somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শার্লক হোমস- দ্য সেমিফাইনাল প্রবলেম

০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নভেম্বরের শেষ দিকে। বাইরে খুব বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন। হাতে তেমন কাজকম্ম নেই বলে ঝিম মেরে একটা মেডিক্যাল জার্নালের পাতা ওল্টাচ্ছিলাম। এমন সময় দরজায় ঠকঠক করে কড়া নাড়ার শব্দ হতেই ফায়ারপ্লেসের কাছ থেকে হোমস ‘হ্যাঁচ্চো’ বলে একটা চিৎকার করে উঠল। বেচারা গতকাল বৃষ্টির মাঝে একটা কেসের তদন্ত করতে গিয়ে সর্দি বাঁধিয়ে বসেছে। হাঁচির গতিবেগ আরেকটু বেশি হলে সম্ভবত এমনিতেই দরজা ছিটকে খুলে যেত। কষ্ট করে আমাকে আর উঠে যেতে হতো না। যাই হোক- দরজা খুলতেই ওপাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোক আমার নাক বরাবর চোখ রেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, ‘মিস্টার শার্লক হোমস?’

আমি জবাব না দিয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে এলাম। হোমস লোকটাকে দেখামাত্রই অযথা ঘনঘন পাইপ টেনে নাক-মুখ দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া ছাড়তে শুরু করলো। ভদ্রলোক নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘আমার নাম শামসুল। পুরো নাম শামসুল ইসলাম। বাড়ি বাংলাদেশে। অত্যন্ত এক জটিল রহস্য সমাধানের জন্য আপনার কাছে এসেছি।’

হোমস দাঁতের কোণা দিয়ে পাইপটা ধরে রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘রহস্য সমাধানের জন্য পুরো নাম বলার প্রয়োজন নেই। রহস্য কিসের সেটা বলুন। জটিল না সরল সে আমি বুঝবো!’

মিস্টার শামসুলের সুদীর্ঘ রহস্যজনক বক্তব্যের সারসংপে অনেকটা এরকম- তিনি ব্রিটেনে আসার আগে বঙ্গবাজার থেকে একটা প্যান্ট আর একটা শার্ট কিনেছিলেন। লন্ডনে এসে দেখলেন তার শার্টে কয়েকটা বোতাম উধাও এবং প্যান্টের জিপারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এসব শার্ট-প্যান্ট তিনি লাগেজ থেকে যাত্রাপথে কোথাও বের করেননি।

সব শুনে হোমস মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ‘হুম, আপনার সমস্যাটা বেশ জটিল। ওয়াটসন তুমি কাগজ-কলম নিয়ে কয়েকটা নোট নাও।’

আমি অবশ্য এর মধ্যে তেমন কোন রহস্য খুঁজে পেলাম না। কিন্তু হোমস কী পেল কে জানে?

আমি কিছু না বলে জার্নালটা রেখে কাগজ-কলম হাতে নিতেই হোমস বলতে শুরু করলো, ‘প্রথমত, হতে পারে যে এই প্যান্ট তৈরি করেছিল তার হয়তো কোনো জিপারের দরকার হয় না। দ্বিতীয়ত, যার জন্য তৈরি করা হয়েছিল তিনি হয়তো প্যান্টের জিপার ছাড়াই চলাফেরা করতে অভ্যস্ত।’

তারপর হোমস অনেণ ঝিম মেরে বসে রইলো। আমি কাগজে ততক্ষণে মিস্টার শামসুলের একটি কাল্পনিক প্যান্টের ডিজাইন আঁকা শুরু করে দিয়েছি। সেই প্যান্ট ভর্তি জিপার।

এসময় হোমস চোখ খুলে বলল, ‘মিস্টার শামসুল, আপনি কি প্যান্ট-শার্ট দুটো সঙ্গে এনেছেন?

মিস্টার শামসুল হাসিমুখে মাথা নেড়ে বললেন, ‘আমার ব্যাগেই রয়েছে সেই শার্ট আর প্যান্ট।’

‘ঠিক আছে, আপনি তাহলে ওগুলো বের করুন। আমি ততণে কয়েকটা জরুরি ফোন সেরে নেই।’ এ কথা বলে হোমস পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করার সময় আড়চোখে নিজের প্যান্টের জিপার লাগানো আছে কি-না সেটাও দেখে নিল।

মোবাইলে রিং দিয়ে ওপাশ থেকে হ্যালো শুনতেই হোমস বলল, ‘স্যার আর্থার কোনান ডয়েল বলছেন?’

তারপর স্যারকে মিস্টার সামাদের সমস্যার কথা খুলে বলল হোমস।

সব শুনে স্যার বললেন, ‘ওহে বুদ্ধু, প্যান্টে জিপার নেই তো কী হয়েছে? বোতাম আছে কি-না দেখ।’

ধমক খেয়ে হোমস টেবিলে রাখা প্যান্ট উল্টেপাল্টে দেখে বলল, ‘জ্বী স্যার। জিপারের জায়গায় কয়েকটা বোতাম আছে।’

‘তাহলে তো হয়েই গেল। জিপারের জায়গায় বোতাম কাজ করবে’, বলে ফোনটা রেখে দিলেন স্যার কোনান ডয়েল।

সমস্যার সমাধান নিয়ে মিস্টার শামসুল চলে যাবার পর হোমস এবার আমাকে পেয়ে বসলো, ‘আচ্ছা ওয়াটসন, একটা বিষয় ল্য করেছো? প্যান্টে জিপারের জায়গায় যে কয়টা বোতাম আছে- শার্টেও ঠিক সে কয়টা বোতামই নেই! এখন প্রশ্ন হচ্ছে শার্টের বোতামগুলো প্যান্টে গেল কিভাবে?’

আমি হোমসের প্যাঁচাল শোনা বাদ দিয়ে আবার জার্নালটা পড়তে শুরু করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×