রাফি আজ বড় একা, নিস্বঙ্গতার কালো আঁধারে সে আজ নিজেকে খুজে ফিরছে, সব কিছু আজ তার কাছে শূন্য মরুভূমি । মনে হচ্ছে জীবনের ভালোলাগার অংশগুলো কমে আসছে আর রঙ্গিন সপ্নগুলো আজ তার কাছে ধূসর । সে নিজেও বুঝতে পারছে না, কেন এমনটি হচ্ছে? তার মনে একটি কথা প্রায়ই উঁকি দিচ্ছে, সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? বিশ্বন্নতায় ছেয়ে আছে পুরো মন । আজকাল কারো সঙ্গেই তার আর কথা বলতে ভালো লাগে না । ভালো লাগে না আর হাসতেও । কিভাবে হাসবে? হাসিটা তার সাথে কি চরম রসিকতাই না করল!
সে আগে প্রচুর হাসতো কিন্তু আজ তার হাসিতে যেন আগের মত আর সে প্রান নেই । তার হাসি দেখে যেন মনে হয় যেন কনকণে শীতে ফাঁটা ঠোঁটের রুক্ষ নিস্প্রাণ হাসি । আগে সে তার বন্ধুদের সাথে নিজে গিয়ে আড্ডা দিত এবং সেই হত তাদের আড্ডার প্রাণ । আজ তার এসব কিছুই ভালো লাগে না । বন্ধুরা আজ তাকে ডাক দেয় কিন্তু সে যেন তাতেও সারা দেয় না। বন্ধুরাও আজ বুঝতে পারছে না যে, গত এক সপ্তাহে রাফির কি হয়ে গেল যে, সে পুরোপুরি যেন অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে গেছে । বন্ধুরাও মাঝে মাঝে ঠাট্টার ছলে বলে যে, “তুই সত্যি বোধাই পাগল হতে চলেছিস রাফি” । কিন্তু তাতেও রাফি সাড়া না দিয়ে তাদের মাঝ থেকে চলে যায় ।
বাবা-মার খুব আদরের ছোট সন্তান রাফি । বাবা-মার মতে সে খুব চুপচাপ আর শান্ত প্রকিৃতির ছেলে । তার বন্ধুদের সংখ্যাও খুব সীমিত । বান্ধবি তার ছিল না বললেই চলে । কারণ সে মেয়েদের সাথে নিজে থেকে কখন কথা বলতো না । সে কখনই বাসা থেকে দূরে কোথাও গেলে সে তার বাবার সাথে যেত ।
বর্তমানে রাফি ঢাকার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে । এই প্রথম সে একা তার বাবা-মাকে ছেড়ে এতো দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এ থাকছে । নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু ও বিচিএ তাদের জীবন যাএা । বন্ধুদের সাথে আড্ডা, পড়াশোনা ও একাকিত্ত এই তিন এ মিলে ভালোই চলছিল তার জীবন । গত এক সপ্তাহে হঠাৎ করেই যেন সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেল তার ।
রাফি গান শুনতে ভালোবাসে এবং সে তার অবসর সময়টাতে গান শুনে আর কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট এই সময় ব্যয় করে । হঠাৎ করেই ইন্টারনেটে একটি মেয়ের সাথে পারিচিত হয় রাফি । সে তার বন্ধু হয় এবং সে তার সাথে ইন্টারনেটেই মেসেজ আদান প্রদান করে । এভাবেই তাদের মাঝে বন্ধুত্যের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । মেয়েটিকে দেখেই রাফির খুব ভালো লাগে কারণ মেয়েটি দেখতে ভীষণ সুন্দর । মেয়েটির নাম অনামিকা।
একদিন হঠাৎ চমকে ওঠে রাফি তার মেসেজ ইনবক্সে সেই মেয়েটির মেসেজ দেখে । সে তার মেসেজ খুলে আরও চমকে যায় । কারণ মেয়েটি তার ফোন নাম্বরটি রাফিকে দিয়ে ফোন করতে বলে এবং বলে যে, তার নাকি কিছু জরুরি কথা আছে । প্রথম প্রথম রাফি ভীষণ ভয় পায় । সে ভেবে পায় না সে কি করবে? সে ভাবে, কি বলতে চায় মেয়েটি তাকে? আর সেই বা কি বলবে মেয়েটিকে? কারণ সে তো মেয়েদের সাথে খুব একটা কথা বলে না । তারপরও সে অনেক সাহস করে যথাসময়ে মেয়েটিকে ফোন করে ।
ফোন করে সে প্রথমে তার পরিচয় দেয় । তারপর তাদের মাঝে অনেক কথা হয়, যেন তারা অনেক আগে থেকেই পরিচিত । মনে হচ্ছিল, কথা যেন আর শেষ হতে চায় না তাদের । মেয়েটি রাফির সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চায় যেমন, রাফির পরিবার, কোথায় পড়াশোনা করে সে, এমন কি তার একান্ত ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কেও, যে তার নিজ্বস্ব কোন পছন্দ আছে কিনা, এসব? রাফিও তার সম্পর্কে অনামিকাকে সব বলে এবং মেয়েটিও তাকে তার নিজের সম্পর্কে রাফিকে অনেক কিছু বলে । সে রাতে কথা বলার পর রাফি অনেক খুশি ছিল। তার মনে হয়েছে যেন সে স্বর্গ পেয়ে গেছে ।
