somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকার,অতঃপর...!!

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধীরকৃষ্ণায়মান সন্ধ্যা । ধানমন্ডি আট নম্বর ব্রীজ ঘেঁষা রবীন্দ্র সরোবর । প্রিয় কোলাহল ছাঁপিয়ে হিমির মুঠোফোনে বেঁজে ওঠে বিরহী সুর...। রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে পুরোনো প্রেমিকের ভরাট মৃদু কণ্ঠস্বরঃ তুমি কোথায় ? (আগমন পূর্বনির্ধারিত)

সদ্য বিবাহিতা,পরনের উজ্জ্বল শাড়ি আর ঠোঁটে ম্লান হাসি নিয়ে চুপিসারে গিয়ে দাঁড়ায় তার পাশে । হাতে কবিতার বই আর চোখে আবাক বিস্ময় নিয়ে সে তাকায় হিমির দিকে । আসন্ন সন্ধ্যার ম্লান আলো আর হিমির নির্লিপ্ততা কাটিয়ে ওঠে তিয়াস,"ক্যামন আছ"...?

কথা বাড়ে ধীরে ধীরে, সন্তর্পণে তিয়াসের তৃষিত হাত আশ্রয় নেয় কোমল মেহেদি মানচিত্রে । কম্পমান অধরে দ্বিধার দেয়াল পেরিয়ে সেও মাথা রাখে তিয়াসের কাঁধে। চুলের সোঁদা গন্ধে দ্রবীভূত মন নিয়ে, সে পাঠ করে শোনায় প্রিয় “বোদলেয়ার” হতেঃ

অনেক,অনেকক্ষণ ধ’রে তোমার চুলের গন্ধ
টেনে নিতে দাও আমার নিঃশ্বাসের সঙ্গে ;
আমার সমস্ত মুখ ডুবিয়ে রাখতে দাও তার গভীরতায়
ঝর্নার জলে তৃষ্ণার্তের মতো ;

....................................................................
....................................................................
তোমার চুলের আদরের রাশিতে আমি ফিরে পেয়েছি
ভালো একটা জাহাজের কেবিনে
অনেক ফুলদানি আর ঠাণ্ডা জলের কুঁজোর মাঝখানে
ডিভানে শুয়ে কাটানো দীর্ঘ ঘণ্টার আলস্য,

......................................................................
......................................................................
পুরোনো প্রেমে জারিত-তারিত হয় দুটি প্রাণী। ঝিরিঝিরি উঠে আসা সরোবরের আর্দ্র বায়ু সিম্ফনিক ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখে তাদের ।কতক্ষণ চলে গিয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই কারও। মঞ্চে এক অখ্যাত ব্যান্ডদল বিখ্যাত হবার স্বপ্নচূড়ায় গেঁয়ে চলেছে গানঃ “বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়ে না” । নৈকট্য নিকোটিন নেশায় বুঁদ তখন আরও কিছু কপোত-কপোতী...!

উষ্ণ জল পতনে সংবিত ফিরে পেয়ে তিয়াসঃ "কাঁদছ কেন, তোমার পায়ের নিচে এখন দামী গাড়ি আর হাতের পাশে আয়েশি জীবন, যা ছিল তোমার আরাধ্য! আমার তো বাড়ি-গাড়ি ছিল না,নেই" ।

"তুমিতো আমাকে কিছু না জানিয়ে হুট করেই বিয়ে করে ফেললে, একবারও ভাবলে না আমার কথা,কি করে পারলে এমন তুমি? ওসব বাড়ি-গাড়ি আমি চাই না। মনের সুখ হল প্রকৃত সুখ। ওই ধাড়ি লোকটাকে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না,বাবা আর মামারা এক প্রকার জোর করেই বিয়েটা চাপিয়ে দিল,ছেলের অনেক টাকা,খুব সুখে থাকবি"...!

অভাব অনুযোগ শেষ হলে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে তিয়াস । অব্যক্ত ভালোবাসা কাগজ-কালি আর নাম না লেখা কবির কবিতায় বন্দী করতে চেয়েছিল যে ষোড়শী,আজও তার স্পর্শগন্ধ যেন লেগে আছে সেদিনের সেই প্রথম চিঠিতে ! আর সে অতিপ্রিয় কবিতার কবির নাম তিয়াসের অদ্যাবধি অজানা ! চিঠি খুলে আওড়ায় সেই পুরোনো কবিতার লাইনগুলোঃ
............................................................
............................................................
তোমাকে দেখার সাধ এই চোখে মিটেনা কখনো
এই চোখ যেন আজ প্রজ্বলিত পাথরের ছাই !
দৃশ্যের ভেতর থেকে অতি দৃশ্যে দৃষ্টিকে ফুরাই

