাষায় কোন গুনাহর কাজকে ঢেকে রাখতে বা প্রতিরোধে যা কিছু দান করা হয়, তাকে কাফ্ফারা বলে। সিয়াম ভঙ্গের এমন কত গুলো কারণ রয়েছে সে সব কারণে সিয়াম নষ্ট হলে উহার কাযা ও কাফ্ফারা দুটিই আদয় করতে হয়।

সিয়ামের কাফ্ফারা আদায় করার মাসায়েল ঃ
১. রমজানের সিয়াম নষ্ট হলে একটি সিয়ামের জন্য কাযা একটি এবং কাফ্ফারা ক্রমন্বয়ে ষাটটি আদায় করা ওয়াজিব। মাঝে কোন সিয়াম ছুটে গেলে আবার নতুন করে ক্রমন্বয়ে ষাটটি সাওম পালন করতে হবে। কোন কারণে যদি সিয়াম পালনে অক্ষম হয় তা হলে ষাট জন অভাব গ্রস্তদেরকে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। অথবা ষাট জনের প্রত্যেক কে ছদকায়ে ফিতরের সমান অথবা মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
২. মহিলাদের জন্যে কাফ্ফারার এ সুবিধা আছে, হায়েযের জন্যে সিয়াম বাদ পড়লে ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে না। তবে হায়েয বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সিয়াম শরু করতে হবে।
৩. তবে কাফ্ফারার সিয়াম পালনের সময় নিফাসের অবস্থা হলে ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে।
৪. কাফ্ফারার সিয়াম পালনের সময় যদি রমযান এসে যায় তাহলে ধারাবাহিকতা থাকবে না।
৫. যদি একই রমযানের একাধিক সিয়াম নষ্ট করা হয়, তা হলে সব নষ্ট সিয়ামের জন্যে একই কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে।

যে সব কারণে রোজা শুরু করার পর রোজা ভেঙ্গে ফেলা যায়
১. হঠাৎ গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে।
২. তীব্র পিপাসায় প্রাণ নাশের আশংকা হলে।
৩. গর্ভবতী মহিলা বা তার গর্ভস্থিত সন্তানের আশংকা জনক অবস্থা সৃষ্টি হলে।
৪. দুর্বল ব্যক্তি সিয়াম পালনের দরুন জীবনের আশংকা হলে।
৫. হঠাৎ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে।
৬. প্রচন্ড ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগার দরুন কিছু পানাহার না করলে প্রাণের আশংকা হলে। এমতাবস্থায় সিয়াম ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি আছে, তবে পরে কাযা করে দিতে হবে।

যে সব কারণে সাওম পালন থেকে সাময়িক ভাবে অব্যহতি পাওয়া যায়
১. রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সিয়াম পালনের দ্বারা রোগ বেড়ে যাওয়া। আশংকা হলে। অথবা রোগ দুরারোগ্য ব্যধিতে পরিণত হওয়ার আশংকা থাকলে। অথবা আরোগ্য লাভে বিলম্ব ঘটার আশংকা করলে।
২. সফরে বের হলে। সফরের উদ্দেশ্য যা- ই হউকনা কেন।
৩. গর্ভবতী স্ত্রী লোকের যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সিয়াম পালনে তার গর্ভের সন্তানের অথবা তার নিজের ক্ষতি হওয়ার আশংকা হলে।
৪. স্তন্যদান কারিনী মহিলার জন্যে।
৫. ক্ষুধা-তৃষ্ণার অত্যধিক তীব্রতার কারণে।
৬. বার্ধক্য ও দুর্বলতার কারণে।
৭. জীবনের আশংকা থাকলে। কঠোর পরিশ্রমের কারণে অথবা কারো পক্ষ থেকে হুমকি দেয়ার কারণে অথবা নিষ্ঠুর ভাবে প্রহরিত হওয়ার কারণে অথবা তার কোন অঙ্গ কেটে ফেলা হয়।
৮. জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর জন্য। এ অবস্থায় সিয়াম পালন করলে দুর্বল হয়ে পড়ার আশংকা হলে।
৯. হুঁশ না থাকার কারণে।
১০. মস্তিষ্ক বিকৃত হলে। এসব কারণে সিয়াম পালনে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া যায়, তবে পরে তার কাযা আদায় করতে হবে।

