টিফা আর ট্রানজিট দুটি বিষয়েই সরকারের বিশেষ কিছু মন্ত্রণালয় (বাণিজ্য, সরাষ্ট্র, অর্থ, পররাষ্ট্র....) ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঢাক্ ঢাক্ গুড়্ গুড়্ করছেন। ঢাক ঢোল না পিটিয়েও দ্বি-পাক্ষিক এই চুক্তিদুটোর ব্যাপারে লাভ-লোকসানের দেশী বিদেশী মুনাফাভিত্তিক স্বার্থজনিত হিসেব ক্ষতিয়ে দেখছেন আরও কিছু মিডিয়া করপোরেশন বা ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ী মহলও (কিছু গণমাধ্যম, ব্যবসায়িক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আনিসুল হক....)। কার স্বার্থে কিসের স্বার্থে কোন্ আইনের জোড়ে এভাবে সাধারণ মানুষের আড়ালে সাধারণ মানুষের সম্পদ, রুটি-রুজি, মতামতের অধিকারগুলো নিয়ে ওরা খেলে যায় দিনের পর দিন... বছরের পর বছর....?!
টিফা হলো বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের একটা কাঠামোগত চুক্তি। অতীতেও বহু চুক্তি হয়েছে, সেইসব চুক্ত নবায়নও হয়েছে বছরের পর বছর। হয়েছে বহু পরিবর্ধন, পরিমার্জন, কাট ছাঁট। চুক্তির নামও পাল্টায়। একটা চুক্তি আর একটার লেজুর হয়, সংযোজন হয় কোন না কোন ভাবে। অতীতের সাথে বিভ্রান্তির সুযোগসমৃদ্ধ না হয়ে নতুন ক'রে এইসব চুরি ...বা চুক্তির ঘটনাগুলো সাজানোর দক্ষতা নেই বা এই সাজানোকে হয়ত ওরা পুঁজিবাদে পরিবর্তন (বিশ্ব-অর্থনৈতিক এই মন্দার সময়ে মুক্তবাজারের সংকটের কারণে বা যে কারণেই হোক) মনে ক'রে ভয় পায়।
আজকের আলোচিত টিফা অতীতের কোন স্বাক্ষরিত বা প্রস্তাবিত চুক্তির কপি বা পরিমার্জন অথবা নবায়ন। সরকারি পক্ষ বিষয়টা সংসদে না এনে ভণ্ডামীও করছেন এবং মূলতঃ জনগণকে অন্ধকারে রেখেছেন এবং বিভ্রান্তই করছেন। নির্বানের আগে আরপিও'র ৯১এ 'ই' ধারা নিয়ে বিএনপি তথা চারদলীয় জোট যেমন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে খেলেছিল তেমনই TIFA,Transit, Transhipment এসব নিয়ে সরকারি পক্ষের বিশেষ কোন কোন মহল কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে আছেন?
টিফার যা খসড়া, এখন পর্যন্ত যার সূত্র ধ'রে ঐ খসড়ার শরীর কাঠামো ও কার্যকরণগত দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচিত/সমালোচিত হয়ে এসেছে তা হলো ৩০ জানুয়ারী ২০০৫-এর খসড়া যাতে বাংলাদেশ মার্কিন দ্বিপাক্ষিক কোন স্বাক্ষর হয়নি। চুক্তির ছয় নম্বর অনুচ্ছেদে আছে
"ARTICLE SIX
The Agreement shall enter into force on the date of its signature by both Parties."
