
“মহাকবি কায়কোবাদের পোস্ট অফিস পিংনা-২০৫৪ সরিষাবাড়ি, জামালপুর”
কায়কোবাদ, মহাকবি কায়কোবাদ বা মুন্সী কায়কোবাদ (১৮৫৭ - ২১ জুলাই, ১৯৫১)
বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি যাকে মহাকবিও বলা হয়। তার প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। “মীর মশাররফ, কায়কোবাদ, মোজাম্মেল হকের মধ্যে কায়কোবাদ হচ্ছেন সর্বতোভাবে একজন কবি। কাব্যের আদর্শ ও প্রেরণা তাঁর মধ্যেই লীলাময় হয়ে ওঠে। সেজন্য একথা বেশ জোরের সঙ্গে বলা যায় যে কবি কায়কোবাদই হচ্ছেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি”
তিনি বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা।
মূল কথায় আসা যাক।
দালানের হলুদ রং বিবর্ণ। পলেস্তারা খসা দেয়ালে লাল পোস্ট বক্সটি ঝুলছে। বাক্সের গায়ে সাদা রঙে লেখা—খোলার সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিট। পোস্ট কোড ২০৫৪। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা পোস্ট অফিস।
“চলেন তো ঘুরে আসি সোয়া শ বছর আগের একটি দিনে”
সোয়া শ বছর আগের একদিন। পিংনা পোস্ট অফিসের হাতলওয়ালা উঁচু চেয়ারটায় বসে আছেন ফরসামুখ সৌম্য এক সুপুরুষ। বয়স চল্লিশের বেশি। চোখের মণি উজ্জ্বল। দেখলেই বোঝা যায় পোস্টমাস্টার পরিচয়টাই তাঁর সব নয়। কলম ধরার ধরনটাও উসকে দেয় সন্দেহ। এমন মমতায় যিনি কলম ধরেন তাঁর আসলে কবি হওয়াই শোভা পায়।
“মানুষটি সত্যি সত্যি কবি। মহাকবি কায়কোবাদ। পোশাকি নাম মুহম্মদ কাজেম আল কোরেশী। এই পিংনায় বসেই তিনি লিখেছিলেন ‘মহাশ্মশান’।”

“পিংনা ছিল নদীবন্দর”
ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানায় যমুনার তীরের পিংনা ছিল নামকরা নদীবন্দর। পাটের হাটের জন্য বিখ্যাত। এটি অতীত ও বর্তমানে এ হাটটি গোপালগঞ্জ হাট নামে পরিচিত। মোগল আমল থেকেই এটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। ব্রিটিশ আমলে এখানে থানা ও মুনসেফ আদালত ছিল। পোস্ট অফিসও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্রিটিশ আমলের গোড়ার দিকে। ১৮৯৫ সালের পর কোনো একসময় কবি কায়কোবাদ পোস্টমাস্টার হয়ে আসেন পিংনায়।

বর্তমান অবস্থান: জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানার পিংনা গ্রামে, পোস্ট কোড ২০৫৪। (লেখার মূল কারণ এটি আমাদের পোস্ট অফিস)
“রাতে হারিকেন জ্বলে”
“পিংনার দিন কর্মচঞ্চল, রাত স্তব্ধ। একটি হারিকেন জ্বলে যায় মাঝরাত পর্যন্ত। একটি মোটা খাতা খোলা হারিকেনের সামনে। একটি ঝরনা কলম সাদা পাতায় দাগ রেখে যায়। পার হয় নিবাত গ্রীষ্মরাত, বৃষ্টিমুখর বর্ষা, শরৎ, শিশির ঝরা কুয়াশাভেজা শীত। একের পর এক। ১৮৯৫ থেকে ১৯০৪ সাল প্রায় ১০ বছর। লেখা হয় তিন খণ্ডে ৬০টি সর্গ, ৯০০ পৃষ্ঠা। ধনবাড়ীর নবাব নওয়াব আলীর অর্থানুকূল্যে বই হয়ে বের হয় মহাশ্মশান ( মহাকাব্য)“মমনে। সেটি ১৯০৪ সাল। তবে তারও আগে কোহিনূর পত্রিকায় ১৩০৫ বঙ্গাব্দের (১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দ) শ্রাবণ মাসে প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয় মহাশ্মশানের কয়েকটি স্বর্গ।

মহাশ্মশান কাব্য(১৯০৪) এর প্রথম পৃষ্ঠা।

পিংনা-২০৫৪, পোস্ট অফিস।
বর্তমানে পোস্ট অফিসের সেই চিরচেনা দালান আর নেই। দুই মাস আগে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, একে ডিজিটাল ডাকঘরে পরিণিত করতে। এভাবেই বাংলার ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে মহাকবি কায়কোবাদের পোস্ট অফিস পিংনা-২০৫৪ সরিষাবাড়ি, জামালপুর।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে মহাকবি কায়কোবাদের পোস্ট অফিসে নেই তার স্মৃতিচারণ। তবু রয়ে যাবে বাঙ্গালীর মনের স্মৃতি কোঠায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