যে সব কারণে সিয়াম পালন থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি পাওয়া যায় এবং বিনিময়ে ফিদিয়া দিতে হয়
কেউ বার্ধক্য জনিত কারণে খুবই দুর্বল হয়ে পড়লে, অথবা এমন কঠিন রোগে ভুগছে যে, সে সুস্থ হওয়ার আশা ক্ষীন এবং সিয়াম পালনের শক্তিও নেই। এমন অবস্থায় শরীয়ত এ ধরনের লোকের জন্য সিয়াম পালন থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তবে প্রত্যেক সিয়ামের পরিবর্তে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মিসকিনকে ফিদিয়া দিবে।

ফিদিয়ার পরিমাণ ঃ প্রত্যেক সিয়ামের পরিবর্তে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়াবে। অথবা একজন ফকীরকে সাদকায়ে ফিতরের পরিমাণ খাদ্য শস্য দেয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য যে,ফিদিয়া আদায় করা সত্বেও যদি রোগী সুস্থ হযে যায়,তাহলে সিয়াম গুলির কাযা করে দিতে হবে । আর ফিদিয়ার আলাদা সাওয়াব পাবে।

যে সব কারণে সিয়াম মাকরূহ হয় ঃ যে সব কারণে সিয়াম নষ্ট হয়না বটে কিন্তু ছওয়াব কমে যায়। আর সে কাজ গুলি মাকরূহ বা অপছন্দনীয় হয়। আর এখানে মাকরূহ দ্বারা মাকরূহে তানযিহী উদ্দেশ্য, তাহরীমী নয়।
১. মুখে খাদ্য দ্রব্য চিবানো। অবশ্য ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য চিবালে মাকরূহ হবেনা।
২. কোন জিনিসের স্বাদ গ্রহণ করা। তবে বদমেযাজী স্বামী অথবা মনিবের ভয় থাকলে তরকারী বা খাদ্য দ্রব্য জিহ্বা দিয়ে স্বাদ নেয়া যায়।
৩. স্ত্রীর ঠোঁট মুখে নেয়া বা খালী গায়ে জরিয়ে ধরা। সহবাস অথবা বীর্যপাতের আশংকা থাকুক বা না থাকুক।
৪. সিয়াম পালন অবস্থায় এমন কাজ করা যার দ্বারা শরীর এতটা দুর্বল হয়ে পড়ে যে,সিয়াম ভেঙ্গে ফেলার আশংকা হয়।
৫. বিনা কারণে মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা।
৬. কুলি করার সময় অথবা নাকে পানি দেয়ার সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা।
৭. অস্থিরতা প্রকাশ করা,ঘাবড়িয়ে যওয়া এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতা প্রকাশ করা।
৮. গোসল ফরয হওয়ার পর সুযোগ থাকা সত্বেও বিনা ওজরে সুবহে সাদিকের পর পর্যন্ত গোসল না করা।
৯. দিনের বেলা মাজন,টুথপাউডার,পেষ্ট বা কয়লা ইত্যাদি দিয়ে দাঁত মাজলে।
১০. গীবত করা, মিথ্যা বলা, গালি গালাজ করা, মারপিট অথবা কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করা।
১১. স্বেচ্ছায় মুখে ধোঁয়া অথবা ধুলাবালি গ্রহণ করা। তবে লোবান জ্বালিয়ে ঘ্রাণ নিলে, হুক্কা, বিড়ি-সিগারেট পান করলে সিয়াম নষ্ট হয়ে যাবে।
১২. আমানতের খেয়ানত করলে।
১৩. দাঁতের ফাঁকে বুটের চাইতে ছোট কোন খাদ্যকনা থাকলে তা বের করে গিলে ফেলা।