সূত্রঃ
Click This Link
উভয় পক্ষের স্বাক্ষর হবার দিন থেকেই চুক্তিটি কার্যকর হবে। তার মানে এটা নিশ্চিতভাবেই এতদিন স্বাক্ষরের অভাবে কাগজে কলমে অকার্যকর। এই চুক্তিতে গুরুত্ব পেয়েছে যে বিষয়গুলো তাতে একটা হলো পূর্বব্যঞ্জনযোগ আর একটা হলো পূর্বাভাস।
বলছিলাম যে চুক্তিতে গুরুত্ব পেয়েছে যে বিষয়গুলো তাতে একটা হলো পূর্বব্যঞ্জনযোগ আর একটা হলো পূর্বাভাস। পূর্বব্যঞ্জনযোগ মানে হলো ওই চুক্তির পিছনে চুক্তির শর্ত টানার পৃথিবীর একটা অভ্যস্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রীতি। টিফার ২০০৫এর খসড়ার ১১নং ধারানুযায়ী:
11. [Acknowledging the Treaty between the United States of America and the Peop1e’s Republic of Bangladesh Concerning the Reciprocal Encouragement and Protection of Investment signed on March 12, 1986 (“Bilateral Investment Treaty”)]
12. Noting that this Agreement is without prejudice to the rights and obligations of the Parties under the treaty cited in the preceding paragraph 11;
১৯৮৬ সালের ১২ই মার্চে আমেরিকা- বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগসম্পর্কিত একটি "Bilateral Investment Treaty" (BIT) চু্ক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হু ম এরশাদের আমলে।
স্বাক্ষর করেছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচীব খোরশেদ আলম (Khorshed Alam,
Secretary, Ministry of Industries, The People's Republic of Bangladesh) এবং মার্কিনী পক্ষে তৎকালীন মার্কিন সরকারের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্লেটন বুচার (Clayton Yeutter,
US- Trade Representative, Government of the United States of America)।
এই BIT চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে সকলেবরে।
আর পূর্বাভাস হলো মু্ক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) মার্কিনীর সাথে । হয়ত দক্ষিণ এশীয় SAFTA নিয়েও একটু নাড়াচাড়া হবে। এই BIT অথবা FTA এর কোনটাই কিন্তু TIFA'র মতো কোন কাঠামোগত চুক্তি নয় বরং বুর্জোয়াপ্রভু MFN*দের জন্য এগুলো রীতিমত আইনমাফিক নিয়মকানুন সমৃদ্ধ কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে বাণিজ্যিক স্বার্থসিদ্ধির খড়গ অস্ত্র। [*MFN= Most Favored Nation]
এই FTAভুক্ত দেশগুলো থেকে মার্কিন লাভজনক বৈদেশিক বাণিজ্য বিনিয়োগের সামপ্রতিক সমের সম্পৃক্তি ব্যাপক। ২০০৬ সাল নাগাদ শুধু রপ্তানীর সমন্বিত হিসেবেই মুনাফা প্রবৃদ্ধির বার্ষিক হার এই খাতে সর্বোচ্চ এবং তা চল্লিশ শতাংশেরও বেশী।
সূত্র:
http://www.trade.gov/fta/
ও
http://www.export.gov/fta/
একদিকে প্রায় সব FTAভুক্ত দেশগুলো এই অর্থনৈতিক রঙ্গমঞ্চে শামিল হয় কমপ্রমাইজ্ড নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে একটু লাভবান হবার অভিপ্রায়কে সামনে রেখে। অন্যদিকে MFN'র নামে করপোরেশনগুলোও জনগণ/ বিশ্ববাসীর চোখে কিছু সময়ের জন্য রঙ্গিন চশমা পরিয়ে বাড়ায় মুনাফা। চুক্তির লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে ভিন্নতা দেখা যাবে হাতেগোনা ২/৩টা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। এর প্রধান ১টি হলো ইসরাইল। মার্কিনীদের সাথে ইসরাইলের FTA (১৯৮৫) আর অর্থনৈতিকভাবে মাজাভাঙ্গা রাষ্ট্র ওমানের FTA (২০০৫) যে কোনভাবেই একরকম নয় তা কিছুটা ২০/২৫ বছরের ইতিহাসে তা টের পাওয়া যায়। মার্কিন-ইসরাইলের FTA:
Click This Link
এখানে Art 2:
1. Products of Israel shall, when imported into the customs territory of the United States, be governed by the provisions of Annex 1.
2. Products of the United States shall, when imported into Israel, be governed by the provisions of Annex 2.
এবং অ্যানেক্স ১ ও ২ এ স্পষ্ট উল্লেখ:
ANNEX I
Implementation of Duty-Free Treatment for United States Imports of Products of Israel
ANNEX II
Implementation of Duty-Free Treatment for Israeli Imports of Products of the United States of America
এ স্পষ্ট উল্লেখটি মার্কিন-ওমানের FTA:
Click This Link
বরং ওমানের এই চুক্তি আর মার্কিন-বাংলাদেশ TIFA'র ২০০৫ এর খসড়া দেখে বার বার বাংলাদেশের Next FTA'র কথা মনে হয়!
সাম্প্রতিক কালের আরও কাছাকাছি হিসেবে যদি যাই.....
ওমানের সাথে TIFA'র অবস্হা করুণ- যায় যায় করছে!
মালয়েশিয়ার চুক্তিটা BIT'র দিকে গড়িয়েও লাভ হয়নি!
মার্কিন-বাংলাদেশ TIFA'র (২০০৫ খসড়া) দেখে "প্রাইভেট সেক্টর" ও "মেধাস্বত্ত্ব অধিকার(IPR)"এর উপর বিশেষ গুরুত্বারোপের প্রভাব নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আপামর মানুষের সামগ্রিক অর্থনীতিতে কেমন হবে! এই IPR'র আড়ালেই আছে আর এক আন্তর্জাতিক অ্যাগ্রিমেন্ট TRIPS!
[ব্লগার দিনমজুরের অনুমতি সাপেক্ষে নিচের লিংকটি প্যারালাল সূত্রসহায়ক হিসেবে জুড়ে দিলাম]
Click This Link
[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৩৭