এভাবেই আনন্দে কাটতে থাকে রাফির দিনগুলো । কারণ এই দিনগুলোর মাঝে মাঝেই তার যোগাযোগ হত অনামিকার সাথে ইন্টারনেট এ মেসেজ আদান প্রদান ও সেল ফোন এ কথা বলার মাধ্যমে এবং এক পর্যায়ে তারা তাদের ছবিও আদান প্রদান করে ইন্টারনেটে । এর মাধ্যমে তাদের মাঝে একটি ভালো সম্পর্কের সৃষ্টি হয় এবং রাফির মনে অনামিকার জন্য একটি অন্যরকম ভালোলাগার জন্ম হয়। সে আস্তে আস্তে মেয়েটিকে ভালোবাসতে শুরু করে কিন্তু সে তাকে কখনও বলতে পারে না । সে তার সাথে বন্ধুত্যের সম্পর্কই চালিয়ে যায়।
রাফির একটি শখ আছে যে সে মাঝে মাঝে কবিতা লিখে । সে তার লেখা কিছু কবিতা অনামিকাকে মেসেজ করে পাঠায় এবং সে অনামিকাকে তার কবিতার মাধ্যমেই বোঝাতে চায় যে, সে তাকে কতটা ভালোবাসে। এতে অনামিকাও ভালো হয়েছে এমন মন্তব্য করে। এসব কিছু মিলিয়েই রাফির মনে অনামিকার প্রতি ভালোবাসা আরো গাঢ় হতে থাকে এবং সে তার প্রতি দূর্বল হয়ে যায়।
এক রাতে অনামিকার সাথে কথা হচ্ছিল রাফির। কথার মাঝে হঠাৎ করেই অনামিকা রাফিকে বলে যে, তার একটি ছেলেকে ভালো লাগে কিন্তু সে ছেলেটিকে কখনও সাহস করে বলতে পারে নাই যে, সে তাকে ভালোবাসে । এমনকি সে জানেও না যে, ছেলেটি তাকে ভালোবাসে কিনা? অনামিকা রাফিকে বলে যে, সে রাফির সাথে বন্ধু হিসাবে কথা বলবে কিন্তু সে তার মনের ঐ জায়গাটি রাফিকে কখন দিতে পারবে না। এ কথা শোনার পর রাফির মনে হল যেন তার মনের ভিতর থেকে সবকিছু কে যেন ফাঁকা করে নিয়ে গেল। সে এতই কষ্ট পেল যে, তার মুখ থেকে আর কোন কথাই বের হচ্ছিল না।
তারপর সে মনে অনেক সাহস জোগায়ে মেয়েটিকে বোঝাতে চেষ্টা করল এবং বলল, “অনামিকা আমাকে তোমার বন্ধু হিসাবে একটি সুযোগ দাও এবং আমাকে কিছু সময় দাও। এরপরেও যদি আমি তোমার মনের এই স্হানটাই জায়গা না করে নিতে পারি তাহলে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি যে আমি নিজেই তোমার বন্ধু হিসাবে তোমার ঐ কাঙ্খিত জনকে পেতে সাহায্য করব।” এ কথা শোনার পর অনামিকা রাফিকে জানায় যে, সে তার সিদ্ধান্ত তাকে পরে জানাবে যে, সে রাফিকে এই সুযোগটা দিবে কি না?
এই ঘটনার পর থেকেই রাফি এখন সব সময় এ রকম চুপচাপ থাকে। সে মাঝে মাঝে ভাবে যে, তার তরীতো মাঝ দরিয়ায় ডুবে যাচ্ছে আর পাড়ে দাড়িয়ে লোকজনেরা তা খুব মজা নিয়ে দেখছে কিন্তু তাকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না । সে আরও ভাবে, যদি অনামিকা তাকে না বলে তবে সে কি করবে? সে তাকে কি বলবে? সে তাকে কি বলবে, যাতে সে তার কথা বুঝবে, সে তার হবে? তাকে তার মনে স্থান করতে সে সুযোগ দিবে? কারণ এই অল্প কিছু দিনেই সে সেই অজানা মেয়েটিকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে । সে এখন যে কোন মূল্যেই তাকে কাছে পেতে চায় । সে তাকে তার জীবণ সঙ্গী করতে চায় । কিন্তু সে জানে না সে কি করবে? কিভাবে সে অনামিকাকে বুঝাবে যে সে তাকে কত ভালোবাসে? এই অনিশ্চয়তার উওর আজ সে কোথায় খুঁজবে…..?
ধন্যবাদ,
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, এতক্ষণ আমার এই লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য । তবে আমি এতক্ষণ যা লিখেছি তা পুরোটাই একটি সত্য ঘটনা । আমি জানি না যে, আমি কতোটা সুন্দর ভাবে ঘটনাটা আপনাদের সামনে উপস্হাপন করতে পেরেছি? তবে আমার সাধ্য মত চেষ্টা করেছি মাএ। এখন আমি আপনাদেরকে একটা দায়িত্ব দিতে চাই যে, প্লিজ আপনারা আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য আমাকে জানাবেন যে, এই পরিস্থিতিতে যদি অনামিকা তাকে সুযোগ না দেয় তখন রাফি কি করতে পারে বা কি বলতে পারে যাতে অনামিকা তার হয়ে যায়? আপনারা আপনাদের মন্তব্য অবশ্যই জানাবেন ।
আবারও, ধন্যবাদ সবাইকে…।
আলোচিত ব্লগ
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা
বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।