যে সব করণে সিয়াম মাকরূহ হয় না ঃ
১. ভুল করে খানাপিনা করলে, এমকি ভুলে স্ত্রী সহবাস করলে।
২. সিয়াম পালন অবস্থায় দিনের বেলায় স্বপ্নদোষ হলে।
৩. দিনের বেলায় সুরমা লাগানো, তেল মাথায় দেয়া, শরীরে তেল মালিশ করা, খুশবু গ্রহণ করা।
৪. স্ত্রীর সাথে শুয়ে থাকা, দেহ জরিয়ে ধরা, চুমো দেয়া যদি কামোত্তোজনার আশংকা না হয়।
৫. থুথু ফেলা ও গিলা মাকরূহ নয়।
৬. অনিচ্ছায় ধুয়া গলায় প্রবেশ করলো বা গলার মধ্যে মশা মাছি ঢুকে পড়লো।
৭. অনিচ্ছা সত্বে মুখ ভরে বমি হলে, কম হোক বা বেশী।
৮. মিসওয়াক করলে, তা শুকনো হোক বা ভিজা হোক, এমনকি তাজা নিমের মিসওয়াকের তিক্ত স্বাদ অনুভব করলেও।
৯. অধিক মাত্রা গরমে কুলি করা, হাত-মুখ ধোয়া, গোসল করা, ভিজে কাপড় গায়ে দেয়া।
১০. ইচ্ছা করে বমি করলে তা যদি সামান্য হয় এবং মুখ ভরে না হয়।

সিয়ামের নিয়তের মাসআলার বিবরণঃ
১. ‘নিয়ত’ অর্থ মনের সংকল্প। তাই নিয়ত করতে হয় মূলতঃ অন্তরে। তবে মুখে বলে নেয়াটা ভালো। রমাযানের সিয়ামের জন্য দি¦প্রহরের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময নিয়ত করা যায়। যদি সুবহে সাদিকের পর থেকে কোন পানাহার ইত্যাদি না হয়। সেহরী খাওয়াও নিয়তের মধ্যে শামিল। মনে রাখতে হবে নিয়ত ব্যতীত সিয়াম পালন আদায় হবে না।

সিয়ামের নিয়ত ঃ রাতে নিয়ত করলে বলবেন “আমি আগামীকাল মাহে রমজানের সিয়াম পালনের নিয়ত করলাম। আর দিনে নিয়ত করলে বলবেন “মাহে রমজানের আজকের দিনের সিয়াম পালনের নিয়ত করছি। উল্লেখ্য যে, আরবীতে নিয়ত করা জরূরী নয়, যে কোন ভাষায় বলা যায়।
২. নিয়ত করার পর সুবহে সাদিক হতে কিছু সময় বাকী থাকলে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি জায়িয।
৩. রমজানের প্রত্যেক সিয়ামের জন্য পৃথক নিয়ত করা জরুরী। পুরো রমজানের জন্য একবার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়।
৪. সিয়ামের নিয়ত রাতে করাই উত্তম। তবে তিন ধরনের সিয়ামের নিয়ত দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত করা দুরস্ত আছে।
ক. রমজানের চলন্ত সিয়াম পালনের জন্যে।
খ. যে কোন নফল সিয়ামের জন্য।
গ. যে মান্নতের সিয়ামের জন্যে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
৫. চার প্রকারের সিয়ামের নিয়ত সুবহে সাদিকের পূর্বে রাতেই করে নিতে হবে। সুবহে সাদিকের পর নিয়ত করলে যথেষ্ট হবে না।
ক. রমজানের কাযা সিয়াম পালনের জন্য।
খ. কাফ্ফারার সিয়াম পালন।
গ. মান্নতের সে সব সিয়াম পাালনে যার দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা নয়।
ঘ. যে সব নফল সিয়াম আদায়ের বেলায় যা শুরু করার পর কোন
কারণে নষ্ট হয়েছে।
৬. কেউ রামাজানের ফরযের পরিবর্তে নফল বা ওয়াজিব সিয়ামের নিয়ত করলেও রামাজানের সিয়ামই আদায় হবে।
৭. নফল সিয়ামের নিয়ত করলেই ওয়াজিব হয়ে যায়। সুবহে সাদিকের পরে ভেঙ্গে ফেললে কাযা করতে হবে। পক্ষান্তরে রাতে নফল সিয়ামের নিয়ত করার পর সুবহে সাদিকের পূর্বেই নিয়ত পরিবর্তন করলে কাযা লাগবে না।

