ভারতের মুম্বাইতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল দেশের শান্তিকামী মানুষ উদ্বিগ্ন ও বিচলিত না হয়ে পারেনি। আমরা সকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই । পাশাপাশি আমরা এটাও মনে করি, যে সব নেপথ্য কারণে এসকল অনৈতিক ঘটনার সুত্রপাত হয়ে থাকে সে সব বিষয়ের দিকে এখনই বিশ্ববাসীর নজর দেয়া উচিত।
নিকট অতীতে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বাংলাদেশের র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) খুব চমৎকারভাবে সামাল দিতে পেরেছে। এজন্য র্যাবকে আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত করা না হলেও র্যাবের এ দৃষ্টান্ত আন্তর্জাতিক ভাবে অনুসৃত হতে পারে। সন্ত্রাস নির্মূলে এমন সাফল্যের নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। একই সময়ে সারাদেশে বোমা হামলা চালানোর মত শক্ত এবং কুশলী নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে র্যাব যেভাবে সন্ত্রাস মোকাবেলা করেছে তা থেকে বিশ্ববাসীর শেখার আছে অনেক কিছু।
সন্ত্রাস যদি রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক মদদে না হয়, তাহলে রাষ্ট্র সহজেই তা নির্মূল করতে পারে। এখন কথা হল রাষ্ট্রীয় মদদে সন্ত্রাস হবে কেন? কোন বিশেষ সম্প্রদায়কে নির্মূল করার জন্য কিংবা বিশেষ কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রাষ্ট্রীয় মদদে সন্ত্রাসের ঘটনা খোদ ভারতেও অসংখ্য। মুম্বাইয়ের ঘটনায় একতরফাভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে মুসলিমদের উপর এর দায় চাপানো এবং এক শ্রেণীর পত্র-পত্রিকায় এ ঘটনাকে ভারতের ইলেভেন হিসেবে দাঁড় করিয়ে পাকিস্তান আক্রমনে ভারতকে উসকে দেয়া আমাদেরকে তা-ই ভাবতে বাধ্য করছে।
ভারত যদি (মুসলমানদের উপর নতুন মাত্রায় অত্যাচার শুরুর কোন বাহানার জন্য) এ ঘটনা না ঘটিয়ে থাকে । তাহলে তাদের উচিত একতরফা ঘোষনা থেকে সরে আসা এবং বাংলাদেশ সহ পকিস্তানের সাহায্য নিয়ে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের মুখোস উন্মোচন করা।
অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণে আমেরিকাকে এমনিতেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে হচ্ছে। তাই মুসলিম নিধনের এ কাজটায় অত্যন্ত চতুরতার সাথে তারা ভারতকে জড়িয়ে ফেলতে চাচ্ছে। ভারতের বোঝা উচিত, যে পাকিস্তান নিজের দেশের এ্যমেচার সন্ত্রাসীদের ধরতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে, সে পাকিস্তানের পক্ষে এমন পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানো মোটেও সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার আরো উন্নত সমরকুশলতা আরো উন্নত মস্তিষ্ক।
নিজের মঙ্গলের জন্যই এখানকার প্রতিটি দেশের উচিত আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাস বিরোধী সহযোগীতা সংঘ গড়ে তোলা। পরস্পরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি না করে এখনই প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা দরকার। ভারত নিশ্চয়ই এত তাড়াতাড়ি বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের মূলমন্ত্র ”ডিভাইড এন্ড রুল” এর কথা ভুলে যায়নি। নয়া উপনিবেশবাদের এই যুগে এখানকার হিন্দু মুসলমানের মধ্যে নতুন করে বিভক্তির মন্ত্র কে জাগাতে পারে, তাতে কার স্বার্থ রক্ষিত হবে সেটাও নিশ্চয় ভারতের আঁচ করতে পারার কথা। পাশাপাশি ভারতের কংগ্রেসকে ও ভাবতে হবে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের কথা। আমরা লক্ষ্য করেছি যখনই বিজেপির জনপ্রিয়তার পারদ কমতে শুরু করেছে তখনই নতুন কোন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাই ভারত-পাকিস্তান শান্তি আলোচনার প্রেক্ষিতে এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হয়তো অনেককেই অবাক করেনি।
কংগ্রেসকে যেমন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ (হিন্দু উগ্রতাবাদ) নিয়ে ভাবতে হবে, তেমনি এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশকে ভাবতে হবে এ অঞ্চলের সামগ্রিক নিরাপত্তার কথা। তাই সময় থাকতেই নিজস্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্রুত সন্ত্রাস বিরোধী আন্তঃদেশীয় টাস্কফোর্স গড়ে তোলা দরকার। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে র্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। আর যদি এমন কোন টাস্কফোর্স গড়ে তোলা একান্তই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়; তাহলে অন্তত, ভারতের উচিত র্যাবের সাহায্য নিয়ে তাদের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী ঘটনা সমুহের একটা সুরাহা করা ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





