‘হ্যালো, রাফিদ বলছিলাম, আপনি কি অধরা’
‘জি, আমি অধরা। ভাল আছেন?’
ভাল আছেন কথাটার কোন উত্তর না দিয়ে, রাফিদ আসল কথাটাই বলল, ‘মানে…… আ… আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।‘
‘জি অবশ্যই, বলুন’
‘না আসলে ফোনে না, সামনা সামনি, আজকে অফিসের পর ফ্রি আছেন?’
‘জি আছি, কিন্তু আমি আসলে বুঝতে পারছিনা ব্যাপারটা কি, হঠাৎ আমার সাথে কথা?’
‘প্লিজ মানা করবেন না, আজ কে বিকালে একটু আসবেন ধানমন্ডি লেইকে?’
‘ঠিক আছে আমি আসব।‘
আশ্বিনের বিকেল, সূর্য খুব তাড়াতাড়ি হেলছে পশ্চিমে। শেষ বিকেলের আলো মেখে অধরা আগাচ্ছে।
হাই হ্যালোতে না গিয়ে, অধরা প্রশ্ন করলো, ‘এবার বলেন কেন এতো জরুরি তলব?’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাফিদ উত্তর দিলো, ‘আমি ওই দিনটির জন্য দুঃখিত’
‘কোন দিনটি?’
‘আপনাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলাম এবং ঠিক তার পরে যেই কারণে আমি এবং আমার পরিবার আপনাকে মানা করে দিয়েছিলাম, আশা করি পরেরটুকু আপনার আর বুঝতে সমস্যা হবে না’
‘এতো দিন পর এই কথাটা কেন আসছে, সেটা কি জানতে পারি?’
‘দেখুন, আপনি বিচক্ষণ, একেবারেই কিছু বুজতে পারছেন না সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলবেন না।‘
‘দেখুন রাফিদ, সেই সময় আমাকে না বলার একমাত্র কারণ ছিল আমার গায়ের রঙ। আমি আমার গায়ের রঙ কেন্দ্রিক কটূক্তিতে খুব
ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্ত। আলাদা ভাবে এই ব্যাপার গুলো আমাকে আর কষ্ট দেয়না। বরং আমার এই গায়ের রঙেই আমি খুশী, আমার গায়ের রঙ আমাকে শিখিয়েছে বাহ্যিক বৈষয়িকতাকে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলে, নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে, যার মাঝে কোন ফাঁক নেই। আমি সত্যি চাই, আমার জীবনে যিনি আসবেন, তিনি আমার যোগ্যতার প্রতি সম্মান রেখেই আসবেন‘
‘অধরা, আমি কেন সেদিন আপনাকে বুঝলাম না? আমি যে ফাঁপা একটা পুতুল নিয়ে সংসার করছি, যার গণ্ডি শুধুই, মেইক-আপ, সেলফি, স্নাপ চ্যাট-এ পশু-পাখি সাঁজা, আর এই সব কিছু মিলিয়ে বন্ধুদের সাথে প্রতিনিয়ত নিজেকে কম্পেয়ার করা। মেয়েরা বৈষয়িক হয় যানতাম, কিন্তু……’
রাফিদের কথা শেষ হওয়ার আগেই, অধরা যেন খপ করে কথাটা ধরে ফেলল, ‘শুধু মেয়েরাই কি বৈষয়িক হয় রাফিদ? সমাজের পাকে চক্রে পরে, আপনার মতো আরও অনেক পুরুষরাও কি বৈষয়িক নয়? আপনি বৈষয়িক ছিলেন বলেই, আমার গায়ের আবরণ আপনাকে আমার ব্যাপারে কিছুই জানতে দেয়নি। আর যাকে ফাঁপা পুতুল বলছেন, তারা ফাঁপা পুতুল কেন হয় জানেন? কারণ সমাজে তাদের গায়ের আবরণের কদরটা অনেক বেশি, তাই তারা ভিতরটাকে ফাঁপা রেখে, উপরের আবরণটাকেই ঘষামাজা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, ফাঁপা থাকার দায়টা কিন্তু তাদের একার নয়। বিয়ের আগে কি আরমিনের জগতটাকে যাচাই করে দেখেছিলেন? ওর পছন্দ অপছন্দ? সেই আবরণটার কাছেই ধরা দিয়েছেন। তবে এখন কেন এতো আফসোস?
সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ, স্ট্রিট লাইটের নিচে আবছায়া মতো দুই জন পথিক নিশ্চুপ হাঁটছে।
রাফিদের মন বিক্ষিপ্ত। বিক্ষিপ্ত মন ভাবে, ‘অধরা বুঝি সত্যি অধরা, তাই আমার মতো নগণ্য মানুষদের কাছে অধরারা কখন ধরা দেয় না’।
প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্ব পড়তে হলে ঃ
http://www.somewhereinblog.net/blog/Shottoboti
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