সিয়ামের কতিপয় আদব:
সিয়ামের কতিপয় আদব ও শিষ্টাচার ঃ
১. কোন ব্যক্তি যদি শরীয়াত সম্মত কোন ওযর বশত সিয়াম পালন করতে পারলো না তাহলে তার জন্য এটা জরুরী যে, সে যেন প্রকাশ্যে খানা-পিনা না করে এবং বাহ্যিক ভাবে সিয়াম পালনকারীর মত হয়ে থাকে।
২. যার মধ্যে সিয়াম ফরয হওয়া ও সহীহ হওয়ার সকল শর্ত পাওয়া যায়, তার সাওম যদি কোন কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য ওয়াজিব যে, সে দিনের বাকী অংশ রোযাদারের মতো হয়ে থাকবে এবং খানা-পিনা ও যৌন ক্রিয়া থেকে বিরত থাকবে । এটা তার জন্য ওয়াজিব।
৩. কোন মুসাফির যদি বাড়ী পৌছে অথবা সে যদি মুকীম হওয়ার নিয়ত করে, তবে ঐ দিনের বাকী অংশ সিয়াম পালনকারীর মত থাকা মুস্তাহাব।
৪. কোন মহিলা যদি হায়েয অথবা নিফাস থেকে পাক হয়, তার জন্যেও দিনের বাকী অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব।
৫. দুপুরের পর যদি কোন বালক বালেগ হয় অথবা এ সময় কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তার জন্য দিনের বাকী অংশটুকু সিয়াম পালন করীর মতো হয়ে থাকা মুস্তাহাব।
৬. যদি কেউ ইচ্ছে করে সিয়াম নষ্ট করে, অথবা রাত আছে মনে করে যদি কেউ সুবহে সাদিকের পরে খানা খায়, তাহলে তার জন্য সারাদিন সিয়াম পালনকারীর মত থাকা এবং পানাহার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব।
৭. সিয়াম পালন শুরু করার পর যদি কোন মহিলার হায়েয শুরু হয়, তা হলে তার সিয়াম নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু এমতাবস্থায় তার উচিত পানাহার ত্যাগ করে বাকী সময় কাটানো।
৮. সালাতের জন্য যেমন সাত বছর বয়সে আদেশ দান ও দশ বছর বয়সে যে জন্য মারপিট করার নির্দেশ আছে, সিয়ামের জন্য ও সে নিয়ম পালন করা কর্তব্য।
৯. যদি কারো সিয়াম ছেড়ে দেয়ার অথবা, সিয়াম ভেঙ্গে ফেলার শরীয়াত সম্মত প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তার সিয়াম পালন না করার বিষয় যথা সম্ভব গোপন রাখবে। কারো সামনে পানাহার করবে না।
১০. রমজানের যে সব সিয়াম কোন কারণে রাখা হয়নি, তার কাযা আদায় করতে বিলম্ব করা উচিৎ নয়। যতো শীঘ্রই কাযা আদায় করা যায় ততোই ভাল।
১১. শরীয়াতে সিয়াম ক্বাযা করার অনুমতি থাকলেও যথা সম্ভব রমজানের সিয়াম পালনের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। রমজানে সিয়াম পালন করলে যে সওয়াব পাওয়া যায় অন্য সময় তা পাওয়া যায় না।


গত পর্ব
রমজান মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:২৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×