যদি কোন সময়ের সুক্ষতায় হেলায় ছড়ানো
প্রত্ন ভাংগা প্রস্রবণ ধারা হয়ে নেমে আস তুমি
আমার প্রত্যাশা যেন এই লোভে আজ মরুভুমি ।


ইত্যবছরে হিমির সাথে মাঝে মধ্যে কথা হলেও তিয়াসের বিয়ের পর এটা তাদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। ফোনে তাদের আলাপচারিতায় কখনো থাকতো সংসার,ক্যারিয়ার,জীবন যুদ্ধ, বেসিনের আউটলেট হতে তেলেপোকার বাচ্চা উদ্ধারের মতো তুচ্ছ ঘটনা অথবা কখনো হাবুডুবু বা সাঁতরানো নয়,যৌনতার সাগর তীরে নুড়ী কুঁড়ানোর নীরবতা..!

এর কিছুদিন পর,অনেক অনুরোধ আর বিবেকের সাথে বেশ কিছু বোঝাপড়া শেষে আজ এই মেঘসন্ধায় সে প্রথম এসেছে হিমির পরিপাটি-অভিজাত সংসারে । বিস্ময় আর অস্বস্তি নিয়ে সে লক্ষ্য করে বাসায় আর কেউ নেই দুজন ছাড়া । নতুন বাসা,নতুন আসবাব আর দেয়ালে ঝুলানো বিচিত্র পোর্টেটে ঘোর লেগে আসে মধ্যবিত্ত তিয়াসের । ভেতরের ঘোরের সাথে বাহিরের বেঘোর বজ্র আর এলোমেলো বৃষ্টি সে মোহময়তাকে করে তোলে যাতনাময়-কামনাময় ! সিডি প্লেয়ারে লো ভল্যুমে বেজে চলেছে গানঃ “জল ডাকে...আগুনও টানে_আমি পড়ি মধ্যখানে...”

"কি ব্যাপার জন্ম দিনের পার্টি কই"...?
"বাসায় লোকজন কই"...?
"হাবি কই"...?

চোখে পরাজিত হাসি নিয়ে সে বলে,হাবি ভুলে গেছে আমার জন্মদিনের কথা তাই আজ আমি ভুলে থাকবো তাকে এবং আজকের এই বন্ধ্যা সন্ধ্যায় মাতাল হবো শুধু তুমি আর আমি...বলেই সে বেঁধে ফেলে তাঁকে আষ্টপৃষ্ঠ আলিঙ্গনে ।

দীর্ঘ আঁচে ঘন হয়ে আসা দুধের মতো ঘনীভূত হয়ে আসে আবেগ । দীর্ঘদিনের সঞ্চিত সখ্যতা আর চিরায়ত কামনার ধোঁয়ায় স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়..! রুদ্রবীণার ঝড়ে কম্পিত কামিনীর অধর স্পর্শ করে তিয়াসের তর্জনী। কামনা আর বিবশতায় আনত মুখ যখন তিয়াসের কম্পমান বুকে প্রশ্রিত ঠিক তখনই মুঠোফোনে বেঁজে ওঠে বেথোফেন সিম্ফনী। চমকে ওঠে সে! মুঠোফোনের চার ইঞ্চি পর্দায় ভেসে ওঠে চেনামুখ,মাদক নয়নে চেয়ে দ্যাখে তার চার বছরের জীবনসঙ্গী পুনম । দুষ্টুমিভরা চোখে যেন বলছেঃ কি ব্যাপার ফোন দিচ্ছ না কেন,ব্যাস্ত_অফিসে কাজের বুঝি খুব চাপ...?

নির্বিকার সে তাকিয়ে থাকে ফোনের ছোট্ট পর্দায় । মনের বড় পর্দায় চকিতে ভেসে ওঠে চার বছরের প্রেমময় সংসার, মান-অভিমান,সুখ-দুঃখ,ফুলসজ্জায় তাদের অনভিজ্ঞ মিলন স্মৃতি । তিয়াস ভাবে সে সত্যিই খুব ব্যাস্ত,ফাঁকি দেওয়ার শিখরে ! বিকারগ্রস্ততা আর অপরাধবোধ গ্রাস করে ফেলে তাঁকে । নিজেকে বিচ্যুত করে নেয় অপ্রস্তত প্রণয় আয়োজন হতে ।

চোখ বেঁয়ে নোনা বৃষ্টি নামছে,মনের কোনের জমাট অন্ধকার-পাপ গলে গলে পড়ছে সে নোনা জলের সাথে...!

উৎসর্গঃ সুপ্রিয় ব্লগার "লেখোয়াড়" ভাইকে,

যার শব্দ যাদুতে বিমোহিত,
যার ছন্দ মায়ায় মাতাল অথবা
অযথাই আলোড়িত হই !!




সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৫৯
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×