মার্চের শেষে সেই যে শুরু হলো লকডাউনের নামে সব কিছু কন্ধ, কখনো সাধারন ছুটি, বিশেষ প্রয়োজনে বাহির হওয়া যাবে, অফিস খুলবে অফিস খুলবে না, গাড়ি চলবে গাড়ি চলবে না, ঢাকায় মানুষ ঢুকতে পারবে বেরুতে পারবে না, বেরুতে পারবে ঢুকতে পারবে না । চারিদিকে ভয়, আতংক, অর্থনৈতিক মন্দা, কত কিছু...।
অবশেষে এলো সরকারী প্রণোদনার ঘোষণা । পোশাক শিল্পে দেওয়া প্রণোদনা পেল মালিক । শ্রমিক ঠনঠনা । নিম্ন আয়ের মানুষকে দেওয়া চাল, তেল খেয়ে ফেলল স্থানীয় মেম্বর-চেয়ারম্যান । তবু তারা কিছু পেল, কিছু ছবি তোলা হলো, ঢাকঢোল পেটানো হলো এবং সব শেষে গরীবের দু'হাজার পাঁচ'শ টাকা মিসকিন বড় লোকের পেটেও গেল ।
কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকরা কি পেল ? সব কিছু খোলা যাবে, স্কুল খোলা যাবে না । কারণ আজকের শিশুরাই আগামি দিনের ভবিষ্যৎ । স্কুল খুলে তাদের জীবন করোনার মতো ভয়ংকর রোগে বিপন্ন হতে দেওয়া যাবে না । ছাত্রছাত্রীরা কি বাসায় বসে থেকে স্কুলের বেতন দিবে ? মোটেই না ।
খুব ভাল কথা । কিন্তু যে শিক্ষক আজকের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বা সন্তানের অভিভাবকরা দায়িত্ব দিয়েছেন নামী, দামী, মগা, ছগা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে । তারা কি হাওয়া খেয়ে বাঁচবে ? তাদের মেরুদন্ড ভেংগে খামচুর হয়ে গেছে । কারণ হাজার হলেও তারা শিক্ষক । ইচ্ছে করলেই তো আর আলু, পটল ফেরি করে বিক্রি করতে পারে না ।
আমার পরিচিত একজন ব্যাচেলর শিক্ষক, যিনি একটি আবাসিক স্কুলের হোস্টেলে থেকে শিক্ষকতা করত । মাত্র লকডাউনের আগে বিয়ে করে তিন মাস গ্রামের বাড়িতে থাকার পর বউ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে । হাতে কোন টাকা-পয়সা নাই, নতুন জামাই আর কয়দিনই বা ভাল লাগে ! বেচারা সে এখন স্কুলের হোস্টেলে থাকে ।
যাইহোক, শেষ পর্যন্ত সরকার নাকি আশি হাজার শিক্ষকের জন্যে একটা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে । প্রত্যেক শিক্ষক পাঁচ হাজার করে টাকা পাবে । আমার তো মনে হয় সারা বাংলাদেশে বেসরকারী স্কুলের শিক্ষক আছে কয়েক লক্ষ । তার মানে কেউ পাবে কেউ পাবে না ।
ধরে নিলাম অতি ভাগ্যবান শিক্ষকরা পাঁচ হাজার করে টাকা পেল; কিন্তু তা দিয়ে কি হবে ? ক্ষুধার্ত বাঘের মুখে একটি ইঁদুর ছানা !
মনে হচ্ছে এবার বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকদের জীবনে প্রকৃত শিক্ষা অর্জণের সময় এসেছে । যে শিক্ষা ভবিষ্যতে তাদের ছাত্রছাত্রীদের মাঝেও শেয়ার করতে পারবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:০৫