ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। সেই বৃটিশ আমল থেকেই ।
কিন্তু এবারের হামলাটি অনেক দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।হামলার পরপরই তথ্য প্রমান ছাড়াই এর জন্য পাকিস্তানকে আমেরিকা ও ভারত একযোগে দায়ী করতে শুরু করে। ফলে অনেকেই মনে করছেন খুব পরিকল্পিতভাবেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
মহামন্দার কারণে আমেরিকা সম্ভবত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার এতদিনকার অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছে। তাই সেখানে তার যোগ্যতম সাগরেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্যই হয়তো এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হলো, এ অঞ্চলে ভারত যত শক্তিশালী হবে চীনের প্রভাব বলয় তত সঙ্কুচিত হবে।চীনকে সরাসরি আক্রমনের কাজটা এখনই করতে চাইছেনা আমেরিকা। এ জন্যই এ অঞ্চলে চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধু পাকিস্তানের উপর কিছুটা টার্গেট প্রাকটিস করে নিচ্ছে হয়তো। এতে ভারতকে যেমন খুশী রাখা সহজ হবে, তেমনি তাদের পরিকল্পনা মতই ভারত তাদের ফাঁদে পা দিবে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও একটি বিবেচ্য বিষয়। পাকিস্তান-ভারত শান্তি আলোচনা চলছে , আবার বিজেপির জনপ্রিয়তার পারদও কিছুটা নীচের দিকে। সুতারাং নিজস্ব স্টাইলে কিছু একটা করার তাগাদা তাদের মধ্যে থাকতেই পারে। এ ঘটনা পরবর্তী নির্বাচনে ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করার ঘোষনা ইতোমধ্যেই বিজেপির তরফ থেকে চলে এসেছে।সুতরাং এর পিছনে কাদের হাত রয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যেমন মুসকিল, তেমনি এতে অনেকগুলো পক্ষ একই সাথে জড়িত এমন ধারনাও একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায়না।
সবশেষ খবর হল, পাকিস্তান ইতোমধ্যেই লস্কর-ই-তৈয়বার বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেয়া শুরু করেছে। তাহলে কি আমরা বুঝবো যে, হামলার সাথে পাকিস্তানকে জড়িয়ে ভারত ও আমেরিকা যে বিবৃতি দিয়েছে তা সত্য! ভারত যেমন তথ্য প্রমান ছাড়া পাকিস্তানকে দুষতে কসুর করেনি পাকিস্তান ও তেমনি তথ্য প্রমান ছাড়া লস্কর-ই-তৈয়বার বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে দেরী করেনি। এতে অন্তত একটা বিষয় প্রমান হয়ে গেল ইসলামী জংগীবাদ শুধু অমুসলিমদের হাতিয়ার নয়, অনেক মুসলিম দেশ ও নিজেদের ব্যর্থতা এ সব সংগঠনের ঘাড়ে বেমালুম চালিয়ে দিচ্ছে।নিজেদের লাভের জন্যই অনেকে যেমন ইসলামী জংগীবাদ পুষছে, তেমনি আসন্ন সভ্যতার দ্বন্দ্বে ইসলামকে আগে থেকেই বেকায়দায় ফেলা গেল।
এখানে একটা বিষয় আমেরিকাকেও ভাবতে হবে, যেখানেই তারা শত্রু দিয়ে শত্রুকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছে সেখানেই তাদের পালিত শত্র্রু শেষাবধি তাদেরই শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানের ইরান এবং আজকের আফগানিস্তান একসময় তাদেরই সরবরাহকৃত অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত হয়েছিল। চীনকে শায়েস্তা করার জন্য ভারতকে তার আজকের সমর্থন চীনকে যেমন দুর্বল করতে পারবেনা, তেমনি আগামীর পৃথিবীতে আমেরিকার আরেকজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করাবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমেরিকা হান্টিংটনেই এখনো মজে আছে। আগামীর পৃথিবীতে ইহুদীবাদ এবং হিন্দুবাদই যে আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তা আজ সচেতন পাঠক মাত্রেরই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমেরিকাসহ গোটা পাশ্চাত্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর ইহুদীদের দখলে অনেক আগে থেকেই। আমেরিকার রাজনীতিতে ইহুদীদের নগ্ন হস্তক্ষেপের বিষয়টি অনেক আমেরিকানই ভাল চোখে দেখছে না। অনেকেই মনে করেন আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিও পরিচালিত হয় ইহুদীবাদের স্বার্থ বিবেচনা করে। ভারতও সাম্প্রতিক সময়ে আইটি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে অনেকের চেয়ে এগিয়ে। তাই ইসলাম কিংবা চীনের সাথে দ্বন্দ্বের অনেক আগেই আমেরিকাকে তাদেরই পোষা ইহুদীবাদ ও হিন্দুবাদের মোকাবেলা করতে হবে।
আগামীর পৃথিবীতে তাই কাউকে শত্রু বানিয়ে কেউই সুবিধা করতে পারবেনা। পৃথিবী জুড়ে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এবং সবচেয়ে নিপীড়িত জাতি মুসলমনরা। তারা সবাই সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়নি, তবু তাদের মধ্য হতে যে কয়জনই এ পথ বেছে নিকনা কেন তাতেই মহাপরাক্রমশালী আমেরিকার ঘুম হারাম।(এই গোষ্ঠীগুলোই একসময় আমেরিকার মদদে গড়ে উঠেছে।) সুতরাং সময় এসেছে যুদ্ধের পরিবর্তে বন্ধুত্ব ও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার।
আমরা এ গ্রহটাকে ভবিষ্যতে কেমন দেখতে চাই তা এখনই নির্ধারিত হয়ে যাবে। আমরা যদি আজকের এই পারস্পরিক হানাহানি থেকে বেরিয়ে এসে সবার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে না পারি, তাহলে এতদিন ধরে জমতে থাকা নিউক্লিয়ার ওয়েপনগুলো ফুটতে হয়তো খুব বেশী সময় নিবেনা।পারস্পরিক শত্রুতা এবং অবিশ্বাস কখনোই আমাদেরকে সুন্দর আগামী উপহার দিবেনা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





