যেতে যেতে হঠাৎ গাড়িটা ব্রেক হয়ে গেল । কারণ রাস্তা বন্ধ । সামনে আর এগুতে পারবে না । একে একে জমে গেল শত শত গাড়ি । সময় পার হয়, গাড়ি নড়ে না । অসংখ্য মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ল । এখন কি তাহলে হেঁটে যেতে হবে ? না, সেটা সম্ভব না । কারণ, নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে সাভার স্মৃতিসৌধ এলাকা । পায়ে হেঁটে কোন মানুষও যেতে পারবে না ।
বাসের ভেতর দুইটা শিশু চিৎকার করে কেঁদে উঠল । গরমে ছটফট করছে তারা্ । এখনো নাকি দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে, তারপর রাস্তা ছেড়ে দেবে । তারমানে এই দুই ঘন্টা বাসের ভেতর গরমে বসে বসে সিদ্ধ হতে হবে । পাশের সিটে বসা এক ভদ্রলোক বলল, আমরা ভাই মাইনকা চিঁপায় পড়েছি, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট আসাতেই এই অবস্থা, আর আমাদের পরম বন্ধু নরেন্দ্র দামোদর মোদি যেদিন আসবে, সেদিন তো আকাশ পথও বন্ধ হয়ে যাবে । কোন পাখিও আকাশে উড়তে পারবে না ।
বাসের ভেতরের প্রায় অর্ধেক মানুষই একে একে নিচে নেমে গেল । ভাবছি, আমার এখন কি করা উচিৎ । গেটের সামনে এক বৃদ্ধা মহিলা বিশাল একটা মিষ্টি কুমড়া কাখে নিয়ে বাসের কন্ট্রাক্টরের সাথে ঝগড়া করছে - আমাকে নবীনগরে নামিয়ে দে, নয়তো তোরে ভাড়া দেব না । বাস কন্ট্রাক্টর বলছে, আপনি বাসে গিয়ে বসেন, নামিয়ে দেব ।
একটু দূরে চিকন গোছের এক উঠতি বয়সি ছেলে পাশে চিঁপা রাস্তা দিয়ে মটরসাইকেল নিয়ে যেতে চাচ্ছিল । পুলিশ ওর পোঙ্গার উপর সপাং করে একটা বাড়ি দিল । বেচারা তাল সামলাতে না পেরে মটরসাইকেল নিয়ে হুড়মুর করে পড়ে গেল কাটা রাস্তার মাটির উপর । তারপর শুরু হলো ওকে সার্চ করা । ছেলেটা পরাজিত সৈনিকের মতো আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দু'হাত মেলে ধরে দাঁড়াল । তারপর ওর সমস্ত পকেট, জুতো, মোজা উত্তমরুপে পরীক্ষা করা হলো, কিন্তু সন্দেহজনক তেমন কিছু না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত মটরসাইকেলসহ ওকে ছেড়ে দেওয়া হলো । পরে জানলাম, ও পুলিশের সিগনাল অমান্য করেছিল ।
আমি বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি । প্রায় এক ঘন্টা ধরে গাড়ি থেমে আছে, আরো এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে । গাড়ি থেমে থাকলেও বাতাসে উড়ছে ধুলোবালি । আকাশে মেঘ নেই, বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে । ভাবছি বাস থেকে নেমে এই বিরক্তিকর ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে একটু আকাশ দেখি; কারণ এখনো অনেকটা পথ যেতে হবে আমাকে । পরক্ষণে মনে হলো, না না তার চেয়ে বরং এই এক ঘন্টা বাসের ভেতর বসে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির উৎসব পালন করি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৪৮